গল্ফগ্রিনের ফ্ল্যাটে উদ্ধার বৃদ্ধের দেহ

মৃতের নাম সুসময় দত্ত (৬২)। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার সুসময়বাবু গত দশ বছর ধরে গল্ফগ্রিনের ওই আবাসনে একা থাকতেন। তাঁর স্ত্রী সুস্মিতাদেবী মাঝেমধ্যে দেখা করতে আসতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৭ ০২:২৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

দুই ছেলে বিদেশে। স্ত্রী থাকেন সল্টলেকে। গল্ফগ্রিনের ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন বৃদ্ধ। ফোনে বারবার চেষ্টা করেও না পেয়ে বুধবার সকালে ছুটে আসেন স্ত্রী। ডাকাডাকিতেও তাঁর সাড়া পেলে ভাঙা হয় ফ্ল্যাটের দরজা। পরে সেখান থেকেই ওই বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

Advertisement

মৃতের নাম সুসময় দত্ত (৬২)। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার সুসময়বাবু গত দশ বছর ধরে গল্ফগ্রিনের ওই আবাসনে একা থাকতেন। তাঁর স্ত্রী সুস্মিতাদেবী মাঝেমধ্যে দেখা করতে আসতেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে স্বামীকে ফোনে না পেয়ে এ দিন সকালে গল্ফগ্রিনের আবাসনে ছুটে আসেন সুস্মিতাদেবী। আবাসনের চারতলায় স্বামীর ফ্ল্যাটের সামনে অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেলে আবাসনের সদস্যদের ডাকেন। এর পরে পড়শিরা মিলে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে দেখেন, রান্নাঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে সুসময়বাবুর দেহ। তাঁর নাক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ে ছিল মেঝেতে।

পুলিশ জানিয়েছে, সুসময়বাবু নেশাগ্রস্ত ছিলেন। হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি মানসিক অবসাদেও ভুগছিলেন তিনি। গত বছর তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আবাসনের বাসিন্দারা। বুধবার সকালে গল্ফগ্রিনের আবাসনের চারতলায় সুসময়বাবুর ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা গেল, অগোছালো অবস্থায় রয়েছে ছোট্ট ফ্ল্যাটটি। টেবিলের উপরে বেশ কিছু ওষুধ পড়ে। রান্নাঘরের মেঝেতে তখনও রক্তের দাগ।

Advertisement

ডিসি (এসএসএডি) ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়ির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন সুসময়বাবু। একা থাকায় তাঁকে ঠিক সময়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ ছিল না বলেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’’ গল্ফগ্রিনের ওই ফ্ল্যাটে গত কয়েক বছর ধরে সুসময়বাবু একা থাকায় একাকীত্ব তাঁকে গ্রাস করেছিল বলে মনে করছেন তাঁর প্রতিবেশীরা। মনোবিদেরাও বলছেন, বাড়িতে একা থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই বয়স্কদের হতাশা বেড়ে যেতে দেখা যায়। সুসময়বাবুর ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছিল বলে মনে করছেন মনোরোগের চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব। সময় বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের একাকীত্ব বেড়ে যাওয়া একটা সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেমেয়েরা ভাল চাকরি পেয়ে বিদেশে চলে যাওয়ায় বাবা-মায়েরা একা হয়ে পড়ছেন। সামাজিক বন্ধনের অভাবে যোগাযোগ কমে গিয়েছে প্রতিবেশীদের মধ্যেও। যার জেরে একাকীত্বের শিকার হচ্ছেন বেশির ভাগ প্রবীণ নাগরিকেরা।’’ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একাকীত্ব থেকেই নানা রোগের জন্ম নেয় বলে জানাচ্ছেন মনোবিদেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন