দেহের দায়িত্ব কোন থানার, টানাপড়েনে পেরোল পাঁচ ঘণ্টা

স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন ভোর চারটে নাগাদ বাসন্তী কলোনি লোহাপুলের পাশে জলের পাইপের সঙ্গে গামছার ফাঁস লাগানো অবস্থায় এক যুবকের দেহ ঝুলতে দেখা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১৮
Share:

এ ভাবেই পাঁচ ঘণ্টা পড়ে ছিল রাজুর দেহ। নিজস্ব চিত্র

এলাকা কার, তিন থানার মধ্যে সেই ঠেলাঠেলিতে পাঁচ ঘণ্টা এক ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহ নামানো হল না বলে অভিযোগ। বুধবার উল্টোডাঙা বাসন্তী কলোনির এই ঘটনা পুলিশের ভূমিকা নিয়েই গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন ভোর চারটে নাগাদ বাসন্তী কলোনি লোহাপুলের পাশে জলের পাইপের সঙ্গে গামছার ফাঁস লাগানো অবস্থায় এক যুবকের দেহ ঝুলতে দেখা যায়। এলাকার লোকজন লেক টাউন থানায় খবর দিলে সেখানকার পুলিশ আসে। তবে জায়গাটি তাদের আওতাধীন নয় জানিয়ে লেক টাউন থানার তরফে দেহ নামাতে অস্বীকার করা হয় বলে অভিযোগ। এর পরে খবর যায় উল্টোডাঙা থানায়। পাশের মানিকতলা থানা থেকেও পৌঁছয় পুলিশ। তার পরেই মৃতদেহের দায়িত্ব কারা নেবে, তা নিয়ে তিন থানার মধ্যে দীর্ঘ ক্ষণ দায় ঠেলাঠেলি চলতে থাকে বলে স্থানীয়দের একটা বড় অংশের দাবি।

অবশেষে সকাল পৌনে ন’টা নাগাদ মৃতদেহটি নামিয়ে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় উল্টোডাঙা থানার পুলিশ। জানা যায়, মৃতের নাম রাজু হাওলাদাস (৩৫)। তিনি উল্টৈাডাঙা থানা এলাকারই বাসন্তী কলোনির বাসিন্দা। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে উল্টোডাঙা থানা নিশ্চিত হয় যে, দেহের দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। এর পরে আর দেরি করেনি।’’ বেলা বাড়তে অবশ্য তিন থানা একযোগে দাবি করতে থাকে, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। মিটে গিয়েছে। তেমন বড় ব্যাপার নয়।’’ যদিও মৃতের বৃদ্ধা মা সবিতাদেবী বলেন, ‘‘ছেলে মারা গিয়েছে দেখে ঠিক থাকতে পারছিলাম না। তার মধ্যে পুলিশও ওর দেহ নামাতে চাইছিল না। এত থানায় ঘুরতে হবে ভাবিনি।’’

Advertisement

সবিতাদেবী জানান, পেশায় রাজমিস্ত্রি রাজুর সঙ্গে ১৬ বছর আগে বিয়ে হয় হাবড়ার বাসিন্দা উন্নতি হাওলাদাসের। ওই দম্পতির দুই ছেলে। এক জনের বয়স ১৫, অন্য জন পাঁচ বছরের। সম্প্রতি স্বামীর সঙ্গে অশান্তির জেরে আলাদা থাকছিলেন উন্নতি। সবিতাদেবীর দাবি, ‘‘সোমবার রাতে বৌমা ফোন করে বলে, সন্তানদের নিজের কাছে নিয়ে যেতে চায়। তা নিয়ে রাজুর সঙ্গে ওর ঝামেলা হয়। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বেরিয়ে যায় রাজু। আর ফেরেনি।’’ বৃদ্ধা জানান, দুই নাতিকে নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন তিনি। ভোরে তাঁদের বাড়ি গিয়ে এলাকার লোকজন খবর দেন, রাজুর মৃতদেহ দেখা গিয়েছে।

সবিতাদেবীর দাবি, সকাল ছ’টা নাগাদ তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেলেও পুলিশ গিয়ে দেহ নামাতে চায়নি। এর পরে তিনি স্থানীয় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুন্ডুর দ্বারস্থ হন। শান্তিরঞ্জনবাবু পুলিশের সঙ্গে কথা বলে দেহ নামানোর ব্যবস্থা করেন বলে দাবি বৃদ্ধার। কাউন্সিলর বলেন, ‘‘বৃদ্ধা একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। পুলিশকে তাই দ্রুত দেহ নামানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। পরে আর সমস্যা হয়নি।’’

বিষয়টি নিয়ে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তার বক্তব্য, জায়গাটি তাঁদের এলাকাভুক্ত নয়। প্রথমেই তা কলকাতা পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও দেহ নামাতে দেরি হল কেন? লালবাজার অবশ্য দাবি করেছে, দেরির অভিযোগ ঠিক নয়। খবর পেয়েই পুলিশ গিয়েছে। একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ক্রেন এনে দেহ নামানো হয়। তার জন্য একটু সময় লেগেছে। রাজুর স্ত্রী উন্নতির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা রুজু করেছে লেক টাউন থানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন