চোর সন্দেহে গণপ্রহার, যুবকের মৃত্যুতে ধৃত ৩

শহর কলকাতার এই ঘটনা ফের প্রমাণ করল, গণপিটুনি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে আইন তৈরি করতে বললেও তাতে লাভ হয়নি। এই ঘটনায় অভিযোগের তির পুলিশের দিকেও

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০৮
Share:

শনিবার হাসপাতালে তখনও বেঁচে মহম্মদ জাহরি। নিজস্ব চিত্র

গুদামঘরের শাটার নামিয়ে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে বেধড়ক মার! সঙ্গে চড়-থাপ্পড়! চোর সন্দেহে এ ভাবেই পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল খাস কলকাতায়। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতের নাম মহম্মদ জাহরি (৪৫)। শনিবারের এই ঘটনায় রবিবার রাতে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে বৌবাজার থানার পুলিশ। ধৃতদের আদালতে তোলা হলে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

Advertisement

শহর কলকাতার এই ঘটনা ফের প্রমাণ করল, গণপিটুনি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে আইন তৈরি করতে বললেও তাতে লাভ হয়নি। এই ঘটনায় অভিযোগের তির পুলিশের দিকেও। অভিযোগ, গণপিটুনির হাত থেকে আক্রান্তকে উদ্ধার করলেও চিকিৎসা করায়নি পুলিশ। উল্টে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যু হয় জাহরির। প্রশ্ন উঠেছে, গণপিটুনির হাত থেকে এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেও পুলিশ কেন চিকিৎসা করাল না? বৌবাজার থানার দাবি, ‘‘গণপিটুনি খাওয়া ওই ব্যক্তি মত্ত অবস্থায় ছিলেন। তাই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি যে পরে অসুস্থ হতে পারেন, তা বোঝা যায়নি।’’

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার দুপুরে, মধ্য কলকাতার পিটার লেনে। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ পেশায় ভ্যানচালক জাহরিকে তুলে নিয়ে যায় সোনু আহমেদ এবং রাজদীপ পাল নামে দুই ব্যক্তি। ১০ নম্বর পিটার লেনের একটি গুদামঘরে তাঁকে ঢুকিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের থেকে খবর পেয়ে বৌবাজার থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জাহরিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ জাহরিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। পিটার লেনের ফুটপাতে জাহরির প্রতিবেশী জামিলা খাতুন জানান, থানা থেকে ফিরে অসুস্থ বোধ করছিলেন জাহরি। বাঁ চোখ ফুলে গিয়ে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। পরের দিন সকালে অবস্থার অবনতি হলে জামিলারাই জাহরিকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই দুপুরে মৃত্যু হয় তাঁর।

Advertisement

রাতের দিকে হাসপাতালে গিয়ে জাহরির মৃতদেহ নিয়ে চলে আসেন পিটার লেনের বাসিন্দারা। পরে পুলিশ গিয়ে দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠায়। সোমবার সকালে জাহরির মৃতদেহ বিহারের মধুবনীপুরে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। রবিবারই জামিলার অভিযোগের ভিত্তিতে সোনু, রাজদীপ এবং সেই গুদামের মালিক দীপক সিংহকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

পিটার লেনের একটি ফুটপাতে থাকতেন জাহরি। তাঁর স্ত্রী সাকিলা খাতুন তিন কন্যাকে নিয়ে ওড়িশায় বাপের বাড়িতে থাকেন। জাহরি ভ্যানে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজ করতেন। মহম্মদ রুস্তম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘জাহরিকে জানানো হয়েছিল, দীপকদের গুদাম থেকে জিনিসপত্র অন্যত্র নিয়ে যেতে হবে। তিনি সেই কাজ করতেই গিয়েছিলেন। কিন্তু গুদামের কর্মীদের সন্দেহ হয়, চুরির চেষ্টা করছেন জাহরি। তাই জাহরিকে ধরে বেধড়ক মারধর করা হয়।’’ সব জেনেও কেউ বাঁচালেন না কেন? স্থানীয়দের দাবি, ওই সময়ে এলাকার বেশির ভাগ লোকই নমাজ পড়তে গিয়েছিলেন।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এক তদন্তকারী আধিকারিক। উদ্ধারের পরেও জাহরির চিকিৎসা হল না কেন? তাঁর দাবি, ‘‘থানার বাবুরা বলতে পারবেন।’’ থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বললেন, ‘‘তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। ঘটনার কিছু ক্ষণ আগে জাহরি একটি বাড়ির সিঁড়ি থেকে প়ড়ে যান বলেও জানা গিয়েছে।’’ লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা এ ব্যাপারে ফোনে বলেন, ‘‘তদন্ত সম্পূর্ণ হলে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। ময়না-তদন্তেরও রিপোর্ট আসেনি। তবে মৃতের শরীরে মারধরের চিহ্ন ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন