‘ডেঙ্গিতে মৃত্যু’, পথ-অবরোধ

ডেঙ্গিতে দু’জায়গায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে— এমন অভিযোগ তুলে ঘণ্টা চারেকের ব্যবধানে শহরে দু’জায়গায় পথ অবরোধ করলেন এলাকার মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০১
Share:

চলছে অবরোধ। বুধবার, বেলগাছিয়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

ডেঙ্গিতে দু’জায়গায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে— এমন অভিযোগ তুলে ঘণ্টা চারেকের ব্যবধানে শহরে দু’জায়গায় পথ অবরোধ করলেন এলাকার মানুষ। যার জেরে বিপর্যস্ত হতে হল সাধারণ মানুষকেই। অভিযোগগুলি মানতে চাননি মেয়র।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সাউথ সিঁথিতে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সিঁথির মোড়ে বিটি রোড অবরোধ করেন জনা পঞ্চাশেক ব্যক্তি। ব্যস্ত সময়ে আচমকা এই অবরোধে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে দু’দিকের যান চলাচল। ঘটনাস্থলে যায় সিঁথি এবং কাশীপুর থানার পুলিশ। জনতাকে বুঝিয়ে অবরোধ তুলে মিনিট পনেরোর মধ্যে যান চলাচল ফের স্বাভাবিক করা হয়।

ঠিক কী ঘটেছিল? পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, একাদশীর দিন থেকেই বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বিসিএ দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া সোহম পাল (১৯)। ১৪ অক্টোবর স্থানীয় নার্সিংহোমে ভর্তির কয়েক দিন পরে সেখানেই রিপোর্টে সোহমের ডেঙ্গি ধরা পড়ে। ওই নার্সিংহোমের চিকিৎসকেরাই ওই তরুণকে বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে রেফার করেন। বুধবার ভোরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

Advertisement

পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের বাড়ির পাশে দীর্ঘদিন বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে একটি নার্সিংহোম। সেখানে জমে আছে জল। স্থানীয় কাউন্সিলর এবং বরো চেয়ারম্যানকে বারবার জানিয়েও লাভ হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই বন্ধ নার্সিংহোমে জমা জলেই জন্ম নিচ্ছে ডেঙ্গিবাহী মশা। ছড়াচ্ছে রোগ। সোহমের বাবা অমিতাভ পাল বলেন, ‘‘নার্সিংহোমটি বন্ধ হওয়ার পর থেকে বছর কয়েক ধরে এই বিষয়টি সকলকে জানানো হয়েছে। কেউ নজর দেয়নি।’’

কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সীতা জয়সোয়ারা বলেন, ‘‘নার্সিংহোমটির বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তাই এ ক্ষেত্রে প্রশাসনকে জানানো হলেও আমাদের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।’’ এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুধু সোহম নয়, এলাকা অপরিষ্কার থাকার জেরে অনেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি কাউন্সিলর।

এ দিন সিঁথি মোড়ে বিটি রোডে পথ অবরোধ ১৫ মিনিটে উঠে গেলেও টালা থানা এলাকার ইন্দ্র বিশ্বাস রোডে পথ অবরোধ খুব তাড়াতাড়ি তুলে দিতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ জানায়, বেলগাছিয়া বস্তিতে এক বাসিন্দার মৃত্যুর অভিযোগে শ’দেড়েক লোক বিকেল চারটে থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেক ওই রাস্তা অবরোধ করেন। তা সামলাতে ছুটে আসতে হয় আশপাশের বেশ কয়েকটি থানার পুলিশকে। শেষ পর্যন্ত পাঁচটা নাগাদ অবরোধ ওঠে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় বিদ্যুৎকর্মী বেলগাছিয়া বস্তির বাসিন্দা আকবর আলি (৩৫) মঙ্গলবার রাতে অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আর জি করে ভর্তি হন। সেখান থেকে রাত দেড়টা নাগাদ তাঁকে বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। বুধবার দুপুর দুটো নাগাদ সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু আকবরই নন, গত কয়েক দিনে বেলগাছিয়া বস্তিতে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে কয়েক জনের। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের উপরেই যাবতীয় দায় চাপিয়েছেন তাঁরা। যদিও স্থানীয় কাউন্সিলর শান্তনু সেনের দাবি, ‘‘ঘনবসতি পূর্ণ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও যথাসম্ভব পরিষেবা দিতে চেষ্টা করি আমরা।’’ তাঁর দাবি, এলাকায় সাধারণ জ্বরে মৃত্যু ঘটলেও ডেঙ্গির আতঙ্ক ছড়ায়। তাই স্থানীয় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রশাসনের তরফে প্রচার চালানো হবে।

তবে শহরের দু’জায়গায় ওই দুই যুবকের ডেঙ্গিতেই মৃত্যু হয়েছে, এমন অভিযোগ মানতে চাননি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘ঘটনার খবর পেয়ে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের অফিসারদের মাধ্যমে দু’টি হাসপাতাল থেকে দু’জনের মৃত্যুর রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখানেও কোথাও ডেঙ্গির কথা উল্লেখ নেই।’’

তবে সোহম পালের পরিবারের তরফে তাঁর চিকিৎসার যে সব কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে— গত ১৪ অক্টোবর ওই তরুণকে ভর্তি করা হয়েছিল কাঁকুরগাছির একটি নার্সিংহোমে। সেখান থেকে ১৭ অক্টোবর সোহমকে ছাড়িয়ে ভর্তি করানো হয় বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কাঁকুরগাছির নার্সিংহোমের ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছিল, ওই তরুণ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর রক্তজালিকা থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল। লিভারও ঠিকঠাক কাজ করছিল না। বুধবার বাইপাস সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় সোহমের। সেখানকার ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা রয়েছে, ভাইরাল জ্বরে সেপসিস থেকে মাল্টি অর্গান ফেলিওর হয়ে মৃত্যু হয়েছে সোহমের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন