বিপজ্জনক বাড়ি

প্রোমোটারকে ‘খুঁটি’ করে সমাধানের ভাবনা

পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের সদ্য ভেঙে পড়া বাড়ি দেখে এখনও আতঙ্কিত পাশের ১৭ নম্বর ব্রজদুলাল স্ট্রিটের বাসিন্দারা। তিন বছর আগে তাঁদের বাড়িটিও বিপজ্জনক বলে নোটিস টাঙিয়ে দেয় পুরসভা। কিন্তু তার পর থেকে বাসিন্দারা প্রায় কেউই ছেড়ে যাননি।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৭
Share:

ব্রজদুলাল স্ট্রিটের সেই বাড়ি। শুক্রবার। — নিজস্ব চিত্র

পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের সদ্য ভেঙে পড়া বাড়ি দেখে এখনও আতঙ্কিত পাশের ১৭ নম্বর ব্রজদুলাল স্ট্রিটের বাসিন্দারা। তিন বছর আগে তাঁদের বাড়িটিও বিপজ্জনক বলে নোটিস টাঙিয়ে দেয় পুরসভা। কিন্তু তার পর থেকে বাসিন্দারা প্রায় কেউই ছেড়ে যাননি। পুরসভাও কোনও পদক্ষেপ করেনি। দিন চারেক আগের ভয়াবহ ঘটনা দেখে এখন ব্রজদুলাল স্ট্রিটের ওই বাড়ির মালিকেরা পুরসভাকে জানিয়েছেন তাঁদের বাড়িটিও ভেঙে দিক পুর প্রশাসন। এ নিয়ে লিখিত আবেদনও জমা পড়েছে পুরসভায়। তাঁরা চান যত দ্রুত সম্ভব বাড়িটি ভাঙার ব্যবস্থা করুক পুরসভা। তবে তাঁদের সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে কী করা হবে, তা এখনই জানাতে পারেনি পুরসভা।

Advertisement

বরং পুরভবনে বসে শুক্রবার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে পুজোর আগে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। যা কিছু হবে কালীপুজোর পরে। যদিও কী ভাবে সমাধান করা হবে শহরে ছড়িয়ে থাকা কয়েকশো বিপজ্জনক বাড়ির, তার সূত্র এ মাসের শেষে নির্ধারিত হয়ে যাবে বলে দাবি মেয়রের। তাঁর কথায়, ‘‘বিষয়টি যখন ধরেছি সমাধান করবই।’’ কিন্তু কী ভাবে, তা এ দিন খোলসা করতে চাননি তিনি।

সূত্রের খবর, পুর আইনের ১৪২ ধারার সাহায্য নিয়েই এগোনো হবে। দীর্ঘ দিন ধরে থাকা বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে সেখানে নতুন নির্মাণ করার কাজে প্রোমোটার সংস্থার সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। বাড়ির মালিক এবং ভাড়াটের স্বার্থ বজায় রেখেই নতুন এক সূত্র বের করতে আগ্রহী পুরকর্তারা। সে ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালার অনুমতি নিয়ে কোনও এক প্রোমোটারকে ওই নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হবে। যাঁর প্রধান কাজ হবে ভাড়াটেকে তার প্রাপ্য অংশের সঙ্গে মালিকের সম্পত্তির মূল্য দেওয়ার শর্ত। আর নতুন নির্মাণের জন্য পুর আইনের ১৪২ ধারায় যে বর্ধিত ছাড়
(ফ্লোর এরিয়া রেশিও বা এফএআর) মিলবে তা বিক্রি করে নিজের মুনাফা করতে পারবেন প্রোমোটারও। তবে কোনও ভাড়াটে টাকা নিয়ে সরে যেতে চাইলে তার পরিমাণ বাজার মূল্যের উপর হবে কি না সে ব্যাপারে এখনও কিছুই আলোচনা হয়নি পুর বৈঠকে। বিল্ডিং দফতরের এক আধিকারিকের মতে, শহরের বহু বিপজ্জনক বাড়িই বড় বড় রাস্তায় ভাল এলাকায়। তাই সেগুলি সারিয়ে তুলতে প্রোমোটার ডাকা অপেক্ষাকৃত সহজ পথ হতে পারে। তবে ২৮ সেপ্টেম্বর পুরসভার বৈঠকের পরই জানা যাবে কোন পথে এগোতে চায় পুর প্রশাসন।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, তুলনামূলক ভাবে উত্তর কলকাতায় বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। দিন কয়েক আগে ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের জীর্ণ বাড়ি ভেঙে দু’জনের মৃত্যুর পরে কার্যত টনক নড়েছে পুরসভার। কাছেই ৫৩ এবং ৬৪ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের হালও খুব খারাপ। বাইরে থেকে দেখলেই
বোঝা যায়, যে কোনও মুহূর্তে সেগুলি ভেঙে পড়তে পারে। কোনওটাতে আবার ভিতরে সিলিং ভেঙে পড়ে রয়েছে। বাইরের লোকের নজরে যাতে না আসে তার জন্য বাড়ির প্রধান দরজা সব সময় বন্ধ করে রাখা হয়। কিন্তু এই সব কয়টি বাড়িতেই ভাড়াটে থাকেন। অর্থাৎ বিপদের ঝুঁকি নিয়েই সেখানে বাস করছে অনেক পরিবার।

পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে এমনই এক বাড়ির মালিকের কথায়, ‘‘ইচ্ছা থাকলেও বাড়ি ভেঙে নতুন করে কাঠামো গড়ার মতো সামর্থ্য নেই।’’ তিনি বলেন, ‘‘প্রায় ৯০ বছর বয়স বাড়িটির। এখনও ২০ টাকা, ৫০ টাকায় অনেক ভাড়াটে থাকেন। পুর আইন মতে নতুন বাড়ি করলে ওই ভাড়াটেদের সরানো যাবে না।’’ সেটাও মেনে নিতে রাজি তিনি। কিন্তু তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘‘ওই একই ভাড়ায় থাকতে দিতে হলে নতুন বাড়ি করতে যাব কেন?’’

পুর প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, শহরে এমন অনেক মালিক রয়েছেন যাঁরা নতুন করে বাড়ি করার পক্ষপাতী। তা ভাড়াটের স্বার্থ বজায় রেখেই। কিন্তু পরে ওই ভাড়াটেরা যে বর্তমান বাজার দর মেনে ভাড়া দেবেন তেমন কোনও নিশ্চয়তা না মেলায় অনেকেই বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরিতে পিছিয়ে যাচ্ছেন।

ভাড়াটেরা আবার শুনিয়েছেন অন্য সমস্যার কথাও। সম্প্রতি নেতাজি সুভাষ রোডে একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙা শুরু করে পুরসভা। সেই বাড়িটিতে শ’খানেক ভাড়াটে রয়েছেন। ওই ভাড়াটেদের অভিযোগ, তাঁদের পুনর্বাসন না দিয়েই পুরসভা বাড়ি ভাঙতে থাকে। সে ক্ষেত্রে বাড়ির মালিকের পক্ষ নিয়ে পুর প্রশাসন কাজ করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। পরে বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হতেই ভাঙার কাজে স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। পুরসভার বিল্ডিং দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, পুর আইনে পরিষ্কার করে বলা আছে বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের থাকার জায়গা করে দিতে হবে।
ৎআর সেখানে নতুন নির্মাণ করতে হলে ভাড়াটের অনুমতি (নো অবজেকশন) নিতে হবে। কিন্তু বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটের মধ্যে একটা সমঝোতা করার চেষ্টা পুরসভার তরফে না হওয়ায় সমস্যা থেকেই গিয়েছে। তাই আইন যাই থাকুক না কেন, তার প্রয়োগে সমস্যা থেকেই গিয়েছে। আর সে কারণেই বছরের পর বছর বিপজ্জনক বাড়ি বিপদের ঝুঁকি নিয়েই অবস্থান করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন