চেখে দেখতে চরকিপাক

টেরিটি বাজারে শহরের পুরনো চিনে পাড়ায় বিশেষ পর্ক মেনু সাঁটিয়ে ভরবিকেলে মুখ তুলেছেন মাঝবয়সী ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট অয়ন ঘোষ। গোলপার্কে বাড়ি রওনা হতে হতেই বললেন, আবার কিন্তু এ পাড়ায় আসছি, ঘণ্টা দুয়েকে!

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৭ ০৩:১৯
Share:

টেরিটি বাজারে শহরের পুরনো চিনে পাড়ায় বিশেষ পর্ক মেনু সাঁটিয়ে ভরবিকেলে মুখ তুলেছেন মাঝবয়সী ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট অয়ন ঘোষ। গোলপার্কে বাড়ি রওনা হতে হতেই বললেন, আবার কিন্তু এ পাড়ায় আসছি, ঘণ্টা দুয়েকে! সন্ধেয় জাকারিয়া স্ট্রিটে সুতি কবাব, খিরি কবাবের জমাটি কবাব-ওয়াক আছে।

Advertisement

ব্লাড সুগার বাগে রাখতে সাত্ত্বিক আহার করেন দেবযানী বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি প্রকাশক সংস্থার ম্যানেজার ওই মহিলার সপ্তাহান্তটা সুখাদ্যের জন্যই নিবেদিত। সমমনস্ক ভোজনরসিক বন্ধুদের সঙ্গে সল্টলেক থেকে বড়বাজার— রকমারি কচুরি-অভিযানের পরই হয়তো অসমিয়া বা নাগা ঘরানার স্পেশাল ‘লাঞ্চ’ আসর। এ সুযোগ কে হাতছাড়া করে!

নামী প্লাস্টিক সার্জন মণীশমুকুল ঘোষের জীবনদর্শনও ‘উদার হয়েছি উদর মেলিয়া’! টাটকা ফল-আনাজ থেকে ভাল বিফ-পর্কের সমঝদার ডাক্তারবাবু সওয়াল করছেন, ‘‘খানিক মেপেজুপে খেলে সব খাদ্যই সয়!’’ দেশের অজানা রান্নাশৈলীর অন্ধ ভক্তটি দল পাকিয়ে আকছার রোমাঞ্চকর ভোজ-অভিযানে সামিল হন। প্রবীণ কর্পোরেট কর্তা শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বা রাজারহাটের নামী রিসর্ট কর্তা অভিজিৎ বসুও বয়সকে থোড়াই কেয়ার করেন। ঘোর রেড মিটখোরেরা মিলে ফন্দি এঁটে রিপন স্ট্রিট-আলিমুদ্দিনের অখ্যাত মোগলাই ঠেকে প্রায়ই বসে প্রভাতী অধিবেশন।

Advertisement

এ শহরে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ‘ফুড ওয়াক’ আয়োজন করে থাকে কিছু ভ্রমণ সংস্থা। এই নিখাদ নোলাবাজেরা নিজেরাই অলিগলি ঢুঁড়ে স্বাদ-উৎকর্ষের খোঁজে মরিয়া। সোশ্যাল মিডিয়াও তাঁদের জোটবদ্ধ করেছে। ফেসবুকে কলকাতার পর্ক-অ্যাডিক্ট গ্রুপের কাপ্তেন অয়ন কাজের ফাঁকে নাগাল্যান্ড হাউজের ক্যান্টিন কিংবা পাঁচতারা রেস্তোরাঁয় ছোটাছুটি করছেন। মেনু বাছাই বা ছবি পোস্ট করে গ্রুপের উৎসাহীদের খবরাখবর দেওয়ায় অক্লান্ত তিনি। শাকাহারীদের দল, গুড ভেজিটেরিয়ান ফুড অব ক্যালকাটা-ও দল বেঁধে তেলেভাজা বা রসগোল্লা-ওয়াক-এ ব্যস্ত। ভীম নাগে ‘বাংলার বাঘ’ আশু মুখুজ্জে-মতিলাল নেহরুর প্রিয় সন্দেশ ভোগ থেকে বড়বাজারের গুজরাতি বাসায় সর্দার পটেলের প্রিয় কাথিয়াওয়াড়ি মেনু— সবই সাপ্টে ভোগ করা চাই তাঁদের।

বাঙালির আড্ডা, বন্ধুতার পরম্পরায় ঐতিহাসিক ভাবেই ‘গদ্যজাতীয় ভোজ্যে’র গুরুতর ভূমিকা রয়েছে। সুকুমার রায়ের আড্ডার দল মণ্ডা ক্লাব-এর নামটাই তার সাক্ষী। রবীন্দ্রনাথের আমলের ‘খামখেয়ালি সভা’ জুড়েও মৃণালিনী দেবীর মানকচুর জিলিপি থেকে জসিমুদ্দিনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে রাঁধা অবন ঠাকুরের ‘জসি কবাবে’র সুঘ্রাণ।

হোয়াট্‌সঅ্যাপ বা ফেসবুকে এখন অষ্টপ্রহরই জমজমাট একেলে ‘মণ্ডা ক্লাব’গুলোর মজলিস। সুইসোতেল থেকে সাবেক চিনে ইটিং হাউজ ‘তুং নাম’ সানন্দে রসিকদের জন্য স্পেশাল পদ রাঁধছে। ক্যালকাটা ইনস্টাগ্রামাররা আবার ছবি তোলার ফাঁকে স্বাদ-চর্চায় মত্ত। ‘ক্যালকাটা ফুডিস ক্লাব’ বা ‘হইচই’-রাও দিন-দিন দলে ভারী।

মোবাইল অ্যাপ বা ফুড ব্লগের যুগে অন্য মাত্রা পাচ্ছে স্বাদসন্ধানীদের অভিযান। পূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় নানা কিসিমের ফুড ওয়াক-ও করান। ব্লগও লেখেন। তাঁর দাবি, ফুড ওয়াক করাই বলে আমার ব্লগেরও ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement