Fire Brigade

বিপদ এড়াতে প্রশিক্ষিত শূন্য পদে নিয়োগের দাবি দমকলে

সেই সময়ে নিয়মিত নানা ধরনের মহড়া, প্যারেড, গাড়ি পরীক্ষা-সহ পাম্প এবং হোস-ড্রিল হত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২১ ০৬:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিপদ যেন ঢুকে পড়েছে ঘরের মধ্যেই।

Advertisement

গত সোমবার নিউ কয়লাঘাটে রেল ভবনের ১৪ তলায় আগুন লেগেছিল। আগুন নেভানোর কাজে ওই তলায় ওঠার জন্য লিফটের ব্যবহার করেছিলেন দমকলকর্মীরা। কিন্তু লিফটের দরজা খুলতেই আগুনে তাঁরা ঝলসে যান। ঘটনার পরে চার দমকলকর্মীর মৃত্যুতে সহানুভূতি তৈরি হলেও দমকল বিভাগের কর্মদক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে দমকলকর্মীদের ভিতরেই।

বুধবার দমকলের কর্মীদেরই একাংশ জানিয়েছেন, প্রশিক্ষিত এবং স্থায়ী কর্মীর পদে নিয়োগ হচ্ছে না। অথচ নতুন নতুন দমকলকেন্দ্র আর আগুন নেভানোর গাড়ি কেনা হচ্ছে। কিন্তু আগুন নেভানোর কাজ করানো হচ্ছে অগজ়িলিয়ারি ফায়ার পার্সোনেল (এএফপি)-দের দিয়ে। অভিযোগ, উপযুক্ত দক্ষতার অভাবে এই মুহূ্র্তে বেহাল দশায় রয়েছে দমকল বিভাগ।

Advertisement

ক্ষুব্ধ দমকলকর্মীরাই জানাচ্ছেন, গত দশ বছরে রাজ্যে নতুন করে ৫০টি দমকলকেন্দ্র তৈরি হয়েছে, কিন্তু ‘প্রশিক্ষিত’ বা স্থায়ী কর্মীর নিয়োগ হয়নি। বরং প্রশিক্ষণ ছাড়াই প্রায় ৩৭০০ জন দমকল সহায়ক বা অগজ়িলিয়ারি ফায়ার পার্সোনেল (এএফপি) নিয়োগ করা হয়েছে।

দমকলের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘গত ১০ বছরে দমকল কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি নতুন গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে। অবিলম্বে শূন্য পদ পূরণ না হলে আগুন নেভাতে গিয়ে আরও বিপদ হতে পারে।’’

দমকল দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে ১৯৩৯ সালে দমকল কাজ শুরু করে। সেই সময়ে নিয়মিত নানা ধরনের মহড়া, প্যারেড, গাড়ি পরীক্ষা-সহ পাম্প এবং হোস-ড্রিল হত। অভিযোগ, আটের দশকে ওই ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ফের নিয়মিত মহড়া চালু হলেও পরে কর্মী সংগঠনের চাপে সে সব বন্ধ হয়ে যায়। আর চালু হয়নি। সোমবার রাতে নিউ কয়লাঘাট ভবনে রেলের অফিসে আগুনে পুড়ে দমকলকর্মীদের মৃত্যুর ঘটনার পরে দফতরের অনেকেরই অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে দমকলের প্রচুর পদ ফাঁকা থাকায় আগুন নেভাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মীদের।

এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘স্থায়ী কর্মী নিয়োগ হলে প্রাথমিক ভাবে তাঁদের ছ’মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু এএফপি-দের দেওয়া হয় মাত্র এক মাসের প্রশিক্ষণ। ফলে যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় বড়সড় আগুন নেভাতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।’’

দমকল সূত্রের খবর, রাজ্যে ১৫২টি দমকলকেন্দ্রে আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার অপারেটর (এফও) থাকার কথা ৫৫০০ জন। সেই সংখ্যা এখন মাত্র ৯০০। স্টেশন অফিসার, সাব অফিসার, লিডার, চালক সমস্ত পদেই অনেক সংখ্যায় খালি পড়ে রয়েছে। সাব অফিসারের জন্য ৫৪০টি পদের অনুমোদন থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১২০ জন। আবার ১৪০০-র বদলে লিডার রয়েছেন মাত্র ৩১০ জন। চালক বা এফইওডির শূন্যপদের সংখ্যা ১৪০০। ওই পদে এখন কর্মী রয়েছেন ৫০০ জন। এ ছাড়াও দমকলের ছ’টি ডেপুটি ডিরেক্টরের মধ্যে চারটি পদই ফাঁকা। তিন জন ডিরেক্টর থাকার কথা থাকলেও নেই এক জনও। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং, দুই দিনাজপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ কলকাতায় এখন ডিভিশনাল অফিসার (ডিও) পদ ফাঁকা রয়েছে। অন্য ডিও-রা এই জেলাগুলির কাজ চালাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে খালি আছে বেহালায় ফায়ার ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের চিফ ইনস্ট্রাক্টরের পদটিও। দমকলে স্থায়ী কর্মীদের মধ্যে সত্তর শতাংশের বয়সও ষাট ছুঁইছুঁই।

দফতরের কর্তাদের অবশ্য দাবি, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ১৫০০ জন স্থায়ী কর্মীর নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ শেষের মুখে। ভোটের পরেই সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন