শঙ্কায় মোড়া মেলা, কার্ডেই চলছে সামান্য বিকিকিনি

নোট বাতিলে ধাক্কা খাচ্ছে একের পর এক মেলাও। ইতিমধ্যেই হস্তশিল্প মেলার ব্যবসা টিমটিম করছে মিলনমেলা প্রাঙ্গণে। যেটুকু বিকিকিনি, তা মূলত কার্ডেই। আর, শুক্রবার সল্টলেকে সূচনা হওয়া সবলা মেলায় যোগ দিতে আসা মহিলাদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ— গত বারের মতো ব্যবসা হবে তো?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২০
Share:

হস্তশিল্প মেলায় কার্ড বুথ। — নিজস্ব চিত্র

নোট বাতিলে ধাক্কা খাচ্ছে একের পর এক মেলাও। ইতিমধ্যেই হস্তশিল্প মেলার ব্যবসা টিমটিম করছে মিলনমেলা প্রাঙ্গণে। যেটুকু বিকিকিনি, তা মূলত কার্ডেই। আর, শুক্রবার সল্টলেকে সূচনা হওয়া সবলা মেলায় যোগ দিতে আসা মহিলাদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ— গত বারের মতো ব্যবসা হবে তো?

Advertisement

জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের তৈরি সামগ্রী নিয়ে আড়াইশোর বেশি স্টল হয়েছে সবলা মেলায়। এ দিন মেলার সূচনা করেন রাজ্যের স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। দফতরের প্রধানসচিব আরিজ আফতাব জানান, গত বছর প্রায় তিন কোটি টাকা বেচাকেনা হয়েছিল এই মেলায়। এ বার পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁরাও।

মেলায় উপস্থিত তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাত্য বসুও মনে করেন, বিক্রেতাদের আশঙ্কা অমূলক নয়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নোট বাতিলের জেরে ব্যবসা মন্দা। মানুষের হাতে নগদ টাকা না থাকলে তাঁরা এ সব কিনবেনই বা কী করে?’’ যদিও সাধনবাবু মনে করেন, সবলা মেলার পণ্যসামগ্রীর চাহিদা রয়েছে কলকাতায়। তাই বেচাকেনা হবে।

Advertisement

লোকসানের ছবিটা প্রকট হচ্ছে হস্তশিল্প মেলায় ঘুরলেই। পিংলার গ্রাম থেকে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব ফুলচাঁদ চিত্রকর। আগে কখনও ব্যাঙ্কে যাওয়ার প্রয়োজনই পড়েনি। জানালেন, বিক্রি হচ্ছে না বললেই চলে। যাঁরা এসেছেন, দু’তিনশো টাকার জিনিস দরদাম করে দু’হাজারের নোট বার করেছেন। ফিরিয়ে দিয়েছেন ফুলচাঁদ। বললেন, ‘‘মাসিক রোজগার তো দু’হাজারই ছোঁয় না আমাদের!’’

পরিস্থিতির মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করছেন, ‘‘যে সব ব্যবসায়ীরা কার্ডে দাম নিতে চান, তাঁরা নিজের অ্যাকাউন্টের ‘ক্যানসেলড চেক’ জমা দিয়ে যান আমাদের বুথগুলিতে।’’ মেলার বিভিন্ন প্রান্তে পাঁচটি কার্ড-বুথ। ক্রেতা কার্ডের মাধ্যমে দাম মেটাতে চাইলে তাঁকে বুথে গিয়ে কার্ড সোয়াইপ করিয়ে টাকা দিতে হবে। তা যাবে বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে। অ্যাকাউন্টের সবিস্তার তথ্য ও নথি আগে থেকেই জমা রাখতে হবে সেখানে। তবে সমস্যা হচ্ছে এতেও। জয়নগর থেকে পিতলের মূর্তি নিয়ে আসা সারওয়ার গাজি জানালেন, বেশির ভাগ ক্রেতাই কার্ডে দাম মেটাতে চাইছেন। ‘‘ব্যবসা তো এমনিতেই প্রায় চলছে না। তার উপরে ক্রেতাদের সঙ্গে নিয়ে কার্ড-বুথে যাচ্ছি। দীর্ঘ লাইন দাঁড়িয়ে দোকানে ব্যবসা মার খাচ্ছে।’’

শাড়ি-কুর্তি-ওড়নার পসরা সাজিয়েছেন হুগলির বেবি রায়। স্টলে রয়েছে কার্ডে দাম নেওয়ার যন্ত্রও। জানালেন, বেশির ভাগ কেনাকাটাই কার্ডে হচ্ছে। তবে পরিমাণ খুবই কম। বললেন, ‘‘আগের বছর পর্যন্ত সপ্তাহে চল্লিশ হাজার টাকার জিনিস বিক্রি করেছি। এ বার তো কুড়ি হাজারও পেরোচ্ছে না।’’

অনেক ব্যবসায়ীই জানালেন, পুরনো পাঁচশো-হাজারের নোট নিচ্ছেন তাঁরা। বেকবাগানের ব্যাগ শিল্পী শেখ কুতুবুদ্দিন বা ঠাকুরনগরের ছবি শিল্পী মহাদেব দাসরা বলছেন, ‘‘কত খদ্দের ফেরাব? কত বারই বা দোকান ছেড়ে কার্ড-বুথে যাব? তার চেয়ে ১১ তারিখ মেলা শেষের পরে ব্যাঙ্কে লাইন দেব পুরনো নোট জমা দেওয়ার জন্য।’’ পুরনো নোট নিচ্ছেন বনগাঁর বন্যা রায়ও। সঙ্গে মনে পড়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের টিমটিম করা দুটো মাত্র কাউন্টারের কথা।

বরাহনগরের টিঙ্কু দাশগুপ্ত গয়না বিক্রির অনেকটা দাম নিচ্ছেন নেট ব্যাঙ্কিংয়ে। তবে সামগ্রিক ভাবে বিক্রি খুবই কম। গোদের উপর বিষফোঁড়া ক্রেতাদের হাতে দু’হাজারি নোট। ‘‘কত খুচরো দেব, কত খদ্দেরই বা ফেরাব। সকলকেই অনুরোধ করছি নেট ব্যাঙ্কিংয়ে দাম দিতে। বারবার কার্ড বুথে লাইন দেওয়া মুশকিল,’’ বললেন টিঙ্কু। এর মধ্যেই উপায় খুঁজেছেন কৃষ্ণনগরের সমীর পাল। মাটির প্রতিকৃতির পসরা বেচতে চালু করেছেন পেটিএম ব্যবস্থা। বলছেন, ‘‘এখনকার সব ছেলেমেয়েই তো এ সব করে। তাই আমিও শিখলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন