ডেঙ্গি-সহ নানা জ্বরে কাবু হয়েছেন শহরবাসী। তার সঙ্গে বিপদ বা়ড়াচ্ছে রক্তের সঙ্কট।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। চিকিৎসার জন্য প্লেটলেটের প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে চাহিদার অনুপাতে রক্তের জোগান নেই। যার জেরে সমস্যায় পড়ছেন রোগী ও পরিজনেরা, এমনই অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন মহলে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার অন্যান্য সপ্তাহান্তের তুলনায় কম শিবির হয়েছে। যার জেরে প্লেটলেট সংগ্রহ কমেছে। সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের সাড়ে চারশো ইউনিট প্লেটলেট সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এ দিন ন’টি রক্তদান শিবির থেকে মাত্র ২৮৯ ইউনিট প্লেটলেট সংগ্রহ হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য সপ্তাহন্তে প্রায় ১৩টি রক্তদান শিবির হয়। সরকারি হাসপাতালগুলির ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্ত সংগ্রহ আরও কম। এনআরএস হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রবিবার মাত্র একটি রক্তদান শিবির হয়েছে, সংগৃহীত রক্ত থেকে ৩৩ ইউনিট প্লেটলেট পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু অন্যান্য রবিবার কমপক্ষে পাঁচটি রক্তদান শিবির হয়ে থাকে। ফি দিন ওই হাসপাতালে আড়াইশো প্লেটলেটের চাহিদা থাকে। ডেঙ্গির মরসুমে সেই চাহিদা আরও বেড়েছে। মাত্র ৩৩ ইউনিট প্লেটলেটে সেই চাহিদা মিটবে না বলেই মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ দিন দু’টি রক্তদান শিবির থেকে ৮৩ ইউনিট প্লেটলেট সংগ্রহ করা হয়েছে এবং মেডিক্যাল কলেজ চারটি রক্তদান শিবির থেকে ১৩৫ ইউনিট প্লেটলেট সংগ্রহ করেছে। শনিবার আরজিকর হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কের সংগ্রহ করা রক্ত থেকে ৮০ ইউনিট প্লেটলেট পাওয়া গিয়েছে। এসএসকেএম হাসপাতালে অন্যান্য সপ্তাহে রবিবার কমপক্ষে আটটি রক্তদান শিবির আয়োজিত হলেও এ দিন মাত্র দু’টি শিবির হয়েছিল। সেখান থেকে মোট ৭৪ ইউনিট প্লেটলেট পাওয়া গিয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ জানাচ্ছে, বিভিন্ন রক্তের রোগের চিকিৎসায় বছরভর প্লেটলেটের চাহিদা থাকে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে। ডেঙ্গির মরসুমে শহরজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই প্লেটলেটের চাহিদা আরও বেড়েছে। সেই অনুপাতে রক্তদান শিবির আয়োজিত না হলে এবং পর্যাপ্ত ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করতে না পারলে সমস্যা আরও বাড়বে। কালীপুজো উপলক্ষে বহু পুজো কমিটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে। ডেঙ্গির মরসুমে প্লেটলেটের আকাল মেটাতে ক্লাবগুলি জনসচেতনতায় এগিয়ে আসে। এ বারও সেই কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু সপ্তাহের মাঝখানে হঠাৎ সেই প্রচার বন্ধ হয়ে যায় বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনের শীর্ষকর্তারা প্রচার করছেন, রক্তের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি এতটা মসৃণ নয়। এখন রোগীর পরিজনেদের রক্তের সঙ্কটের কথা জানালে তাঁরা বিশ্বাস করতে চাইছেন না। আমরা সমস্যায় পড়েছি।’’ একাধিক সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা জানাচ্ছেন, রক্তের জোগান না থাকায় রোগীর পরিজনেদের রক্তদাতা নিয়ে আসার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। যেমন শনিবার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে রোগীর পরিজনেদের থেকে ৬৩ ইউনিট, এনআরএসে ৪৩ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখান থেকে ৩৭ ইউনিট প্লেটলেট পাওয়া গিয়েছে। যদিও এ দিন স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষকর্তা দাবি করেন, ‘‘রক্তের কোনও সমস্যা নেই। প্লেটলেটও পর্যাপ্ত রয়েছে। কোনও রোগী যদি প্রয়োজনে রক্ত না পান, তা হলে তাঁরা নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করুন। প্রশাসন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেবে।’’