পুর-হুঁশিয়ারি: ডেঙ্গির উৎস মণ্ডপের বাঁশও

পুজোর উদ্যোক্তা সাবধান! কারণ, এখন বাঁশের খোলেই বংশবৃদ্ধি করছে ডেঙ্গিবাহী মশা। অন্তত তেমনটাই দেখা গিয়েছে গত কয়েকটি পুর-অভিযানে। আর পুজোয় মণ্ডপ বা চত্বরে তার অভাব নেই। পড়ে থাকা ভাঁড়, প্লাস্টিকের কাপে বংশবৃদ্ধি করতেই এত দিন অভ্যস্ত ছিল ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশা এডিস ইজিপ্টাই।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৯
Share:

চলছে লার্ভার খোঁজ।— নিজস্ব চিত্র

পুজোর উদ্যোক্তা সাবধান!

Advertisement

কারণ, এখন বাঁশের খোলেই বংশবৃদ্ধি করছে ডেঙ্গিবাহী মশা। অন্তত তেমনটাই দেখা গিয়েছে গত কয়েকটি পুর-অভিযানে। আর পুজোয় মণ্ডপ বা চত্বরে তার অভাব নেই।

পড়ে থাকা ভাঁড়, প্লাস্টিকের কাপে বংশবৃদ্ধি করতেই এত দিন অভ্যস্ত ছিল ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশা এডিস ইজিপ্টাই। তাই গাছের কোটরের জমা জলে তাদের লার্ভার খোঁজ করত না কেউ। মাটিতে পড়ে থাকা ভাঁড়, প্লাস্টিকের কাপ কিংবা ঘরে রাখা টবের জলে ডিম পাড়াটা ইদানীং সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ, মানুষ যেমন কিছুটা সচেতন হয়েছেন, তেমনই কলকাতা পুরসভা বেছে বেছে কীটনাশক ছড়াচ্ছে ওই জমা জলের পাত্রে। জমা জল দেখলেই তা ফেলে দিচ্ছে। ছাদের জমা জলে এডিস ইজিপ্টাইয়ের খোঁজ মেলার পরে পুরকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাদেও হানা দিচ্ছেন।

Advertisement

এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বংশ বাঁচাতে এখন বাঁশের খোলে ডিম পাড়ছে এডিস ইজিপ্টাই। রাজভবনের বাঁশের খোলে সম্প্রতি তার লার্ভা খুঁজে পেয়েছেন কলকাতা পুরসভার পতঙ্গবিদেরা। এর পর থেকে ছাদে বা বাড়ি তৈরির সময়ে তৈরি করা ভারার বাঁশের খোলের দিকে নজর পড়েছে অভিযানকারীদের। কলকাতা পুরসভার এন্টেমোলজির অভিযানকারীরা জানাচ্ছেন, ‘‘আমরা যেখানেই বাঁশ দেখছি, টর্চ নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছি। বাঁশের খোলে জমা জলে টর্চের অলো ফেললেই দেখছি কিলবিল করছে এডিস মশার লার্ভা।’’

পুরসভার এক পতঙ্গবিদ জানাচ্ছেন, ‘‘নিশ্চিন্তে বংশবিস্তারের জন্য এমন জায়গা এডিস ইজিপ্টাই খুঁজে পেয়েছে, যা আমাদের জানা ছিল না। ওই মশার বংশ বিস্তারের ছক বদলে আমাদের চিন্তাও বেড়েছে। অন্তত মাস দুয়েক ধরে কলকাতার বিভিন্ন মণ্ডপে বাঁশ বাঁধা রয়েছে। বৃষ্টির জল সেই সব বাঁশের খোলে জমলেই যে এডিস মশা ডিম পাড়বে, তা আমাদের সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। আর চোখের আড়ালে ডিম থেকে ফুটবে লার্ভা। তার পরে পূর্ণাঙ্গ এডিস মশারা ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে পড়বে শহরে।’’ পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘পুরসভার অভিযানে ক্রমাগত লার্ভা ধ্বংস হওয়ায় সতর্ক এডিস মশাও। বিপদ বুঝে ওরাও ডিম পাড়ার নতুন, নিরাপদ জায়গা খুঁজে নিয়েছে।’’

সোমবার মশা-দমন অভিযানে বাঁশের খোলে এডিস মশার আরও কিছু আঁতুড়ঘর খুঁজে পেয়ে উদ্বেগ বেড়েছে পুরসভার। এ দিন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে অভিযানে গিয়ে বাঁশের খোলে অসংখ্য এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভার হদিস মিলেছে বলে দাবি পুরসভার পতঙ্গবিদদের। আর তাতেই মুখ শুকিয়েছে পুরকর্তাদের। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষের মন্তব্য, ‘‘এখন শহর জুড়ে অসংখ্য মণ্ডপ। তাদের শতকরা ৯৯ ভাগেরই মূল উপকরণ বাঁশ। মণ্ডপের বাঁশের খোলে জল জমে রয়েছে কি না, তা এখন দেখবে কে?’’ অগত্যা জরুরি বৈঠকে বসে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে— পুজোর কর্মকর্তা, মিস্ত্রি এবং দর্শনার্থীদের স্বার্থে শহরের প্রতিটি পুজোর উদ্যোক্তাকে ডেঙ্গির মশার নতুন আচরণের বিষয়ে সতর্ক করবে পুরসভা।

অতীনবাবুর কথায়, ‘‘লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে একাধিক জায়গায় মাটিতে পোঁতা বাঁশের উপরের খোলে এডিসের লার্ভা মিলেছে। বাঁশের উপরে মশার নতুন ঠিকানা হলে তো পুজোয় এডিসের উপদ্রব আরও বাড়বে।’’ পুজো উদ্যোক্তাদের নিয়ে চলতি সপ্তাহেই একটি বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘প্যান্ডেলে ব্যবহৃত বাঁশের খোলের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে পুজো কমিটিগুলিকে অনুরোধ জানাব।সেই লিখিত নির্দেশিকা প্রত্যেক পুজো উদ্যোক্তাকে পাঠানো হবে। পুজোর মুখে ডেঙ্গি সংক্রমণে রাশ আনতে এটাই আমাদের অন্যতম দাওয়াই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন