Haridevpur Case

রেজিস্ট্রেশন বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু জোকার দৃষ্টিহীনদের হোমের

বিশেষ ভাবে সক্ষমদের অধিকার রক্ষা কমিশনের তরফেও হোমটির কাজকর্মের অধিকার তথা রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:৪২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

আপাতত তিনটি নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এগোচ্ছে হরিদেবপুর থানা এলাকার জোকায় দৃষ্টিহীনদের হোম তথা স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশি মামলা। কিন্তু হোমটির অসহায় আবাসিকদের মধ্যে আরও বেশ কয়েক জনের যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। লালবাজারের এক কর্তা শুক্রবার বলেন, “৩৮ জন মেয়ে এবং ৩৯ জন ছেলেকে সবে ওই হোম থেকে আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে এনেছি। এখন তাদের মানসিক শুশ্রূষা সব চেয়ে বেশি দরকার। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে অনেকের সঙ্গে কথা বলা হবে। সেই সঙ্গে অন্য আবাসিকদের মধ্যে কারও উপরেও যৌন নির্যাতন হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে আদালতে জানিয়ে তাঁদের মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষাও করানো হতে পারে।” পকসো আইনে ধৃত হোমের প্রতিষ্ঠাতা-মালিক জীবেশ দত্ত, রাঁধুনি বাবলু কুণ্ডু ও অধ্যক্ষা কাবেরী বসুকে এ দিনই আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

Advertisement

সরকারি আইনজীবী মাধবী ঘোষ বলেন, ‘‘এই ঘটনায় বাবলু ও জীবেশ সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। কাবেরীর কাছে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিতারা অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু, তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি। পরোক্ষ ভাবে ওই নির্যাতনকে তিনি প্রশ্রয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আদালতের কাছে নির্যাতিতাদের গোপন জবানবন্দির আবেদন করা হয়েছিল। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন। ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।’’ এ দিনই হরিদেবপুর থানার হাত থেকে ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। লালবাজারের স্পেশ্যাল জুভেনাইল পুলিশ ইউনিট ঘটনার তদন্ত করছে।

এর পাশাপাশি, বিশেষ ভাবে সক্ষমদের অধিকার রক্ষা কমিশনের তরফেও হোমটির কাজকর্মের অধিকার তথা রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হোমের মোট ৭৭ জন আবাসিককে সরাতে শুক্রবার ভোর সাড়ে চারটে বেজে যায়। শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় বলেন, “ছোটরা এত বড় ঘটনায় মারাত্মক মানসিক আঘাত পেয়েছে। যাঁদের উপরে যৌন হেনস্থা হয়েছে, তাঁরা ছাড়া বাকিরাও ঘটনাপ্রবাহে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। ছোটদের মনের ক্ষত সারানোর কাউন্সেলিং কতটা কী হচ্ছে, সে দিকে আমরা নজর রাখব।” সমাজকল্যাণ দফতরের শিশুকল্যাণ সমিতি বা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কলকাতা জেলার চেয়ারপার্সন মহুয়া শূর রায় বলেন, “মেয়েদের সবাইকে এক জায়গায় রাখা গেলেও ছেলেদের চারটি হোমে ভাগ করে রাখতে হয়েছে। একটি মেয়ে বাড়ি থেকে ওই স্কুলে যেত। ঘটনার সময়ে সে ওখানে আটকে পড়েছিল। তাকে আজ তার মা-বাবার কাছে পাঠানো হয়েছে। বাকি আবাসিকদের পরিজনদের খবর দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ ঝাড়খণ্ডেরও আছে। ছোটরা বাড়ি ফিরে যাবে, না কি শিশুকল্যাণ সমিতির বিভিন্ন হোমে রেখে তাদের স্কুলে পড়ানো হবে, তা পরে ঠিক হবে।”

Advertisement

গত মার্চে ওই হোমে বাবলুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। তখন হোম কর্তৃপক্ষ সেটি ধামাচাপা দেন বলে অভিযোগ। সব দিকই তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। এ দিন আদালত চত্বরে অভিযুক্তেরা দায় ঠেলাঠেলি করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ৬৬ বছরের জীবেশ বলেন, ‘‘আমি নির্দোষ। কিছু জানি না। যা করেছে, সব রাঁধুনি।’’ রাঁধুনি বাবলু বলেন, ‘‘আমি কিছু করিনি। এই ঘটনায় অন্যেরা জড়িত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন