বাহারি: এমন সন্দেকেই মজেছে শহর।
পেটমোটা চিকেন আ লা কিয়েভের বক্ষ বিদীর্ণ হতেই ভাবনাটা খেলে যায় মাথায়। প্লেটে মাখন-স্রোতের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, এ ভাবেই নলেনগুড়ের ফল্গু উথলে উঠতে পারে না!
এ বার সে আশা খানিক পূর্ণ হচ্ছে সাবেক সন্দেশ স্রষ্টার। সিমলেপাড়ার নকুড় নন্দীর উত্তরপুরুষ পার্থ নন্দী ওরফে রাজার আ লা কিয়েভের আদলে সন্দেশের ‘কেক ভাবনা’ সাকার হয়েছে। তিনি বলছেন, ‘‘এটাই বছরশেষের নতুন আইটেম। কেকের আকারের এক কেজির সন্দেশে বেশ অনেকটাই নলেনগুড় ভরার জায়গা মিলছে।’’
ওড়িশার ‘ছেনাপোড়া’ বা কলকাতার অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ঘরে ছানার কেক-ও বহু দিন ধরেই ভাবাচ্ছে বলরাম মল্লিকের তরুণ কর্ণধার সুদীপ মল্লিককে। ছানা বেক করে সাহেবি ডেজার্টের আদলে ‘প্যানাকোটা’, ‘অ্যামব্রোজ়িয়া’র মতো মিষ্টিতে হাত পাকিয়েছিলেন তিনি। সুদীপের দাবি, ‘‘কিসমিস-কাজু তো আছেই! বড়দিনের কেকের চিরকেলে উপকরণ, প্লাম, অরেঞ্জপিল, টুটিফ্রুটি, জিঞ্জার ক্যান্ডিও সন্দেশে মেশালে খেতে দিব্যি লাগছে।’’ সাবেক রীতির কেশর, রোজ়ক্রিম, চকলেট বা দেলখোশ সন্দেশকে মস্ত কেকের আদলে উপস্থাপনাও বাঙালির বর্ষশেষকে মাধুর্যে ভরিয়ে তুলেছে।
এক যুগেরও আগে এমন সন্দেশের কেক বন্ধুপ্রতিম রসিকজনের জন্য শখ করে বানাতেন নকুড়ের মেজকত্তা স্বর্গীয় প্রশান্ত নন্দী। সাহিত্যিক শঙ্কর তাতে মুগ্ধ হয়ে নামকরণ করেন, সন্দেক। ক্রমশ বাংলার ভোট উৎসব থেকে বড়সড় আনন্দের উদ্যাপনেও যা অঙ্গাঙ্গী হয়ে উঠেছে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের আইপিএল জয় উপলক্ষেও ইডেনের সম্বর্ধনায় এমন ‘সন্দেক’ নিবেদন করেছিল নকুড় ও বলরাম। কন্যাশ্রী দিবসের জন্য ‘সন্দেক’ সৃষ্টি আবার রিষড়ার ফেলু ময়রার প্রতি বছরের দায়িত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবিও সেই কেকের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পরে দেখা গিয়েছে, ডিমবিশিষ্ট কেক মুখে তুলতে অপারগ অবাংলাভাষী ব্যবসায়ীকুল কলকাতার সন্দেকের গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠেছে। টায়ার ব্যবসায়ী একটি পরিবারের বিয়েতে ২০ ফুট লম্বা ৪০০ কেজির সন্দেশের কেক পৌঁছে দিতে বলরামের তিনটি ট্রাক লেগেছিল।
পশ্চিমী শৈলীতে কেক বেক করার কসরত অনেক দিনই রপ্ত করার চেষ্টা করছে বাঙালি ময়রা। তাতেও মাত্রা যোগ হয়েছে সন্দেকে। একটু বড়সড় টার্টের আদলে সন্দেশের গায়ে ক্যারামেলাইজ়ড বা চিনি পোড়া রমণীয় তিক্ততা। কিংবা কেকের আইসিং বা গোলাপফুলের জায়গায় বসানো হয়েছে বেক্ড পান্তুয়ার মুকুট। বাঞ্ছারামের তরুণ কর্তা
শুভজিৎ ঘোষ বলছিলেন, তাঁদের বেক্ড সন্দেশ কেক বা পান্তুয়া-মিহিদানা কেকের স্লাইসও দোকানে দোকানে বিক্রি হচ্ছে। কারও জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকীতে অর্ডারের সময়ে ছবিটবি দিলেও ‘ম্যাজিক’ করছেন সন্দেক স্রষ্টা। চিনির ভোজযোগ্য বা এডিব্ল ‘কালি-কাগজে’ সেই ছবির ছাপ ফুটিয়ে তুলে কেকের গায়ে বসানো হচ্ছে। বড়দিন তো বটেই ভাইফোঁটা, দেওয়ালি বা বিজয়া দশমীতেও এমন অভিনব সন্দেশের কেক বড় আকর্ষণ। বিয়ের তত্ত্বের ক্ষীরের পুতুলের মতো মডেলও এমন কেকের ডিজ়াইনের অঙ্গ।
কলকাতা ছাড়িয়ে মফস্সলের মিষ্টির দোকানেও এই শীতে নিয়মিত কেকের অর্ডার হচ্ছে। আইসক্রিমের মতো টু-ইন-ওয়ান, ভ্যানিলা স্বাদেরও ভাল কাটতি সন্দেকের মধ্যে— বলছেন ফেলু মোদকের কর্ণধার অমিতাভ দে। এক কেজি নলেন গুড়ের সন্দেক দামে নামী দোকানের কেকের মোটামুটি সমান সমান। আর গড়পড়তা কেক কারবারিদের সস্তার ক্রিম, স্পঞ্জের তুলনায় নিখাদ সন্দেশের কেক অনেকটাই সুস্বাদু মনে করছেন মিষ্টি রসিকেরা।