সংক্রমণের আশঙ্কা, একই ঘরে নানা রোগের চিকিৎসা আইডি-তে

সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য তৈরি রাজ্যের অন্যতম সরকারি হাসপাতাল বেলেঘাটা আইডি-র সাত নম্বর ওয়ার্ডের এখন এমনই অবস্থা বলে অভিযোগ রোগীর পরিজনদের।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩৮
Share:

বেলেঘাটা আইডি।—ফাইল চিত্র।

হাসপাতালের চারতলায় লম্বা একটি ঘর। সেই ঘরে দু’পাশে সার দিয়ে বিছানায় শুয়ে রোগীরা। কেউ ডিপথেরিয়া, কেউ বা জলাতঙ্কে আক্রান্ত। কেউ আবার ভর্তি হয়েছেন সারা শরীরে হাম নিয়ে।

Advertisement

সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য তৈরি রাজ্যের অন্যতম সরকারি হাসপাতাল বেলেঘাটা আইডি-র সাত নম্বর ওয়ার্ডের এখন এমনই অবস্থা বলে অভিযোগ রোগীর পরিজনদের। ওই হাসপাতালে সম্প্রতি ভর্তি হয়েছেন যাদবপুরের বছর কুড়ির এক তরুণী। তাঁর বাবা কমল শূর জানালেন, মেয়ে ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু মেয়ের তিনটি শয্যা পরেই এক জন জলাতঙ্কের রোগী ভর্তি হয়েছেন। কমলবাবুর অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানানো হলেও তাঁরা কোনও পদক্ষেপ করেননি। শুধু তা-ই নয়, কমলবাবু জানান, ওই ওয়ার্ডে রোগীদের বিছানার পাশ দিয়েই বেড়াল, ইঁদুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার মধ্যেই রোগীরা থাকছেন, খাওয়াদাওয়াও করছেন। শৌচালয়ে ইঁদুর বাসা বাঁধলেও সাফাইকর্মীদের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। শৌচালয় থেকে ফিরে কোনও রোগী হয়তো দেখছেন, বিছানা দখল করেছে বেড়াল ছানা।

একই অভিযোগ তুলেছে হামে আক্রান্ত আর এক রোগীর পরিবার। ওই ওয়ার্ডেই ভর্তি রয়েছেন সেই রোগী। পরিবারের অভিযোগ, রোগীর অবস্থা গুরুতর হলেও তাঁর জন্য আলাদা কোনও ব্যবস্থা নেই। অন্যান্য সংক্রমণে আক্রান্তদের সঙ্গেই রেখে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। ওই ওয়ার্ডে জলাতঙ্কে আক্রান্তদের মধ্যে এক জন দিন কয়েক আগে মারা যান। পরিজনদের তরফে বারবার রোগীদের আলাদা রাখার আর্জি জানানো হলেও হাসপাতাল কোনও পদক্ষেপ করছে না বলেই অভিযোগ।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রের খবর, এখন সেখানে চার জন ডিপথেরিয়ার রোগী ভর্তি রয়েছেন। জলাতঙ্ক এবং হামে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি নয়। তা সত্ত্বেও তাঁদের একই ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের অধিকাংশ ঘরই তালাবন্ধ। তা হলে সেই সমস্ত ঘরে রোগীদের রাখা হচ্ছে না কেন? হাসপাতাল সূত্রের খবর, চিকিৎসক ও নার্সের অভাবের কারণেই রোগীদের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা যাচ্ছে না। মাত্র চার জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে ৬৬০ শয্যার হাসপাতাল চালানো হচ্ছে! মাত্র ১১০ জন নার্স গোটা হাসপাতালে পরিষেবা দিচ্ছেন। আলাদা ঘরে ওয়ার্ড তৈরি করে চিকিৎসা চালাতে গেলে ন্যূনতম পরিষেবাও দেওয়া যাবে না। তাই একটি ঘরেই রোগীদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যে কোনও ধরনের সংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রে আক্রান্তকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা জরুরি। কারণ, এ সব ক্ষেত্রে এক রোগীর পাশে অন্য রাখা হলে বিপদ দু’জনেরই। তাই প্রত্যেককে আলাদা করে রাখা উচিত। জলাতঙ্ক এবং ডিপথেরিয়ায় আক্রান্তদের কখনওই এক ওয়ার্ডে রাখা উচিত নয়। তার নিয়মও নেই। এ শহরের মতো বেঙ্গালুরু ও দিল্লিতেও সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষ হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে প্রত্যেক রোগের জন্য আলাদা ওয়ার্ড করা হয়েছে। এবং সেই সব ওয়ার্ডে যখন খুশি যে কেউ ঢুকে যেতে পারেন না।

‘অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব রেবিস ইন ইন্ডিয়া’র সাধারণ সম্পাদক ও চিকিৎসক সুমিত পোদ্দার বললেন, ‘‘স‌ংক্রামক রোগে আক্রান্তদের থেকে রোগ ছড়াতে পারে। তাঁদের আলাদা ভাবে বিশেষ নজরদারিতে রাখা দরকার। আলাদা ওয়ার্ডে রাখার মতো পরিকাঠামো না থাকলে অন্তত পর্দা দিয়ে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা করা উচিত।’’ শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘ডিপথেরিয়া ও হামে আক্রান্তদের কখনওই পাশাপাশি রাখা উচিত নয়। আলাদা করে পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি। কারণ, পাশাপাশি থাকলে একে অপরের থেকে সংক্রমিত হতে পারেন।’’

এ বিষয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের অধ্যক্ষা অণিমা হালদারের দাবি, হাসপাতালে জলাতঙ্কের রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড রয়েছে। তবে, ডিপথেরিয়া এবং হামের রোগীদের অনেক সময়ে একই ওয়ার্ডে রাখা হয়। তাতে সমস্যা নেই। হামের রোগীদের প্রয়োজনে মশারি টাঙিয়ে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। কোনও রোগীর সমস্যা হলে হাসপাতালের নির্দিষ্ট জায়গায় অভিযোগ জানানো যায়। তাঁর কথায়, ‘‘একই ওয়ার্ডে জলাতঙ্ক ও ডিপথেরিয়ার রোগীকে রাখা হচ্ছে বলে কোনও অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে অভিযোগ জানালে নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন