জলে ভাসছে না কাঠ-খড়-ফুল

প্রতি বছরের বিসর্জনের পরের চেনা ছবিতে এ বার অনেকটাই ‘পরিবর্তন’। গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের হাওড়া ও পূর্ব পাড়ের ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের সব ঘাটই এ বার মোটের উপরে সাফ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস দাশ ও শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২২
Share:

জল অনেকটাই পরিষ্কার। পাড়ে জমে আছে কিছু আবর্জনা। শনিবার, রামকৃষ্ণপুর ঘাটে। — দীপঙ্কর মজুমদার

প্রতি বছরের বিসর্জনের পরের চেনা ছবিতে এ বার অনেকটাই ‘পরিবর্তন’।

Advertisement

গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের হাওড়া ও পূর্ব পাড়ের ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের সব ঘাটই এ বার মোটের উপরে সাফ হয়ে গিয়েছে। কলকাতার মতো ক্রেন নামাতে না পারলেও সাফাইকর্মী, কুলিদের সাহায্যেই এই কাজ অনেকটা করা হয়েছে বলে দাবি সে সব এলাকার পুর কর্তাদের। কয়েকটি ঘাটের পাশে ডাঁই করে বেঁধে রাখা কাঠামো তোলার কাজ এখনও চলছে বলেও জানান ওই পুরকর্তারা।

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও প্রায় প্রতি বছর ভাসানের পরে হাওড়া পুরসভার বিরুদ্ধে গঙ্গা থেকে প্রতিমার কাঠামো পরিষ্কার করার ব্যাপারে গড়িমসির অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এ বার কলকাতা পুরসভার মতো দ্রুত ঘাট পরিষ্কার করে দিতে উদ্যোগী হওয়ায় সেই অভিযোগ আর ওঠেনি। এ বছর বির্সজনের দিনই জল থেকে বাঁশের কাঠামো, ফুল, মালা, বেলপাতা তোলার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। শুধু গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের এই পুরসভাই নয়, পূর্ব পাড়ের শিল্পাঞ্চল ব্যারাকপুরের পুরসভাগুলিও এ বিষয়ে তৎপর ছিল ওই দিন থেকে। দু’পারের পুরকর্তাদেরই দাবি, যে ঘাটে যতটুকু কাজ বাকি, তা-ও রবিবারের মধ্যে করে ফেলা হবে।

Advertisement

হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, পশ্চিম দিকে গঙ্গার পাড় খুবই ঢালু। তাই কলকাতা পুরসভার মতো ক্রেনে করে গঙ্গা থেকে কাঠামো তোলার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। গত বার সেই চেষ্টা করেও বিফল হতে হয়েছিল। তাই পুরসভার সাফাইকর্মীরা এ বার হাতে করেই বিসর্জনের বর্জ্য গঙ্গা থেকে তুলে পাড়ে রেখেছেন। পরে সেগুলি পুরসভার গাড়ি করে সরানো হয়েছে।

হাওড়া পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতরের মেয়র পারিষদ গৌতম চৌধুরী জানান, এ বার ৯টি ঘাটে দশমীর দিন থেকেই পুরসভার প্রায় ২০০ জন সাফাই কর্মীকে রাখা হয়েছিল। নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, প্রতিমা পড়লেই তা সঙ্গে সঙ্গে ঘাটে তুলে ফেলতে হবে। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘হাওড়ার দিকে ছাতুবাবুর ঘাট, রামকৃষ্ণপুর ঘাট ও বাঁধাঘাটের মতো বড় ঘাটে ৩৫ জন করে সাফাইকর্মী রাখা হয়েছিল। বাকি ঘাটগুলিতে গড়ে ১৫ জন করে কর্মী রাখা হয়েছিল আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য।’’

অন্য দিকে, এ বছর পুজোর আগেই গঙ্গা সাফ রাখার বিষয়ে বারবার করে ব্যারাকপুরের সমস্ত পুরসভার সঙ্গে বৈঠক করে ছিলেন পুলিশকর্তারা। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, গঙ্গা সাফ রাখতে প্রতিটি ঘাটে বিনামূল্যে কুলি পরিষেবা পাবেন পুজোর উদ্যোক্তারা। পুরসভার তরফে বন্দোবস্ত করা ওই কুলির দলই গাড়ি থেকে প্রতিমা ঘাটে নামিয়ে বিসর্জন করতে সাহায্য করেছেন। এর পরে ওই কুলিরাই জল থেকে কাঠামোগুলিকে একসঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঘাটের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় রেখেছেন। পরে পুরসভার জজ্ঞাল অপসারণ বিভাগের কর্মীরা এবং ঠিকাদারদের কর্মীরা সেগুলি দফায় দফায় লরিতে তুলে নিয়ে যান।

শনিবার ব্যারাকপুরের মণিরামপুর ঘাট, রাসমণি ঘাট, খড়দহের রাসখোলা ঘাট, পানিহাটির মহোৎসবতলা ঘাট, কামারহাটির আড়িয়াদহ ঘাট, বরাহনগরের আলমবাজার ঘাট, কাচের মন্দির, কুঠি ঘাট-সহ কয়েকটি ঘাটে ঘুরে জলে কোনও কাঠামো ভাসতে দেখা গেল না। অধিকাংশ জায়গাতেই গঙ্গার ঘাটের এক পাশে নির্দিষ্ট জায়গায় বেঁধে রাখা হয়েছে কাঠামোগুলি। তবে পাড়ার ভিতরের ছোট ঘাট, যেমন আগরপাড়ার ডুমুরতলা ঘাট, আড়িয়াদহের বিন্ধ্যবাসিনীতলা ঘাট-সহ কয়েকটিতে দু’-তিনটি করে কাঠামো ভাসতে দেখা গিয়েছে।

বরাহনগরের চেয়ারম্যান পারিষদ দিলীপ নারায়ণ বসু, কামারহাটির চেয়ারম্যান পারিষদ বিশ্বজিৎ সাহাদের কথায়, আগে জলেই ভেসে থাকতো কাঠামো, খড়, ফুল। এ বার কুলিরা জলে প্রতিমা পরার পরে তা ঘাটের কাছে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় এনে বেঁধে ডাঁই করে রেখেছেন। কলকাতার মতো ক্রেন দিয়ে তোলার পরিকাঠামো আমাদের নেই। তাই হাতেহাতে যতটা সম্ভব কাঠামো লরিতে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছোট ঘাটগুলিতে এ দিক-ও দিক কাঠামো ভেসে থাকার বিষয়ে পুরকর্তাদের বক্তব্য, ‘‘ওই ঘাটগুলি পুলিশের কাছে নথিভুক্ত নয়। তাই সেখানে কর্মী দেওয়া হয়নি। এলাকার দু’-একটি ছোট ঠাকুর সেখানে কেউ ফেলেছেন। সেগুলিও সাফাইয়ের পরিকল্পনা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন