Coronavirus Lockdown

সংক্রমণ সারাতে ওপেন হার্ট সার্জারি ৪৮ দিনের শিশুর

অস্ত্রোপচার পরবর্তী দেখভালও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময়ে তার অ্যান্টি-ফাঙ্গাল চিকিৎসা হয়।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২০ ০৩:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

জন্মের ১৫ দিন পর থেকেই জ্বর আসছিল। প্রাথমিক অনুমানের ভিত্তিতে নিওনেটাল মেনিনজাইটিসের চিকিৎসা করেও উন্নতি না হওয়ায় মিজোরামের বাসিন্দা শিশুটিকে তার বাবা-মা লকডাউন শুরুর ঠিক আগে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বিভিন্ন পরীক্ষায় জানা যায়, ‘ইনফেকটিভ এন্ডোকার্ডিটিস’-এ আক্রান্ত সে। লকডাউনেই শুরু হয় দীর্ঘ চিকিৎসা। সুস্থ শিশু সম্প্রতি মিজোরামে ফিরেছে।

Advertisement

ইনফেকটিভ এন্ডোকার্ডিটিস কী?

হৃৎপিণ্ডের ভিতরে ফাঙ্গাস বা ছত্রাক এর কারণ। মূলত সেপ্টিসেমিয়া থেকে এই সংক্রমণ হয়। এ ক্ষেত্রে শিশুটির হৃৎপিণ্ডের বাঁ দিকের অলিন্দে দেড় সেন্টিমিটার আয়তনের একটি ‘ফাঙ্গাল বল’ ছিল। হাসপাতাল সূত্রের খবর, শুরুতে শিশুটির অ্যান্টি-ফাঙ্গাল চিকিৎসা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ওই বল বেড়ে বাঁ দিকের অলিন্দ দখল করে নেয়। ফলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল শিশুটির। অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত হয় তখনই।

Advertisement

৪৮ দিনের শিশুটির ওপেন হার্ট সার্জারি করে বার করা হয় বলটি। পাশাপাশি, হৃৎপিণ্ড পরিষ্কার করে ইনট্রাভেনাস ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার চ্যানেলও বদলে দেওয়া হয়। বাইপাসের অ্যাপোলো গ্লেনেগল্স হাসপাতালে কার্ডিয়োথোরাসিক ভাস্কুলার সার্জন সুশান মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চার ঘণ্টায় অস্ত্রোপচার হয়। বলের বায়োপসি করে দেখা গিয়েছে, ওই ছত্রাক ‘অ্যাসপারজিলাস’ গোত্রের। তথ্য বলছে, এক লক্ষ শিশুর মধ্যে খুব বেশি হলে ১১২ জন ইনফেকটিভ এন্ডোকার্ডিটিসে আক্রান্ত হয়।

চিকিৎসক সুশান মুখোপাধ্যায়ের মতে, “জন্মের পরেই শিশুটির সেপ্টিসেমিয়া হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। সেই কারণেই ওই ছত্রাক তৈরি হয়। হৃৎপিণ্ডের বাঁ দিকের অলিন্দ থেকে বিশুদ্ধ রক্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সেখানে থাকা ওই ফাঙ্গাল বল ভেঙে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রতি মুহূর্তে ছিল। তেমন হলে শিশুটির স্ট্রোক হতে পারত। এমনকি, মস্তিষ্ক, কিডনি-সহ সব অঙ্গ

সংক্রমিত হত।”

অস্ত্রোপচার পরবর্তী দেখভালও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময়ে তার অ্যান্টি-ফাঙ্গাল চিকিৎসা হয়। নিওনেটাল ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে শিশুটির চিকিৎসক ছিলেন কৌস্তভ চৌধুরী এবং অমৃতা রায়। সারা জীবন ওকে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল চিকিৎসা চালাতে হবে বলে মত তাঁদের। কৌস্তভ বলেন, “অস্ত্রোপচারের পরে ছ’সপ্তাহের ইন্ট্রাভেনাস অ্যান্টি-ফাঙ্গাল কোর্স করানো হয়েছে। এ বার ওষুধ খেলেই হবে। তবে শিশুটিকে নিয়মিত চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।”

এত ছোট শিশুর হৃৎপিণ্ডে ছত্রাকের সংক্রমণ বিরল বলে মানছেন কার্ডিয়োথোরাসিক শল্য চিকিৎসক কুণাল সরকার। তাঁর মতে, “সদ্যোজাতের অঙ্গ ও নার্ভ অপরিণত থাকায় অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি ছিল। এই সংক্রমণ শরীরে ছড়িয়ে পড়ার ভয়ও ছিল। পরেও সংক্রমণ ফিরে আসতে পারে। তাই যেমন অ্যান্টি-ফাঙ্গাল চিকিৎসা করাতে হবে, তেমনই তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দিকেও ডাক্তারদের নজর রাখতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন