Extorion

জেল থেকে গব্বরের ফোন প্রোমোটারকে, ‘৫ লাখ নেহি দিয়া তো, গোলি সে টপকা দেঙ্গে’

ফোন ধরতেই ওপারের ব্যক্তি নিজেকে গব্বর বলে পরিচয় দেয়। তার পর সে বলে, ‘‘ক্যা রে বড়িয়া বিল্ডিং কা কাম কর রহা হ্যায়, লেকিন হাম লোগোকো খরচা পানি নেহি মিল রহা হ্যায়।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:৪৬
Share:

গব্বর

নয়ের দশকে শহরের বড় ব্যবসায়ীরা মাঝে মাঝে এমন ফোন পেতেন। শিড়দাঁড়া বেয়ে হিমস্রোত বয়ে যেত তাঁদের। বুধবার পুরনো সেই স্মৃতি ফিরে এল উত্তর কলকাতার দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটের বাসিন্দা চেতন সিংহের। তিনি নিজেও উত্তর কলকাতার বেশ নামী প্রোমোটার। সম্প্রতি নিজের বাড়ির কাছেই একটি পুরনো বাড়ি ভেঙে বহুতল নির্মানের কাজে হাত দিয়েছেন।

Advertisement

বড়তলা থানায় অভিযোগে চেতন জানিয়েছেন, গত কাল সন্ধ্যা পৌন সাতটা নাগাদ তাঁর মোবাইলে একটি অজানা নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোন ধরতেই ওপারের ব্যক্তি নিজেকে গব্বর বলে পরিচয় দেয়। তার পর সে বলে, ‘‘ক্যা রে বড়িয়া বিল্ডিং কা কাম কর রহা হ্যায়, লেকিন হাম লোগোকো খরচা পানি নেহি মিল রহা হ্যায়।’’ সঙ্গে বলে, জেলে আছে তো কী হয়েছে, তার ছেলেরা গোটা শহরে ছড়িয়ে রয়েছে। তাদেরই এক জন যাবে চেতনের কাছে। তার কাছেই পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে দিতে হবে। নইলে? ফোনে বলা হয়, ‘‘অগর নেহি দিয়া তো, তুঝে গোলি মারকে টপকা দেঙ্গে।”

প্রথমে বিষয়টি পাত্তা দেননি চেতন। তবে ঘটনাটি আলোচনা করেন আরও কয়েক জনের সঙ্গে। তার পরেই জানতে পারেন গব্বরের স্বরূপ। তত ক্ষণে আরও কয়েক বার ওই একই নম্বর থেকে ফোন এসেছিল। তিনি সেই ফোন না ধরায় ফের হুমকি দিয়ে এসএমএস আসে। এর পর আর ফোন না ধরার সাহস দেখাতে পারেননি তিনি। ফোন ধরতে এ বার শাসায় রমেশ মাহাতো।

Advertisement

আরও পড়ুন: অফিসে যৌন হেনস্থা, তিন বছর জেল জিএমের

এর পর আর তিনি দেরি করেননি। ঘটনা জানান কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখার এক আধিকারিককে। তাঁরা ঘটনার গুরুত্ব বুঝে বড়তলা থানায় একটি এফ আই আর নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করেছেন।

রমেশ মাহাতো

নয়ের দশকে মধ্য কলকাতার ত্রাস ছিল তালতলার উমা দাস লেনের রশিদ আলম ওরফে গব্বর। অপরাধে হাতে খড়ি পার্ক স্ট্রিটের কুখ্যাত আখতার ভাইদের গ্যাং-এ সামিল হয়ে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে নিজের আলাদা গ্যাং তৈরি করে গব্বর। অন্তত কুড়িটা মামলায় অভিযুক্ত গব্বরের বিরুদ্ধে খুন তোলাবাজি ছাড়াও পুলিশকে বোমা মারার অভিযোগও আছে। ২০০৩ সালে তার যাবজ্জীবন সাজা হয় একটি মামলাতে। গুন্ডা দমন শাখার এক আধিকারিক বলেন, “সেই সময় গব্বর টাকা চাওয়ার পর টাকা না দেওয়ার অর্থ ছিল গব্বর যে কোনও ভাবে তাঁর উপর আঘাত করবে। সেই কারণে ব্যবসায়ী মহলে ত্রাস ছিল সে।” অন্য দিকে রমেশ মাহাতোও গব্বরের মতোই কুখ্যাত।

আরও পড়ুন: সেই রাতে কী ঘটে, এখনও আঁধারে পুলিশ

হুগলি শিল্পাঞ্চলের এই কুখ্যাত দুস্কৃতীর বিরুদ্ধে কমপক্ষে কুড়িটা খুনের মামলা রয়েছে। নিজের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হুব্বা শ্যামলকে খুন করার অভিযোগও রমেশের বিরুদ্ধেই। সেই রমেশও গব্বরের সঙ্গে আলিপুর জেলায় বিচারাধীন। তদন্তাকারীরা বলেন, “এটা নির্দিষ্ট করে এখনই বলা সম্ভব নয় যে ওই ফোন গব্বর নিজেই করেছিল কী না। অন্য কেউও গব্বরের নাম করে বা রমেশের নাম করে ভয় দেখাতে পারে।” তবে গুন্ডাদমন শাখার যে আধিকারিকরা এর আগে গব্বরের একাধিক মামলা তদন্ত করেছেন, তাঁরা বলেন,‘যে ভাষায় ফোন এসেছে, তা গব্বরের ট্রেড মার্ক। এটা ঠিক যে গব্বর ২০০৩ সাল থেকে জেল বন্দি। বয়সও প্রায় ৫০। কিন্তু এটা অসম্বব নয় যে জেলে বলেই নতুন ছেলেদের নিয়ে দল তৈরি করছে সে।”

পুলিশ আধিকারিকরা স্বীকার করেন, এখনও কলকাতার অন্ধকার জগতে গব্বর বড় নাম। তাই এই হুমকি ফোন হালকা ভাবে নিতে পারছেন না তদন্তকারীরা।

(শহরের প্রতি মুহূর্তের হেডলাইন, কলকাতার যে কোনও ব্রেকিং নিউজ পেতে ক্লিক করুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন