ট্রেন থেকে উদ্ধার ৪০ লক্ষের মাদক

অপরিচিত ব্র্যান্ডের চায়ের প্যাকেট দেখে খটকা লেগেছিল বটে। কিন্তু ভিতরে যে চায়ের বদলে ‘চিনি’ ভরা রয়েছে, সেটা মালুম পাননি শিয়ালদহ স্টেশনের রেলরক্ষী বাহিনীর অফিসারেরা! রেলরক্ষী বাহিনী বা আরপিএফ সূত্রের খবর, অফিসে এসে ওই চায়ের দশটি প্যাকেটের একটি খুলতেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হয় কর্তাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০০:২৭
Share:

উদ্ধার: ট্রেন থেকে মিলল চায়ের প্যাকেটে মোড়া মাদক।

অপরিচিত ব্র্যান্ডের চায়ের প্যাকেট দেখে খটকা লেগেছিল বটে। কিন্তু ভিতরে যে চায়ের বদলে ‘চিনি’ ভরা রয়েছে, সেটা মালুম পাননি শিয়ালদহ স্টেশনের রেলরক্ষী বাহিনীর অফিসারেরা! রেলরক্ষী বাহিনী বা আরপিএফ সূত্রের খবর, অফিসে এসে ওই চায়ের দশটি প্যাকেটের একটি খুলতেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হয় কর্তাদের। তাঁরা দেখেন, চায়ের প্যাকেটের ভিতরে পলিথিনের মোড়কে রয়েছে নিষিদ্ধ মাদক ‘ব্রাউন সুগার’।

Advertisement

আরপিএফের সহকারী কমিশনার উজ্জ্বলকুমার পাত্র জানান, শনিবার ডাউন ভাগীরথী এক্সপ্রেসের এক কামরার ভিতর থেকে কালো রঙের একটি ব্যাকপ্যাক মেলে। তার ভিতর থেকেই দশটি চায়ের প্যাকেটের মধ্যে থেকে মেলে ১ কিলোগ্রাম ব্রাউন সুগার। যার বাজারদর অন্তত ৪০ লক্ষ টাকা। এই মাদক নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

রেলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ একটি ফোন পান তাঁরা। তাতে বলা হয়, লালগোলা থেকে আসা ভাগীরথী এক্সপ্রেসের পিছনের দিক থেকে দু’নম্বর কামরায় একটি কালো ব্যাগ পড়ে রয়েছে। খবর পেয়েই শিয়ালদহ আরপিএফের ইন্সপেক্টর সুরজপ্রসাদ গুপ্তের নেতৃত্বে একটি দল ওই কামরায় তল্লাশি চালায়। বাঙ্কের উপর থেকে কালো ব্যাগটিও মেলে। ততক্ষণে অবশ্য কামরাটি যাত্রীশূন্য হয়ে গিয়েছিল। ব্যাগের চেন খোলার পরে দেখা যায়, তাতে রয়েছে দশটি চায়ের প্যাকেট। রয়েছে একটি জিন্‌সের প্যান্টও। কোনও দাবিদার না থাকায় প্যান্ট ও চায়ের প্যাকেট-সহ ব্যাগটি আরপিএফ অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement

রেলরক্ষী বাহিনীর সূত্রে খবর, নানা ধরনের অপরিচিত ব্র্যান্ডের ওই সব প্যাকেট দেখে সন্দেহ হয়েছিল আরপিএফের এক কর্তার। তিনি একটি প্যাকেট ছিঁড়ে পরীক্ষা করতে বলেন। প্যাকেট ছিঁড়তেই ভিতর থেকে বেরিয়ে পড়ে পলিথিনে মোড়া মাদক।

কারা আনছিল এই মাদক? কোথায়ই বা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল?

আরপিএফ জানাচ্ছে, ওই ব্যাগের ভিতর থেকে তেমন কোনও সূত্র মেলেনি। সে কারণেই এই ব্যাপারে তদন্তের জন্য বিষয়টি নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোকে জানানো হয়েছে। তবে মাদকদমনের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ অফিসারেরা বলছেন, মুর্শিদাবাদের লালগোলায় ব্রাউন সুগার পাচার চক্র রয়েছে। সেই চক্রের সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘুটিয়ারি শরিফের মাদক পাচার চক্রের কারবার চলে। যে কায়দায় ট্রেনে পরিত্যক্ত ব্যাগের ভিতরে মাদক পাচার করা হচ্ছিল, তাতে লালগোলা চক্রের জড়িত থাকার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। কলকাতা পুলিশের নার্কোটিক্স শাখার এক প্রবীণ অফিসারের মতে, শিয়ালদহ স্টেশনের ভবঘুরেদের মধ্যে অনেকেই মাদক চক্রের ‘ক্যারিয়ার’। তাদেরই কেউ সুযোগ বুঝে ব্যাগটি সরিয়ে নিত। তার পর শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ট্রেনে চেপে তা চলে যেত ঘুটিয়ারি শরিফে। নার্কোটিক্স শাখার ওই কর্তার কথায়, ‘‘ছকটা ভালই ছিল। কিন্তু ওই অচেনা ফোনই সব গুলিয়ে দিল। এত দূর উজিয়ে এসেও ‘চিনি’র আর গন্তব্যে পৌঁছনো হল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন