হাসপাতালে মালবিকা সেন। সোমবার। —ফাইল চিত্র।
দমদম-কাণ্ডে অর্থই যে অনর্থের মূলে, সেই তত্ত্বই জোরালো হচ্ছে। পুলিশ সূত্রের খবর, গত সোমবার বেশ কয়েক জন পাওনাদারদের টাকা মেটানোর বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন পৌলোমী সেন। তদন্তকারীদের অনুমান, তাঁর পক্ষে টাকা মেটানো যে সম্ভব নয় তা বুঝতে পেরেই মা মালবিকা সেন এবং ছেলে এথান আব্রাহামকে মেরে নিজে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন পৌলোমী।
পৌলোমী শনিবার নিজে জানিয়েছেন, তাঁর বাজারে ২০-২৫ লক্ষ টাকা ধার হয়ে গিয়েছে। আর্থিক অনটন সহ্য করতে না পেরেই ছেলে এবং মাকে মেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি। স্বামী ইভান আব্রাহামের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পরে ছেলে এথান এবং মায়ের সঙ্গে থাকতেন পৌলোমী। মালবিকাদেবীর দাবি, আর্থিক অনটন, দু’বার বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় পৌলোমী মানসিক অবসাদের শিকার ছিলেন। যদিও আর্থিক অনটনই এই ঘটনার অন্যতন কারণ, এখনই সে রকম কোনও সিদ্ধান্তে আসতে চাইছেন না তদন্তকারীরা।
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, তদন্ত চলছে। মা এবং মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের পরেই ঘটনাক্রমের প্রতি ধাপ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব।
রবিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এম সি গার্ডেনের তিনতলা বাড়ির সামনের মাঠে পৌলোমী চিৎ হয়ে পড়েছিলেন। কী ভাবে সেখানে তিনি এলেন জানতে চাওয়া হলে পৌলোমী জানিয়েছিলেন, ছাদ থেকে লাফ দিয়েছেন তিনি। এর পর তাঁর বাড়িতে গিয়ে স্থানীয়েরা দেখেন, বিছানায় পড়ে রয়েছে পৌলোমীর আট বছরের ছেলের নিথর দেহ। পাশে তলপেটে হাত দিয়ে বসে রয়েছেন দিদিমা মালবিকা সেন। সোমবার মালবিকা বলেন, ‘‘শনিবার রাতে মেয়ে আমাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করলে নেতিয়ে পড়ি। পরদিন জ্ঞান ফিরলে দেখি, ও নাতিকে মেরে ফেলেছে। আমি বেঁচে আছি দেখে, ছাদ থেকে ঝাঁপ দিতে গেল!’’
এই ঘটনাক্রম ঘিরে তদন্তকারীদের বক্তব্য, শনিবার রাত থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত ওই তিনতলার বাড়িতে ঠিক কী কী ঘটেছে তা বিশদে জানা প্রয়োজন। পুলিশ সূত্রের খবর, পৌলোমীর তলপেটে ধারালো কিছু দিয়ে তিনটি কোপানোর দাগ রয়েছে। ডান হাতের শিরার কাছের ক্ষতও বেশ গভীর। কিন্তু উঁচু জায়গা থেকে পড়লে সাধারণত যে ধরনের আঘাত হয় তেমন কোনও চিহ্ন মেলেনি। তপসিয়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে মা এবং মেয়ের চিকিৎসা চলছে ভাস্কর রায়ের তত্ত্বাবধানে। মঙ্গলবার ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘দু’জনই আগের তুলনায় ভাল আছেন। তবে উঁচু জায়গা থেকে পড়ে যাওয়ার আঘাত বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও পৌলোমীর মেরুদণ্ডে আঘাত রয়েছে। বাঁ দিকের পাঁজরের তিনটি হাড় এবং কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’ ইতিমধ্যেই পৌলোমীর বিরুদ্ধে ছেলেকে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।