উদাসীন পুরসভা

স্কুলের সামনে ভ্যাট ‘অবাধেই’

সকাল সাড়ে সাতটা। সবে কচিকাঁচারা আসতে শুরু করেছে স্কুলে। ঢোকার গেটে এসে সকলেরই নাকে হাত। দুর্গন্ধে ভরে আছে স্কুল-রাস্তা। প্রতি দিন এ ভাবেই স্কুলে যাতায়াত করতে হচ্ছে এন্টালির লোরেটো কনভেন্ট স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষিকাদের। সৌজন্যে, কলকাতা পুরসভার আবর্জনার ভ্যাট। সারাক্ষণই যেখানে ভনভন করছে মাছি, চলছে কাকেদের নিত্য ভুরিভোজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৪
Share:

এমন পথেই স্কুলে যাওয়া। সোমবার, এন্টালিতে লোরেটো কনভেন্টের সামনে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

সকাল সাড়ে সাতটা। সবে কচিকাঁচারা আসতে শুরু করেছে স্কুলে। ঢোকার গেটে এসে সকলেরই নাকে হাত। দুর্গন্ধে ভরে আছে স্কুল-রাস্তা। প্রতি দিন এ ভাবেই স্কুলে যাতায়াত করতে হচ্ছে এন্টালির লোরেটো কনভেন্ট স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষিকাদের। সৌজন্যে, কলকাতা পুরসভার আবর্জনার ভ্যাট। সারাক্ষণই যেখানে ভনভন করছে মাছি, চলছে কাকেদের নিত্য ভুরিভোজ।

Advertisement

বহু বছর থেকেই লোরেটো কনভেন্ট স্কুলের মূল দরজার বাইরে রয়েছে আবর্জনা ফেলার জায়গা। ভাঙা বোতল থেকে শুরু করে পচা খাবার, আবর্জনা সমস্তই ফেলার জায়গা ওই ভ্যাট। দুর্গন্ধে টেকা দায়। বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও স্কুলের সামনে থেকে পুরসভার ভ্যাট সরানোর কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষের। সোমবার স্কুলের সামনে গিয়ে দেখা গেল, পরীক্ষা চলছে ছাত্রীদের। বাইরে অভিভাবকদের ভিড়। আবর্জনার স্তূপে ভিড় করে রয়েছে কাকের দল। কাকেদের মুখে মুখে সেই আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে স্কুলের গেটের ভিতরেও। এক অভিভাবক মুনমুন নাথ জানান, সকালে অবস্থা আরও ভয়ানক থাকে। ‘‘সেই সময়েই পুরসভার জঞ্জাল তোলার গাড়ি ঢোকে, ঢোকে ছাত্রীদের স্কুলবাসও। এর জেরে ওই সময়ে জায়গাটা নরককুণ্ড হয়ে থাকে।’’—বলেন মুনমুনদেবী।

স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে শুরু করে পুরসভা— সর্বত্রই লিখিত অভিযোগ জানালেও কোনও পদক্ষেপই করেনি পুরসভা। বিস্তর টালবাহানার পরে বছর দু’য়েক আগে দু’টি আবর্জনা ফেলার কন্টেনার বসিয়ে দিয়ে যায় পুরসভার লোকজন। কিন্তু অবস্থা তথৈবচ। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা না ফেলায় রাস্তার উপরেই জমছে নোংরার স্তূপ। স্কুলের অধ্যক্ষ জেসিকা গোমস সুরানা বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের নিজস্ব তেমন ক্ষমতা নেই যে ওই আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলব। তা-ও অনেক সময়েই স্কুলের ছাত্রীরাই নামে সাফাই অভিযানে। কিন্তু তাতে কী আর সমস্যা মেটে?’’ স্কুলের এক শিক্ষিকা সুনীতা বিশ্বাস জানান, বেশ কয়েকবার পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে পুরসভায় গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। মাঝে সরকার বদল হয়েছে। কিন্তু আবর্জনা থেকে গিয়েছে স্কুলগেটের সামনেই। কুকুর বা অন্য কোনও প্রাণীর মৃতদেহও মাঝেমাঝে ফেলা হয় ওই ভ্যাটে। সুনীতাদেবী বলেন, ‘‘আমরা বলেছিলাম‌ ক্লিন সিটি কম্প্যাক্টর মেশিন বসাতে। কিন্তু পুরসভা জানায়, যথেষ্ট জায়গা না থাকায় আধুনিক মেশিন বসানো সম্ভব নয়।’’ শিক্ষিকাদের অভিযোগ, উল্টে পুরসভা তাঁদের ময়লা ফেলার বিকল্প জায়গা খুঁজে দেওয়ার কথা বলে।

Advertisement

গত বছরই এই স্কুলের বেশ কিছু পড়ুয়া আক্রান্ত হয় ডেঙ্গিতে। স্কুল কর্তৃপক্ষের কথায়, যে জায়গায় সকাল থেকে দিনের একটা বড় সময় কাটায় ছাত্রীরা, সেটাই যদি এমন অস্বাস্থ্যকর, দুর্গন্ধযুক্ত হয় তবে স্বাস্থ্যশিক্ষাই বৃথা হয়ে যায়। অধ্যক্ষ জানান, পুরসভার কর্মীদের অনুরোধ করা হয়েছিল, স্কুল শুরু হওয়ার আগেই আবর্জনা তুলে নিয়ে যেতে। বা ক্লাস শুরুর পর ওই কাজে নামতে। যাতে অন্তত স্কুলে ঢোকার সময়ে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি এড়ানো যায়। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি।

কেন বারেবারে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও পদক্ষেপ করছে না পুরসভা? কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের এক আধিকারিক জানান, স্কুলের অভিযোগ পেয়েই ময়লা ফেলার কন্টেনার বসানো হয়। কথা ছিল জঞ্জাল নির্দিষ্ট পাত্রে ফেলার বিষয়টি নজরে রাখার জন্য সারাক্ষণ কয়েক জন পুরকর্মী থাকবেন। স্কুলে সামনে যাতে কোনও ভাবে ময়লা না জমে সেজন্য নিয়মিত সাফাইকাজ চলারও কথা। কিন্তু কথা মতো যে কাজ হয়নি তা কার্যত স্বীকার করেছে পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগ। তবে আশার কথাও শুনিয়েছেন ওই আধিকারিক। তিনি বলেন, ‘‘ওই জায়গায় আধুনিক কম্প্যাক্টর বসানোর প্রস্তাব আমাদের কাছে এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি, যত দ্রুত সম্ভব স্কুলের সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন