Durga Puja 2020

বাজেট ছেঁটে সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে বহু পুজো

প্রতিবার ১২ জন ঢাকির বদলে এ বারে ডাক পড়েছে মাত্র তিন জনের। কিন্তু তা বলে বাকি ন’জনের পারিশ্রমিকটুকু অবশ্য কড়ায় গণ্ডায় মিটিয়ে দেবেন তাঁরা।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০ ০৫:০৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

আমপানে বিধ্বস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে এই পুজোয় তাঁদের মুখে খাবার তুলে দিতে চাইছেন কেউ। কেউ আবার পাশে দাঁড়াচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকদের। করোনা আবহে কাজ হারিয়ে চরম আর্থিক সঙ্কটে ভোগা মানুষদের দিকেও সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন কেউ কেউ। করোনা আবহে পুজোর বাজেটে কাটছাঁট করে সেই টাকা দিয়ে এ ভাবেই নতুন কিছু করার কথা ভাবছে এ শহরের বেশ কিছু পুজো কমিটি।

Advertisement

উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেনের পুজো উদ্যোক্তারা জানালেন, প্রতি বছরের মতো পঞ্চমী থেকে দশমী স্থানীয়দের ভোগ খাওয়ানোর আয়োজন এ বছর বন্ধ। কিন্তু তবুও চাল-ডাল-মশলাপাতি কিনছেন তাঁরা। কেন? ওই পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোমেন দত্ত বলেন, ‘‘প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ আমাদের মণ্ডপে ভোগ খান। এ বার তার বদলে ভোগ খাবেন আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা। পুজোর ঠিক পরেই আমপানে বিধ্বস্ত জেলাগুলির কয়েকটি গ্রামে এই চাল-ডাল-তেল পৌঁছে দেব আমরা।’’ আমপানের পরে মানুষের দুর্দশা দেখেই এই পুজোর উদ্যোক্তারা চেয়েছিলেন পুজোয় সেই সব অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে। তাই সেই মতো এ বারের পুজোর বাজেটে কড়া হাতে রাশ টানা হলেও ভোগের খরচ কমাননি। পুজো উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, মণ্ডপের অন্দরসজ্জা থেকে আলো, ঢাকির সংখ্যা সবেতেই কড়াকড়ি হয়েছে। প্রতিবার ১২ জন ঢাকির বদলে এ বারে ডাক পড়েছে মাত্র তিন জনের। কিন্তু তা বলে বাকি ন’জনের পারিশ্রমিকটুকু অবশ্য কড়ায় গণ্ডায় মিটিয়ে দেবেন তাঁরা।

উল্টোডাঙার কবিরাজবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি আবার জানাচ্ছে, তাদের এ বারের বাহুল্যবর্জিত থিমের পুজোর মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন করোনা আবহে কাজ হারানো মানুষেরা। এই পুজো কমিটির সদস্য শম্ভু সাহা জানান, ওই এলাকার বহু রাজমিস্ত্রি, গ্রিলের মিস্ত্রি গত কয়েক মাস যাবৎ কাজ হারিয়ে বসে রয়েছেন। ফলে এই পুজোয় তাঁরা চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি। তাই মণ্ডপ তৈরির কাজে লাগানো হয়েছে সেই সব মানুষকেই। শম্ভুবাবুর কথায়, ‘‘প্রতি বার পেশাদার মণ্ডপসজ্জার কর্মীদের দিয়ে কাজ করানো হয়। এ বার হয়তো মণ্ডপসজ্জা অত ভাল হবে না। তবু কাজ হারানো মানুষদের এইটুকু কাজ দিতে পেরে একটা বাড়তি তৃপ্তি হচ্ছে।’’ অন্য বছরের মতো এ বার মণ্ডপের আশপাশে বসতে পারবে না মেলা। তবে সেই মেলায় বিক্রিবাটা করে যাঁরা পুজোর ক’টা দিন উপার্জন করতেন, তাঁদেরও এ বারের পুজোয় কোনও না কোনও কাজে শামিল করে নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। পুজোর বাজেটে কাটছাঁট করে সেই টাকা দিয়েই এই সব মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছে এই পুজো কমিটি।

Advertisement

বেলেঘাটা পল্লি উন্নয়ন সমিতির এ বারের থিম আবার পরিযায়ী শ্রমিক। পায়ে হেঁটে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার সেই ছবিই ফের ফুটিয়ে তোলা হবে মণ্ডপে। বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ৫০ জন পরিযায়ী শ্রমিককে মণ্ডপে নিয়ে এসে তাঁদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার পথে হাঁটছেন এই পুজোর উদ্যোক্তারা। পুজোর বাজেট কমিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতে শুধু টাকাই নয়, তুলে দেওয়া হবে জামাকাপড়-বইখাতাও। আর যে সব পরিযায়ী শ্রমিক পুজোর দিনে মণ্ডপে উপস্থিত হতে পারবেন না, তাঁদের বাড়ি গিয়ে এই সাহায্য পৌঁছে দিয়ে আসবেন উদ্যোক্তারা। ওই পুজো কমিটির সদস্য শুভজিৎ পাল বলেন, ‘‘এমনিতেই এ বার বাজেট কম। পুজোকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভোগ খাওয়ানো, বিসর্জনের জাঁকজমক সব বাদ দিচ্ছি। ফলে যেটুকু টাকার সাশ্রয় হচ্ছে, তা দিয়েই পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন