দেশকল্যাণ চৌধুরী
সব পাড়াতেই এখন পুজোর সাজ। চলছে মণ্ডপ তৈরি। প্রতিমা নির্মাণ। জমে উঠেছে উৎসবের প্রস্তুতি। কোন পাড়ায় কী হচ্ছে তার আগাম হদিস।
উত্তর
উত্তর কলিকাতা সর্বজনীন
প্রতি বছরের মতো এ বারও আমাদের পুজোয় সেই সাবেক ধারা। ৮৫তম বর্ষের মণ্ডপ হচ্ছে প্রাচীন মন্দিরের আদলে। ভিতরে শোভা পাবে শিল্পী ব্রজেশ্বর পালের তৈরি সাবেক প্রতিমা। অনাথ আশ্রমের শিশুদের নিয়ে খাওয়াদাওয়া, বস্ত্র বিতরণ, অষ্টমীতে ভোগ— সব মিলিয়েই পুজো হয়ে উঠবে জমজমাট।
মোহনবাগান বারোয়ারি
প্রতিযোগিতার রেষারেষি বা প্রাইজের চকমকি নয়, আমাদের পুজো ঘরোয়া আবহকেই প্রাধান্য দেবে। এ বারের ৪১তম বর্ষের পুজো তাই খানিক জাঁকজমকহীন। কিন্তু আন্তরিকতায় সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তুলে ধরছি পুজো। শিল্পী প্রদীপ পালের চিরন্তন সাবেক মূর্তি মনে করাবে মাকে। আর পুজো উপলক্ষে ছোটখাটো অনুষ্ঠান, আলোর সাজ, সকলের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া— এটাই আমাদের মূল ভাবনা।
পটলডাঙা শ্রীশ্রী শারদীয়া মহাপূজা
আমাদের পুজোপ্রাঙ্গণে থাকছে সাবেকিয়ানা ও ঘরোয়া আবহ। মণ্ডপেও দর্শকেরা দেখবেন একান্ত ঘরোয়া পরিবেশ। শিল্পী মুরারিমোহন পালের সাবেক প্রতিমা এখানে ধরা দেবে সদাহাস্যময়ী মায়ের মূর্তি হয়েই। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত কচুরি, খিচুড়ি, মিষ্টি, পায়েস— থাকবে নানাবিধ ভোগের ব্যবস্থা। আর ছোট-বড় সকলে মিলে গান, নাটক, নাচে মাতিয়ে রাখবে পুজোপ্রাঙ্গণ।
বালক নবীন সঙ্ঘ (মুক্তারামবাবু স্ট্রিট)
৫৩তম বর্ষের আমাদের পুজোয় থাকছে সাবেক ছোঁয়া। মণ্ডপ সেজে উঠবে থার্মোকল ও কাচের তৈরি নানা কার্টুনের চরিত্র, ম্যাজিশিয়ানের মডেল দিয়ে। শিল্পী উত্তম দাসের প্রতিমা দেখতে হচ্ছে মোমের মতো। প্রতিমা তৈরি হচ্ছে নটরাজ আঙ্গিকে। অষ্টমীতে কুমারী পূজা, নবমীতে ভোগ বিতরণ, দশমীতে পায়েস প্রসাদী— বাদ থাকছে না কিছুই
সম্মিলিত মালোপাড়া সর্বজনীন
‘জীবনের আর এক নাম সাদা-কালো’— এই ভাবনা থেকেই আমাদের ৫২তম বর্ষের পুজো সেজে উঠছে মহা সমারোহে। জীবনের উজ্জ্বল দিনগুলিকে অনেক সময়েই গ্রাস করে অন্ধকার। এক সময়ে আসে সেই আঁধার থেকে মুক্তি। সেই ভাবনা থেকেই মণ্ডপ সাজছে উল দিয়ে। আঁধার বোঝাতে দেখানো হয়েছে গাছের শিকড়, ঝুরির বাহার। অন্ধকারের মাঝেই শিল্পী বাঞ্ছারাম পালের প্রতিমা সাদা অর্থাৎ শান্তি ও আলোর বার্তা বহন করবে। থাকবে ফুল, পাখি, ময়ূরের বাহারি কাজ।
দক্ষিণ
ভবানীপুর সর্বজনীন
এ বার পুজোর ৮৬ বছর। থিমের আড়ম্বর এই পুজোয় নেই। প্রতিমার কাজ মাটির। মণ্ডপের অন্দরসজ্জায় ব্যবহার হচ্ছে মূর্তি, ম্যুরাল ও থার্মোকল। উপরে থাকছে জমকালো চাঁদোয়া। বিজয়া সম্মিলনীতেও রয়ে যায় আনন্দের রেশ।
বেলতলা সঙ্ঘ
৬৭ বছরে পড়ল আমাদের পুজো। পুজোমণ্ডপ এখানে রাজবাড়ির দালান। টিন, বাঁশ, শোলা, হোগলায় তৈরি হবে সারি সারি থামে সাজানো দালান। দালান সাজছে অ্যালুমিনিয়াম আর পাটের কাজে। মন্দিরের চূড়ার মতো হবে মণ্ডপের উপরিভাগ। প্রতিমা আসছে কৃষ্ণনগর থেকে। থাকবে চন্দননগরের আলো। এলাকার গুজরাতি বাসিন্দাদের কথা মাথায় রেখে পুজোর দিনগুলিতে থাকে ডান্ডিয়া নাচের ব্যবস্থা।
২১-এর পল্লি
এ বার পুজোর ৭০তম বছর। পুরনো পুজোর ধারা ফিরিয়ে আনাই আমাদের থিম। মণ্ডপ ঠাকুরদালানের আদলে। ভিতরে থাকবে আগেকার দৈনন্দিন ব্যবহারের নানা মাটির সামগ্রী, তালপাতার পাখা। এগুলিতে রং করে আনা হবে আধুনিকতার ছোঁয়া। মাটির হাঁড়ি, কলসিতে রাখা হবে আলো। রঙে-আলোয় ঝলমল করবে মণ্ডপ। একচালার সাবেক প্রতিমার রং ও সাজেও থাকছে থিমের ছোঁয়া।
বেঙ্গল ইউনাইটেড ক্লাব
৬১তম বর্ষে কবীর রোডের এই পুজোর মূল আকর্ষণ বাহারি রঙের মণ্ডপ। মধুবনী শিল্পেরই একটি ধারা তুলে ধরতে শিল্পীরা আসছেন বিহার থেকে। দর্শনার্থীরা সেই কাজ দেখবেন কাঠ, কাচ ও মাটির উপরে। প্রতিমা ও চালচিত্রেও থাকছে এই কাজ। প্রবেশপথে আলোর কারসাজিতে আরও রঙিন হবে মণ্ডপ। সপ্তমী থেকে নবমী থাকে ভোগের আয়োজন।
আদি লেক পল্লি
১০২তম বছরে আমাদের থিম ‘মানস কন্যা’। ধাতু ঠোকাই শিল্প ও বলাগড়ের নৌ-শিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে শিবের মানস কন্যা মনসার কাহিনি। পুরো মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে আটটি নৌকার আদলে। একটি নৌকার ছইয়ের মধ্যে দিয়ে মণ্ডপে প্রবেশ। আর একটির মধ্যে ডাকের সাজে একচালার প্রতিমা। মণ্ডপ জুড়ে ঠোকাই শিল্পের থালায় মা মনসার মহিমা বর্ণনা করা হবে। পুজোর সময়ে এলাকার খুদেদের নিয়ে থাকে ক্যুইজ, শাঁখ বাজানোর প্রতিযোগিতা। অষ্টমীর বিশেষ আকর্ষণ সবাই মিলে পাত পেড়ে খাওয়া।