যাত্রী সুরক্ষায় আপস নয় ইস্ট-ওয়েস্টে

এক সময়ে কলকাতা মেট্রোর নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মঙ্গু। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা মেট্রোর ভুল থেকে আমরা শেখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেই চেষ্টা কলকাতায় হয়নি। সেটা দুর্ভাগ্যের।’’

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০২:৫৭
Share:

ইস্ট-ওয়েস্টের মহড়া দৌড়। ফাইল চিত্র

বছরখানেক আগের কথা। কলকাতায় একটি বণিকসভার অনুষ্ঠানে আলাপচারিতার ফাঁকে দিল্লি মেট্রোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মঙ্গু সিংহ বলেছিলেন, কলকাতা মেট্রোর কয়েক দশক পরে শুরু হয়েও পথের দৈর্ঘ্য এবং পরিষেবার মাপকাঠির দিক থেকে পৃথিবীর প্রথম পাঁচটি মেট্রোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে দিল্লি মেট্রো। অথচ দেশের মধ্যে প্রথম হওয়া সত্ত্বেও প্রযুক্তির নিরিখে পিছিয়ে পড়া ভোগাচ্ছে কলকাতা মেট্রোকে।

Advertisement

এক সময়ে কলকাতা মেট্রোর নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মঙ্গু। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা মেট্রোর ভুল থেকে আমরা শেখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেই চেষ্টা কলকাতায় হয়নি। সেটা দুর্ভাগ্যের।’’ যদিও কর্তাদের একাংশ আশা দিচ্ছেন, দিল্লি, বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদের মতো আধুনিক মেট্রোর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষেত্রে একেবারেই পিছিয়ে থাকবে না ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। বরং তাঁদের মতে, ওই পরিষেবা চালু হলে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর হালও কিছুটা ফিরতে পারে।

দিল্লিতে আটটি রুটে ৩৪৩ কিলোমিটার মেট্রোপথে ২৫০টি স্টেশন ছুঁয়ে ট্রেন চলে। সেখানে কলকাতায় কবি সুভাষ থেকে নোয়াপাড়ার মধ্যে দূরত্ব মাত্র ২৭ কিলোমিটার। বছরের পর বছর যাত্রী সংখ্যা বেড়ে চললেও পরিষেবার উন্নতি সে ভাবে চোখে পড়েনি। পরিকাঠামোর উন্নতির দিকে নজর না দেওয়াতেই বিঘ্নিত হচ্ছে যাত্রী নিরাপত্তা, এমন অভিযোগ উঠেছে বারবার।

Advertisement

নিরাপত্তার দিক থেকে কী ধরনের সুবিধা থাকছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয়? সূত্রের খবর, যাত্রীদের ওঠা-নামার সময়ে বিপত্তি এড়াতে প্ল্যাটফর্মে স্ক্রিন ডোর থাকছে। ট্রেনের দরজার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেগুলি খুলবে এবং বন্ধ হবে। পাশাপাশি ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেডের তৈরি নতুন মেট্রোর রেকের দরজা অনেকটাই প্রশস্ত। ১৪০০ মিলিমিটারের ওই দরজা দিয়ে যাত্রীদের ওঠা-নামা অনেকটাই স্বচ্ছন্দ হবে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। তবে এখন উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় যে রেকগুলি চলে, সবগুলির দরজার মাপ সমান নয়। ফলে চাইলেও এই মেট্রোর ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর বসানো সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে মেট্রোর অন্দরেই।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সূত্রের খবর, যাত্রীদের ওঠা-নামা সম্পূর্ণ হল কি না দেখার জন্য চালক এবং‌ গার্ডের কেবিনের দু’পাশে দু’টি করে মোট চারটি ক্যামেরা থাকছে। তার মাধ্যমে চালক নিজেই পুরো প্রক্রিয়া দেখতে পাবেন। প্রতি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসানো হচ্ছে বিশেষ উত্তল আয়না। যাতে পুরো প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেন একযোগে চোখে পড়ে। ট্রেনের প্রত্যেক কামরায় থাকবে চারটি করে ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোন। কোনও যাত্রী সমস্যায় পড়লে মাইক্রোফোন অন করে চালকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। পাশাপাশি আপৎকালীন পরিস্থিতিতে মেট্রোর কন্ট্রোল রুম থেকে সরাসরি চালক এবং যাত্রীদের নির্দেশও দেওয়া যাবে।

নতুন মেট্রোয় দু’টি ট্রেনের মাঝের দূরত্ব এবং তাদের গতিবেগ ‘কমিউনিকেশন বেস্‌ড ট্রেন কন্ট্রোল সিস্টেম’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। ভিড়ের সময়ে প্রতি দেড় মিনিট অন্তর মেট্রো চালানো যাবে। কর্তাদের বক্তব্য, উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু না থাকায় দু’টি ট্রেনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান খুব বেশি কমানো যাচ্ছে না। যার জন্য দিনের ব্যস্ত সময়ে কোনও কারণে একটি ট্রেন দেরি করলে পরের ট্রেনে ভিড় উপচে পড়ে। তবে তাঁদের আশা, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো চালু হলে অন্য প্রকল্পগুলির জন্য দাবি আদায়ে কেন্দ্রের উপরে চাপ সৃষ্টি করা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement