নারীপাচারে অভিযুক্ত জগজিতের সল্টলেকের বাড়িতে ইডি-র তল্লাশি। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার বার-ব্যারন জগজিৎ সিংহের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। নারীপাচার, খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক অভিযোগে এই মুহূর্তে জেলবন্দি জগজিৎ।
গোটা রাজ্যে কমপক্ষে ৫০টি পানশালার মালিক এই জগজিৎ। শুধু জগজিৎ নয়, ইডি তদন্ত শুরু করেছে আরও দুই পালশালার মালিক আজমল সিদ্দিকী এবং বিষ্ণু মুন্দ্রার বিরুদ্ধেও। আজমলের বিরুদ্ধেও রয়েছে নারীপাচারের অভিযোগ। লেকটাউনের বাসিন্দা বিষ্ণু এর আগে একাধিক বার ক্রিকেট বেটিং-এর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে। এর পর জগজিতের সঙ্গেই গ্রেফতার হয়েছে বিষ্ণু নারীপাচার ও যৌন হেনস্থার ঘটনায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ইডি তদন্তকারীরা জগজিতের ভবানীপুরের ও সল্টলেকের বিএইচ ব্লকের বাড়িতে হানা দেন। সেই সঙ্গে তল্লাশি চালানো হয় সত্যনারায়ণ মুন্দ্রা বলে এক শেয়ার ব্যবসায়ী এবং আজমল সিদ্দিকীর বাড়িতেও। ইডি সূত্রে খবর, এই তিন ব্যাবসায়ী নারী পাচার, ক্রিকেট বেটিং-এর থেকে পাওয়া বিপুল পরিমাণ কালো টাকা নোটবন্দির সময় বিভিন্ন ভাবে পাচার করেছে। সেই টাকার হদিস পেতেই তদন্ত শুরু করেছে ইডি। তদন্তকারীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, খালি নিজেদের টাকা নয়। জগজিতের মাধ্যমে রাজ্যের একাধিক রাজনৈতিক প্রভাবশালী এবং ব্যবসায়ী কালো টাকা সরিয়েছেন।
জগজিৎ এবং তার সঙ্গীদের বাড়িতে চলছে ইডি-র তল্লাশি। দেখুন ভিডিয়ো
এক সময়ে জগজিৎ সিংহকে দিল্লির লিকার ব্যারন মনু শর্মার সঙ্গে তুলনা করা হত তার ব্যাবসায়িক প্রতিপত্তি এবং বিভিন্ন মহলে তার যোগাযোগের জন্য। বাম আমলেও শীর্ষ আমলা থেকে একাধিক প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তার খুব ভাল যোগাযোগ ছিল। সেই প্রতিপত্তি বজায় ছিল এই জমানাতেও।
আরও পড়ুন
দু’দফায় অফিস খুলে প্রতারণা, গ্রেফতার চার
২০১৫ সালে প্রথম বারের জন্য সেই সাম্রাজ্যে আঘাত আসে যখন বিধাননগর পুলিশ তার পানশালাতে হানা দেওয়া শুরু করে নিয়ম ভেঙে ব্যবসা চালানোর জন্য। জাভেদ শামিম ছিলেন তখন বিধাননগর পুলিশের কমিশনার। তিনি গ্রেফতার করেন জগজিৎকে। সেই মামলায় জামিন পেলেও লাগাতার হানা চলতে থাকে ভিআইপি রোডের দু’পাশে তার বিভিন্ন পানশালাতে। আর সেখান থেকেই উঠে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
দুই ছেলের সঙ্গে নারীপাচার, খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত জগজিৎ সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।
ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভাবী পরিবারের মেয়েদের চাকরির টোপ দিয়ে কলকাতায় এনে আটকে রাখা হত নিউটাউনের বিভিন্ন ভাড়া করে ফ্ল্যাটে। তার পর তাঁদের বাধ্য করা হত পানশালায় নাচতে। সেই সঙ্গে জোর করে তাঁদের যৌনকর্মী হিসাবে কাজ করানো হত। এই রকম আরও তিনটি মামলায় জগজিতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ইডি সূত্রে খবর, জেলে তাকে জেরা করতে যাবেন ইডির তদন্তকারীরা। কারণ, প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর জানা গিয়েছে জগজিতের টাকা ঘুরপথে বিদেশেও পাচার হয়েছে।