দুর্ঘটনাস্থলে বসছে স্পিড ব্রেকার। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র
দুর্ঘটনা না ঘটলে সেটাই হতো আশ্চর্যের!
একমুখী রাস্তা। যে যার মতো অন্যদের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। লেক টাউন লিঙ্ক রোডে এটাই নিত্যদিনের চিত্র। এ দিনও যথারীতি প্রবল গতিতে রেষারেষি করছিল দু’টি বাস। যার জেরে প্রাণ গেল এক পথচারীর। পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকালে লিঙ্ক রোডে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে রাজকুমার চৌবে (৫০) নামে ওই প্রৌঢ়ের। তাঁর বাড়ি রিষড়ায়। দুর্ঘটনার পরে ২১৯/১ রুটের একটি বাসকে আটক করেছে পুলিশ। চালক পলাতক।
দুর্ঘটনার পরেই এ দিন রাস্তাটিকে একমুখী বা ‘ওয়ান ওয়ে’ করার পুলিশি সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, লিঙ্ক রোডে বেপরোয়া গতিতে বাস ও গাড়ি চলাচল করে। আগে রাস্তাটি উভয়মুখী (বোথ ওয়ে) থাকাকালীন এই সমস্যা হত না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ লেক টাউন গার্লস স্কুলের সামনে রাজকুমারবাবু রাস্তা পেরোচ্ছিলেন। ডান পায়ে সমস্যার কারণে তাঁর হাঁটাচলায় খানিকটা সময় লাগত। সম্ভবত সেই কারণেই বাসটি হুড়মুড়িয়ে তাঁর সামনে চলে এলেও তিনি সরে যাওয়ার সুযোগ পাননি। দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরেই একটি শাড়ির দোকানে কাজ করতেন রাজকুমারবাবু। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘাতক বাসটি একই রুটের আর একটি বাসের সঙ্গে রেষারেষি করছিল। স্কুলের সামনে অন্য রুটের একটি বাস দাঁড়িয়েছিল। রাজকুমারবাবু রাস্তায় নেমে আসতেই দুর্ঘটনা। ২১৯/১ রুটের বাসটি অন্য রুটের বাসটিকে পাশ কাটাতে গিয়ে রাজকুমারবাবুকে ধাক্কা মারে। বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।
যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে আড়াই বছর আগে লেক টাউন লিঙ্ক রোডকে ‘ওয়ান ওয়ে’ করা হয়েছিল। স্থানীয়েরা জানান, সকালের দিকে গাড়ির সংখ্যা বেশি থাকায় গতি কম থাকে। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে বাস-লরি। দুর্ঘটনাস্থলে এ দিন নতুন একটি স্পিড ব্রেকার বসানো হলেও পর্যাপ্ত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী নেই বলে অভিযোগ। লেক টাউন ট্র্যাফিক পুলিশের গার্ডের দায়িত্ব রয়েছে লিঙ্ক রোড। অভিযোগ, লিঙ্ক রোডে ট্র্যাফিক পুলিশের দেখা মেলে না। অপ্রশস্ত রাস্তার দু’দিকেই বাড়ি। ফলে ফুটপাথে সব সময়েই লেগে থাকে লোকজনের যাতায়াত। লিঙ্ক রোডের উপরেই লেক টাউন গার্লস হাইস্কুল। স্কুলের সামনেই এ দিন দুর্ঘটনা ঘটে। এক সময়ে ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য স্কুলের সামনের গেট খোলা থাকত। কিন্তু রাস্তাটি একমুখী হয়ে যাওয়ার পর থেকে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সেই গেটটি আর খোলা হয় না বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভিআইপি রোড ও যশোর রোড সংযোকারী লিঙ্ক রোডটি ওয়ান ওয়ে হওয়ার পরে বিপজ্জনক তো হয়েছেই। একই সঙ্গে যশোর রোড থেকে ভিআইপিতে ওঠার জন্য গাড়ি, বাস চলছে লেক টাউনের একেবারে আবাসিক এলাকা দিয়ে। ফলে সেখানেও যে কোনও দিন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলেই আশঙ্কা। যদিও বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশকর্তারা এখনই ওই রাস্তা নিয়ে নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চাইছেন না। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘এক সময়ে লিঙ্ক রোডে যানজট নিয়ে লোকজনের ক্ষোভ ছিল। এখন ওয়ান ওয়ে নিয়েও মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।’’ ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) সি সুধাকর বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’