EM Bypass

EM Bypass Accident: ‘ওই রাস্তায় আর যেন কারও মৃত্যু না হয়’

চতুর্থীর রাতে চিংড়িঘাটার কাছে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ইন্দ্রজিৎ দে নামে এক যুবকের।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২১ ০৬:০৫
Share:

শোকার্ত: ইন্দ্রজিতের ছবির সঙ্গে বাবা-মা পঙ্কজ ও মণিকা দে। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ঘরের ভিতরে টিভির সামনে ছোট্ট টেবিলে উল্টো করে রাখা বছর সাতাশের যুবকের বাঁধানো একটি ছবি। পাশে তাঁর ছোটবেলার আরও কয়েকটি ছবি। সেগুলিও একই ভাবে উল্টোনো। ‘‘সেই রাতের ওই ঘটনার পর থেকে ওর ছবিগুলো আর দেখতে পারি না। ছেলেটা যে এ ভাবে চলে যাবে, ভাবতেও পারিনি। বাইপাসে একের পর এক দুর্ঘটনায় খোদ মুখ্যমন্ত্রীও চিন্তিত। ওই রাস্তায় আর যেন কারও মৃত্যু না হয়।’’— চোখের জল মুছতে মুছতে এ কথাগুলোই বললেন বছর পঞ্চাশের মণিকা দে।

Advertisement

চতুর্থীর রাতে চিংড়িঘাটার কাছে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ইন্দ্রজিৎ দে নামে এক যুবকের। স্ত্রীকে পিছনে বসিয়ে সায়েন্স সিটির দিক থেকে চিংড়িঘাটা অভিমুখে যাওয়ার সময়ে ক্যাপ্টেন ভেড়ির কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ডিভাইডারে ধাক্কা মারেন বাইকচালক। বাইকের গতি এতটাই বেশি ছিল যে, দুর্ঘটনার অভিঘাতে ধড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইন্দ্রজিতের। গুরুতর জখম হন স্ত্রী শুভ্রা দে। মণিকা বললেন, ‘‘সেই রাতে আমাদের কাছে ফোনটা আসে তিনটে নাগাদ। পাড়ার ক্লাবের সেক্রেটারি ফোন করে শুধু বললেন, পাপা (ইন্দ্রজিতের ডাকনাম) বাইক অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। হাসপাতালে যেতে হবে। হাসপাতালে যাওয়ার পরে আমাকে আর ওই দৃশ্য দেখতে দেওয়া হয়নি। ওর বাবা দেখেছিল।’’ মায়ের কথা শেষ না হতেই পাশে বসা ইন্দ্রজিতের বাবা, বছর পঞ্চান্নর পঙ্কজ দে বললেন, ‘‘ওই দৃশ্য কি দেখা যায়! দেহ থেকে মাথাটা আলাদা হয়ে গিয়েছিল। চোখ বন্ধ করলে এখনও সেই ছবি ভাসে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ওখানে এত দুর্ঘটনা ঘটে কেন?’’

একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পরে এক মাসেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি ইন্দ্রজিতের বাবা-মা। বেসরকারি সংস্থায় যুক্ত মা কোনও মতে কাজে যোগ দিলেও ইলেকট্রিক মিস্ত্রি পঙ্কজবাবু এখনও কাজে ফিরতে পারেননি। দুর্ঘটনার এত দিন পরেও ছেলের বাইক ফিরে পেতে থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি তাঁরা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বাঁশদ্রোণীর নাথপাড়া এলাকায় তাঁদের দোতলা বাড়ির উপরের তলার ঘরে গিয়ে দেখা গেল, ভিতরে জিনিসপত্র সব ছড়ানো। নীচের তলায় ছেলের ঘরও তালা দেওয়া। সেই ঘটনার পর থেকে আর ওই ঘর খোলা হয়নি বলেই জানালেন তাঁরা। মণিকা জানালেন, সে দিন ইন্দ্রজিতেরা তিন বন্ধু মিলে বাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন। যাওয়ার সময়ে বাড়িতেও কিছু বলে যাননি। মণিকার কথায়, ‘‘অন্যান্য সময়ে রাতে বাইক বার করলে আওয়াজ পেতাম। সে দিন কিছুই বুঝতে পারিনি। কখন যে বেরিয়ে গিয়েছিল, জানি না। আমি জানতে পারলে ওকে অত রাতে বেরোতে দিতাম না!’’

বুধবার মধ্যমগ্রামে উত্তর ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে চিংড়িঘাটা সংলগ্ন এলাকায় পর পর দুর্ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ শোনা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। বাইপাসের ওই অংশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পুলিশকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন
মুখ্যমন্ত্রী। সে কথা শুনেছেন ইন্দ্রজিতের মা-বাবাও। এ দিন চিংড়িঘাটা সংলগ্ন এলাকায় যে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, তা-ও জানেন তাঁরা। মায়ের কথায়, ‘‘এ বার যদি দুর্ঘটনা কিছুটা কমে।’’ তবে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এত দিন পর্যন্ত একের পর এক দুর্ঘটনায় যাঁরা চলে গেলেন, তাঁদের মৃত্যুর দায় কে নেবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন