রায় বাহাদুর রোড

আজও হারায়নি জীবনের উষ্ণতা

শুরুর দিনগুলোয় পাড়াটা ছিল বেশ ফাঁকা ফাঁকা। সেটা ছিল নকশাল আন্দোলনের সময়। রাস্তার ধারের খোলা নর্দমা, মশার উপদ্রব আর সন্ধ্যার পরে রাস্তার মৃদু আলো ছিল জীবনের অঙ্গ। কালের নিয়মে দিন বদলে গেল।

Advertisement

শ্যামাদাস গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭ ১২:০০
Share:

হুল্লোড়: খেলায় মগ্ন ছোটরা। —নিজস্ব চিত্র।

চলতি জীবনের নানা ঘটনা আর সম্পর্কের উষ্ণতা নিয়েই আমাদের পাড়াটা বেশ রঙিন। রায় বাহাদুর রোড রাস্তাটা দীর্ঘ। এর বিস্তৃতি বি এল সাহা রোড থেকে জেমস লং সরণি পেরিয়ে ডায়মন্ড হারবার রোড পর্যন্ত। এর মধ্যে বেহালার জেমস লং সরণির কাছে মিত্র সঙ্ঘ ক্লাবের বিপরীতের অলিগলিই আমার পাড়া।

Advertisement

শুরুর দিনগুলোয় পাড়াটা ছিল বেশ ফাঁকা ফাঁকা। সেটা ছিল নকশাল আন্দোলনের সময়। রাস্তার ধারের খোলা নর্দমা, মশার উপদ্রব আর সন্ধ্যার পরে রাস্তার মৃদু আলো ছিল জীবনের অঙ্গ। কালের নিয়মে দিন বদলে গেল। এল নানা পরিবর্তন। আজকের পাড়াটা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। অতীতের মৃদু আলোর পরিবর্তে বসেছে জোরালো আলো। নর্দমাগুলোও আর খোলা নেই।

পাড়ায় রয়েছে গাছগাছালি, একটা পুকুরও। সকলটা শুরু হয় পাখির ডাক আর কিছু মানুষের প্রাতর্ভ্রমণ দিয়ে। সকালে পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে ভিড় করেন এলাকার মানুষ। জীবনযাপনে ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, পাড়া-পড়শির সম্পর্কের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা প্রভাব ফেলেনি। একে অপরের খোঁজ রাখা, প্রয়োজনে পাশে থাকা সবই আছে। সেটা বোঝা যায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা কোনও সমস্যা হলে। দেখে ভাল লাগে এ পাড়ার যুব সম্প্রদায় পাড়ার ভালমন্দ বিষয়ে সচেতন। পাড়াটাকে আরও উন্নত করতে তাঁদের আগ্রহ রয়েছে।

Advertisement

পাড়ার পুজো-পার্বণই মানুষের মেলামেশা, দেখা সাক্ষাতের অন্যতম ঠিকানা। খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি চলে দেদার আড্ডাও। কর্মব্যস্ততায় কমেছে দৈনন্দিন জীবনে দেখাসাক্ষাতের সুযোগ। তবু এ পাড়ার আড্ডা হারায়নি। কিছুটা কমলেও আজও সেটা টিকে আছে। কখনও ক্লাবে, কখনও বা অবশিষ্ট দু’একটি রকে আজও আড্ডার ছবিটা দেখা যায়।

আগের চেয়ে কমেছে খেলাধুলোও। কাছেই পুকুরপাড়ে বিকেলে কচিকাঁচাদের খেলতে দেখা যায়। আর কাছাকাছি রায়দের মাঠ কিংবা রেলের মাঠে আশপাশের অঞ্চল থেকে অনেকে খেলতে আসেন। রায় বাহাদুর রোডের দু’ধার দিনে দিনে ঘিঞ্জি হয়ে উঠছে। বেড়েছে যান চলাচল। এক সময় পাড়ার মধ্যেই চলে আসে বেপরোয়া বাইক।

বদলেছে অনেক কিছুই... ধামা মাথায় হেঁকে যাওয়া ফেরিওয়ালার জায়গা নিয়েছে মাইকের ঘোষণায় ‘হরেক জিনিস তিরিশ টাকা’। সে যুগে রান্নার সময় বাড়িতে তেল কিংবা চিনি ফুরোলে অনায়াসে প্রতিবেশীর কাছে তা চেয়ে নেওয়া যেত। সেটা এখন আর ভাবাই যায় না। তবু এখানেই আছি সুখে, শান্তিতে। নানা পরিবর্তনের মাঝে পাড়াটা পাড়াই থেকে যায়।

লেখক আইনজীবী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন