ধাপা শুনলে এক সময়ে নাকে রুমাল চাপা দিতেন এ শহরের বাসিন্দারা। আর ভবিষ্যতে হয়তো সেই ধাপার মাঠই হয়ে উঠতে পারে ছুটির দিনে বিনোদন-গন্তব্য।
পুরসভা সূত্রে খবর, ধাপার বিরাট এলাকার মধ্যে ১০ একর জমি জঞ্জালে ভর্তি। তা ফেলে না রেখে পরিবেশবান্ধব বিনোদন পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা হবে। প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। পার্কের পরিবেশ রক্ষায় হবে পাখিরালয়। এই প্রকল্পের ব্যয়ভারের সিংহভাগই বিশ্বব্যাঙ্ক বহন করবে বলে পুর সূত্রের দাবি। জঞ্জালের জায়গা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আরও ভিতরের এলাকায়।
ধাপার মাঠে বিনোদন পার্ক! তা-ও আবার হয় নাকি? পরিবেশবিদেরা বলছেন, কেন হবে না! জঞ্জাল ফেলার মাঠ বদলে বিনোদন পার্ক বা প্রমোদ কানন হয়েছে, এমন উদাহরণ এ শহরেই রয়েছে। ফুলবাগানের কাছে একটি, অন্যটি পার্ক সার্কাস কানেক্টরের কাছে। তবে ওই দু’টি পার্ক ব্যবসায়িক কারণে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু বিশ্বব্যাঙ্কের শর্ত মেনে ধাপার পার্ক ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না। সরকারি পার্ক হিসেবে জনসাধারণ তার আনন্দ নিতে পারবে। এই পার্ক তৈরি, পরিচালনের ক্ষেত্রে পরিবেশ-বিধিও লাগু থাকবে।
এই প্রকল্পের পরামর্শদাতা কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন কর্তা শিবশঙ্কর বালা জানান, ধাপার মাটি নির্বিষকরণের পরে এলাকায় একটি বিশেষ ধরনের চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে। তার মাঝে মাঝে গর্ত করে গাছ পোঁতা হবে। পার্কের চারপাশে থাকবে বিশেষ নালা। জঞ্জালের ভিতর থেকে তরল বর্জ্য বেরিয়ে এলেও নালা দিয়ে তা পরিশোধন যন্ত্রে নিয়ে যাওয়া হবে।
পুরসভার একাংশ বলছেন, বাম আমলে বাইপাসের ধারে পাখিরালয় তৈরির পরিকল্পনা হলেও বাস্তবায়িত হয়নি। পরিবেশবিদদের অনেকের মতে, পাখিরালয় তৈরি করতে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। কিন্তু ধাপার মাঠে গাছ লাগানো হলেও তা বাঁচেনি। পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, জঞ্জাল ফেলার ফলে ধাপার মাটিতে প্রচুর জৈব রাসায়নিক পদার্থ জমেছে। তার ফলে গাছ বাঁচতে পারবে না। কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন উদ্ভিদবিদ রণজিৎ সামন্ত বলেন, ‘‘ধাপায় গাছ লাগাতে হলে গর্ত করে প্রচুর মাটি ফেলতে হবে। তার পরেই গাছ লাগানো সম্ভব।’’ পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবব্রত মজুমদার বলছেন, জমি নির্বিষকরণ না করার ফলেই আগে গাছ মারা গিয়েছিল। এ বার নির্বিষকরণের পরে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমতো গাছ লাগানো হবে।
১৯৭১-এ ইরানের রামসরে শহরে জলাভূমি সংরক্ষণ নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়। তখনই এ দেশের সংরক্ষিত জলাভূমির মধ্যে পূর্ব কলকাতার ১২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে থাকা জলাভূমিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরিবেশকর্মীদের কেউ কেউ অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন, ধাপার মাঠের এই ১০ একর জমি ‘রামসর’ তালিকাভুক্ত এলাকার মধ্যে পড়ে। পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছেন, রামসর সম্মেলনের নিয়ম মেনেই পার্ক ও পাখিরালয় তৈরি করা হবে। কোনও কংক্রিটের নির্মাণ সেখানে থাকবে না। ‘‘প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রেখেই কাজ করব,’’ বলছেন মেয়র পারিষদ।