দূরত্ব-িবধি মেনে চলতে আলিপুর চিড়িয়াখানা চত্বরে গোল দাগ দিয়ে জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে অবশ্য দাঁড়াননি কেউ। (বাঁ দিকে)। ইকো পার্কের টিকিট কাউন্টারের লাইনেও দূরত্ব-বিধি মেনে দাঁড়ানোর বালাই নেই (ডান দিকে)। ছবি: রণজিৎ নন্দী, নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজো, কালীপুজোর পরে শীত পড়তেই শুরু হয়ে গিয়েছে উৎসবের দ্বিতীয় মরসুম।
আগামী ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাস জুড়ে সপ্তাহের শেষে শনি-রবিবার দুপুরে কিংবা বড়দিনের ছুটিতে শীতের মিঠে রোদ মাখতে মানুষ সপরিবার বেরিয়ে পড়েন চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়ার মতো বিভিন্ন বিনোদন পার্কের উদ্দেশে। ভিড় উপচে পড়ে গঙ্গার পাড়ে, গড়ের মাঠে। বড়দিনই হোক বা বর্ষবরণ, সর্বত্রই একই ছবি দেখা যায়।
কিন্তু এ বার উৎসবের দ্বিতীয় স্পেলে কোভিডের বাউন্সারের আশঙ্কাও রয়েছে। ভিড় থেকে সংক্রমণ এড়াতে তাই বিনোদন পার্কগুলিতে কতটা সুরক্ষা-বিধি মানা হচ্ছে, সে সব নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
নিউ টাউনের ইকো পার্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, সেখানে প্রতি বছরই আগের বছরের তুলনায় দর্শক সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু এ বার কোভিড পরিস্থিতিতে ভিড় হলে কী ভাবে সামলানো হবে?
হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেনের দাবি, অন্যান্য বারের মতো এ বার এখনও সে ভাবে ভিড় হয়নি। তবে মাস গড়ালে ভিড় বাড়বেই। তাই তাঁরা খুবই সতর্ক থাকছেন। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘দেখা যায় মানুষ শতরঞ্চি পেতে মাঠে বসে পিকনিক করছেন। এ বার বাইরে থেকে খাবার ভিতরে আনা যাবে না। লুকিয়ে কেউ আনলেও চোখে পড়লে তা ফেলে দিতে হবে। তবে পার্কের ভিতরে রেস্তরাঁগুলি খোলা থাকবে। শতরঞ্চি পেতে বসার অনুমতি দেওয়া হলেও দূরত্ব রাখা হচ্ছে কি না, সে দিকে নজরদারি করা হবে। পার্ক জুড়ে ৭২টি সিসিটিভি তো থাকবেই, পাশাপাশি আসন্ন উৎসবের মরসুমে নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যাও বাড়ানো হবে।” তিনি জানান, পার্কের ভিতরে উৎসবের মেজাজে থাকা দর্শকদের সচেতন করতে কোভিড প্রসঙ্গে বার বার মাইকে ঘোষণা করা হবে। পার্কের ভিতরে যে জলাশয় রয়েছে, সেখানে নৌকা চলবে না। শুধু দোতলা লঞ্চই চালু থাকবে। লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যাও অন্য বছরের তুলনায় কম রাখা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানান।
শীতকাল মানেই শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের আবশ্যিক গন্তব্য আলিপুর চিড়িয়াখানা। বড়দিনে বা নববর্ষের দিন সেখানে তিলধারণের জায়গা থাকে না। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিস সামন্ত জানান, অন্যান্য বছর এই সময় থেকেই দৈনিক আট থেকে দশ হাজার মানুষ আসতে শুরু করেন। এ বার এখনও সেই ভিড়টা নেই। তবে শীত বাড়লে, বড়দিন কিংবা বর্ষবরণের সময়ে প্রতিদিন ১৫ হাজারের মতো লোক হওয়ার কথা মাথায় রেখে রক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। পশুপাখিদের খাঁচা থেকে শুরু করে দর্শকদের বসার জায়গা, সব কিছুই বিশেষ ভাবে স্যানিটাইজ় করার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। মাস্ক ছাড়া চিড়িয়াখানায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করাও হচ্ছে।
শীতে কলকাতা ঘোরার অন্যতম আকর্ষণ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এবং তার ভিতরকার মিউজ়িয়াম। কিউরেটর ও সচিব জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, “এ বার মিউজ়িয়ামের ভিতরে একবারে ২০০-র বেশি দর্শক প্রবেশ করতে পারবেন না। বাগানেও এক এক দফায় ৫০০ জনের বেশি মানুষ প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে বড়দিন বা নববর্ষের মতো বিশেষ দিনে মিউজিয়ামে ২০০-র একটু বেশি দর্শককে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে।”
জয়ন্তবাবু জানান, ভিক্টোরিয়ায় প্রবেশের সময়ে দর্শকদের স্যানিটাইজ় করা ছাড়াও তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। করোনার কারণে প্রবীণদের না আসতে অনুরোধ করা হচ্ছে। সবাইকেই বলা হচ্ছে, কাউন্টারে না এসে অনলাইনে টিকিট কাটতে।
সায়েন্স সিটির অধিকর্তা শুভব্রত চৌধুরী জানান, সেখানে অনেকেরই মূল আকর্ষণ থাকে স্পেস থিয়েটার এবং টাইম মেশিন। দু’জায়গাতেই দর্শকের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু’টি ত্রিমাত্রিক শো-ই বিশেষ চশমা পরে দেখতে হয়। কিন্তু চশমা থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় এ বার শো হবে টু-ডি। এ ছাড়াও করোনা সংক্রান্ত সব বিধি সায়েন্স সিটির ভিতরে মানা হবে বলে জানান শুভব্রতবাবু।
সল্টলেকের একটি জনপ্রিয় বিনোদন পার্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অভিজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘কেন্দ্রের নির্দেশিকা অনুযায়ী আমাদের পার্কে মোট যত দর্শক আসতে পারেন, তার ৫০ শতাংশের ঢোকার অনুমতি আছে। এ বার সামনের শীতের মরসুমেও সেই নিয়ম কঠোর ভাবে মানা হচ্ছে।’’