পায়ে বেড়ি নয়। তবে শান্তির দূতেদের চারপাশে গন্ডি কেটে দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত।
গড়িয়াহাট এলাকার একটি আবাসনে এক পক্ষীপ্রেমীর পায়রা পোষা নিয়ে আপত্তি জুড়েছিলেন অন্য বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, পক্ষীপ্রেমী লোপামুদ্রা ঘোষের ফ্ল্যাটে শ’য়ে শ’য়ে পায়রা জুটেছে। আবাসনের যত্রতত্র তারা উড়ে বেড়াচ্ছে। পায়রার মল থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে, হচ্ছে অসুখও। পায়রা নিয়ে দ্বন্দ্ব গড়িয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালতে। সেখানেই মিটেছে বিবাদ।
সম্প্রতি কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, লোপামুদ্রাদেবীর ফ্ল্যাটে নয়, পায়রাদের খাওয়ানোর জন্য আবাসন চত্বরে ২০০ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ করতে হবে। পায়রাদের খাবার জোগাবে আবাসিক কমিটি। লোপামুদ্রাদেবীও ইচ্ছে করলে খাওয়াতে পারেন। পায়রাদের যাতায়াত আটকাতে লোপামুদ্রাদেবীর ফ্ল্যাট-সহ কয়েকটি ফ্ল্যাটের বারান্দার সামনে জাল দিয়ে ঘিরতে বলেছে ডিভিশন বেঞ্চ। বিষয়টি নিয়ে তিন মাস পরে পুলিশ-প্রশাসনকে রিপোর্ট দিতে হবে।
আবাসনের বাসিন্দারা জানান, গত দশ বছর ধরেই এমন ভাবেই পায়রা ঘুরে বেড়াত আবাসনে। কোনও আপত্তিতেই লাভ হয়নি। এমনকী, ২০১০-এ পুরসভা আবাসন থেকে পায়রা সরানোর কথা বললেও কাজ হয়নি। ওই আবাসনের বাসিন্দা, চিকিৎসক সঞ্জয় দাশগুপ্তের দাবি, তাঁর উইন্ডো এসি-র ‘আউটার ক্যাবিনেট’-এর উপরে পায়রার বাসা। সঙ্গে মলমূত্র ত্যাগ। এসি চালালেই দূষিত বাতাস ঢুকে শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। গত বছর দু’দফায় সঞ্জয়বাবু মারাত্মক শ্বাসকষ্টে অসুস্থ হয়েছিলেন। একই অভিযোগ আরও অনেকেরই। প্রাণীরোগ বিশেষজ্ঞরাও জানিয়েছিলেন, পায়রার মল থেকে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আদালতের লিখিত রায়েও পায়রার মল থেকে রোগ ও দূষণ ছড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
আবাসিক কমিটির আইনজীবী পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পায়রার মল এবং ওদের জন্য জড়ো করা খাবার থেকে দূষণ ছ়ড়াচ্ছিল। সেটাই তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আদালতে বলেছিলাম। আদালত সেই যুক্তি মেনে নির্দেশ দিয়েছে।’’ ওই বহুতলের আবাসিক কমিটির চেয়ারম্যান দিলীপকুমার রায় বলেন, ‘‘আদালতের রায়ে আমরা খুশি। বৃহস্পতিবার থেকেই আবাসন চত্বরে পায়রাদের খাবারের ব্যবস্থা করব।’’ লোপামুদ্রাদেবী অবশ্য আদালতের রায় নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।