কে ডাক দিয়েছিলেন, সেটা এখন অবান্তর!
তবে রক্তাক্ত চপ্পল ও রক্তমাখা একটা রডের ছবি নেটিজেনদের চোখে ভাসছে সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বত্র। ‘নট ইন মাই নেম’-স্লোগানটাও গোটা দেশ জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি পাল্টে তাতে ‘নট ইন মাই নেম’-হ্যাশট্যাগ বসানোরও ধুম পড়ে গিয়েছে রীতিমতো।
গত দু’-আড়াই বছরে দেশ জুড়ে হিংসার কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনাই মিলিয়ে দিচ্ছে দিল্লি থেকে তিরুঅনন্তপুরমের সংবেদনশীল নাগরিককে। শরিক হয়েছে কলকাতাও।
দাদরির মহম্মদ আখলাক থেকে আলওয়ারের পেহলু খান, কিংবা দিল্লি থেকে মথুরাগামী ট্রেনের জুনেইদ— হিংসায় নিহতের তালিকায় নামগুলো পাল্টে পাল্টে গিয়েছে। মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশের কিছু ঘটনার কথাও উঠে আসছে প্রতিবাদীদের আলোচনায়। নানা ধরনের সন্দেহের বশে খুনের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনায় ঘৃণার প্রকাশের একটা মিল চোখে পড়ছে অনেকের। শেষতম জুনেইদের খুনেই পথে নামার ডাক দিয়েছে নাগরিক-সমাজ।
আজ, বুধবার ২৮ জুন সন্ধে ছ’টায় নেটরাজ্য থেকে বাস্তবের মাটিতে নেমে প্রতিবাদের কথা বলা হয়েছিল। দিল্লির যন্তরমন্তরে প্রতিবাদীদের শান্তিপূর্ণ জমায়েতের ডাক গোড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতায় ঢাকুরিয়ার দক্ষিণাপণ বাজারে, মধুসূদন মঞ্চ প্রাঙ্গণেও একই সময়ে জড়ো হবে জনতা। ফেসবুকে ইভেন্ট-এর মাধ্যমে বা হোয়াট্স অ্যাপে গ্রুপ তৈরি করে জমায়েতের ডাকে রীতিমতো সাড়া পড়ে গিয়েছে। শুধু কলকাতা বা দিল্লি নয়, বেঙ্গালুরু, মুম্বই, হায়দরাবাদ, তিরুঅনন্তপুরমও একজোট হচ্ছে।
নট ইন মাই নেম-হ্যাশট্যাগটা অবশ্য আনকোরা নয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে মার্কিন বিদেশ নীতির প্রতিবাদে এই স্লোগানের জন্ম দেন যুদ্ধবিরোধীরা। আইএস-এর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলনও একই হ্যাশট্যাগ বেছে নিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমে গুরুগ্রামের তথ্যচিত্র পরিচালক সাবা দিওয়ান বলেছেন, ‘‘এ হল প্রতিটি নাগরিকের জীবনরক্ষার দাবি।’’ কলকাতায় সমাজকর্মী অঞ্চিতা ঘটক, অনুরাধা কপূররাও প্রতিবাদে সামিল হওয়ার ডাক দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে দেশের সংখ্যাগুরু সমাজের বাড়তি দায়ের কথা তাঁরা মনে করাচ্ছেন। অনুরাধা বলছেন, ‘‘ফেসবুক ইভেন্ট-এর পাশে যাঁরা আগ্রহী লিখেছেন, তাঁরাও পারলে কোনও স্লোগান ছাড়া, পথে নেমে পোস্টারে, ‘নট ইন মাই নেম’ কথাটুকু তুলে ধরুন।’’
এই নিঃশব্দ প্রতিবাদের একটাই মন্ত্র, ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’!