কিছু কি লুকোতে চাইতেন ওঁরা

ঘটনাটি তো আর সাধারণ নয়। বোঝাই যাচ্ছে, এতে জড়িত ব্যক্তির মানসিক অবস্থাও স্বাভাবিক নয়। বলা ভাল যে তিনি মানসিক ভাবে সুস্থ নন। তাঁর মানসিক গঠন খুবই জটিল। এক-একটি আচরণ এক-এক রকম মানসিক রোগের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে এতটা গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হল কী ভাবে, সেটাই ভাবাচ্ছে।

Advertisement

স্বাহা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৫ ০০:৩৪
Share:

ঘটনাটি তো আর সাধারণ নয়। বোঝাই যাচ্ছে, এতে জড়িত ব্যক্তির মানসিক অবস্থাও স্বাভাবিক নয়। বলা ভাল যে তিনি মানসিক ভাবে সুস্থ নন। তাঁর মানসিক গঠন খুবই জটিল। এক-একটি আচরণ এক-এক রকম মানসিক রোগের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে এতটা গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হল কী ভাবে, সেটাই ভাবাচ্ছে।

Advertisement

যিনি এত দিন ধরে সব সামাজিকতা থেকে সরিয়ে নিয়েছেন নিজেকে, তিনি হঠাৎ জন্মদিন পালন করলেন কেন? কিছু প্রমাণ করার ছিল কি? কিছু লুকোতে চাইছিলেন? এটি হঠাৎ সামাজিকতার ইচ্ছে নাকি বাস্তব ঢাকার প্রয়াস— দু’দিকই ভেবে দেখার। ভিতরে ভিতরে হয়তো কঠিন কিছু চাপতে চাইছিল ওই পরিবার। তাই হয়তো অনুষ্ঠান করে জানানোর প্রয়োজন পড়েছিল, ‘আমরা ভাল আছি।’ সব স্বাভাবিক আছে।

বাইরে থেকে ঘটনাটি শুনে বলে দেওয়া যায় না, ঠিক কী কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছিল ওই বা়ড়িতে। পুলিশি জেরার মুখে পার্থ দে-র বক্তব্য এবং তাঁর পড়শিদের থেকে যতটা জানা গিয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে মায়ের খুবই কাছের ছিলেন পার্থ। মায়ের মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেননি হয়তো। মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই তাই তাঁর আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। তার পর থেকে যে গোপনীয়তা রক্ষার দিকটা তাঁর চরিত্রে দেখা যায়, তা বোঝাচ্ছে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলেন তিনি। নিজের একটা গণ্ডি তৈরি করে নিয়েছিলেন। মানসিক ভারসাম্য রাখতে পারতেন না। তাই আচরণে অসঙ্গতি দেখা গিয়েছে। যেমন শুনলাম, নিজেই ফুল আনতে বলে আবার নিজেই তা দেখে রেগে গিয়েছিলেন পার্থ।

Advertisement

পার্থর অসুস্থতার পিছনে সামাজিক-পারিবারিক আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। তা বোঝার জন্য বিভিন্ন ধরনের সাইকোমেট্রিক পরীক্ষা আছে। তার মাধ্যমেই পার্থর ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক উঠে আসতে পারে। এ ছাড়াও তাঁর অতীতটা ভাল ভাবে জানা দরকার। আমি নিশ্চিত কয়েক দিনের মধ্যেই অনেক কথা বেরিয়ে আসবে। কোনও কারণ ছাড়া এতটা অস্বাভাবিক হতে পারে না কারও আচরণ। তাঁর বাবার আগুনে পুড়ে মৃত্যু কি নিছক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা না অন্য কিছু? সেটাও তো এখনও রহস্য।

বর্তমানে ওই ব্যক্তির সামাজিক আদানপ্রদানের দিকটাও ভাবাচ্ছে। আপাত ভাবে জানা যাচ্ছে, সামাজিক মেলামেশা করতেন না। কিন্তু সত্যিই কি করতেন না, নাকি মেলামেশাটা অন্য স্তরে ছিল? যেমন অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সহজে সকলের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না কোনও কোনও মানুষ। কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে আজকাল অনেকেই যথেষ্ট যোগাযোগ রাখেন নিজের পছন্দের গোষ্ঠীর সঙ্গে। এ ক্ষেত্রেও তেমন হয়ে থাকতে পারে। এতগুলো কঙ্কাল নিয়ে বসবাস করার ইচ্ছেটা কোথা থেকে এসেছিল? নেতিবাচক জিনিস বা ঘটনার প্রতি অনেকের আকর্ষণ থাকে। তা চর্চা করার উপায়ও দিন দিন বাড়ছে। টিভি-র নানা অনুষ্ঠান, ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইট— কত কী আছে!

এই ব্যক্তির নিশ্চয়ই কঙ্কাল নিয়ে আগ্রহ ছিল। ঘটনাটি থেকে তেমনটাই মনে হচ্ছে। এমন আগ্রহের পিছনে নানা ঘটনার প্রভাব থাকতে পারে। কখনও বিয়ে করেছিলেন কিনা ওই ব্যক্তি, তা-ও জানা দরকার। বিকৃত মানসিকতা তৈরি হয় নানা ঘটনার প্রেক্ষিতেই।

(লেখক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন