Madhyamik Examination 2024

শহরের এক জনই প্রথম দশে, প্রশ্ন কারণ নিয়ে

প্রথম দশে থাকা ৫৭ জনের মধ্যে কলকাতা থেকে মাত্র এক জন পরীক্ষার্থী থাকায় এই প্রশ্নও উঠছে যে, শহরের অন্যতম ঐতিহ্যশালী স্কুল, যেমন হিন্দু, হেয়ার, বেথুনের নাম মেধা তালিকায় নেই কেন?

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৪ ০৮:০৯
Share:

মাধ্যমিকে দশম স্থান পাওয়া কমলা গার্লস স্কুলের ছাত্রী সোমদত্তা সামন্তকে নিয়ে বন্ধুদের উচ্ছ্বাস। ছবি: সুমন বল্লভ।

মাধ্যমিকের ফল যে ভাল হবে এবং তার নম্বর ৬৮০-র আশপাশে থাকবে, সে ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত ছিল কমলা গার্লস স্কুলের এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সোমদত্তা সামন্ত। কিন্তু সে যে প্রথম দশের মধ্যে জায়গা করে নেবে, সেটা একেবারেই ভাবেনি। তাই বৃহস্পতিবার সকালে ফল ঘোষণার সময়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় যখন মেধা তালিকায় থাকা নামগুলি পড়ছিলেন, তখন টিভি দেখেনি সোমদত্তা। টিভিতে চোখ রেখেছিলেন তার মা-বাবা। পর্ষদ সভাপতি মেধা তালিকায় সোমদত্তার নাম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেল গোটা বাড়ির পরিবেশ। সোমদত্তা জানতে পারল, ৬৮৪ পেয়ে সে রয়েছে দশম স্থানে। বস্তুত, প্রথম দশে থাকা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কলকাতা থেকে একমাত্র সে-ই রয়েছে। যা এই সাফল্যের আবহেও প্রশ্ন তুলছে, কলকাতায় বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ার সুযোগ আছে বলেই কি সরকারি স্কুল থেকে মুখ ফেরাচ্ছে বেশির ভাগ পড়ুয়া?

Advertisement

তবে, এই ফলে স্বভাবতই ভীষণ খুশি সোমদত্তা। সে বলল, ‘‘স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, মা-বাবা, গৃহশিক্ষকের কাছে আমি ঋণী। তাঁরা ছাড়া এই ফল সম্ভব হত না। নির্দিষ্ট সময় বেঁধে পড়িনি। তবে, স্কুলে যা পড়িয়েছে, সেই পড়া ফেলে রাখিনি। গত দেড় বছর মোবাইল ফোনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না। শুধু যেটুকু পড়াশোনার জন্য লাগে, সেটুকুই ব্যবহার করেছি।’’ ওই ছাত্রী জানাল, উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে সে। ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। তবে, পড়তে পড়তে যদি কোনও বিষয় ভাল লেগে যায়, উচ্চশিক্ষায় সেটি নিয়েও পড়তে পারে, এমনটাও জানিয়েছে দশম স্থানাধিকারী এই কিশোরী।

এ দিন দুপুর তিনটে নাগাদ সোমদত্তা বাড়ি থেকে স্কুলে আসতেই তাকে নিয়ে হইচই পড়ে যায়। অন্য অভিভাবকেরা প্রায় কোলে তুলে তাকে ভিতরে নিয়ে যান। কমলা গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিঠু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সোমদত্তা ভাল ফল করবে জানতাম। মেধা তালিকায় স্থান পাওয়াটা খুবই আনন্দের। প্রতি বারই আমাদের স্কুলের খুব ভাল ফল হয়। কিন্তু একটুর জন্য হয়তো মেধা তালিকায় থাকতে পারি না। এ বার সেই আক্ষেপ ঘুচল। আমি ভীষণ খুশি।’’ সোমদত্তার বাবা গোপালচন্দ্র সামন্ত পেশায় স্কুলশিক্ষক। তিনি বললেন, ‘‘মেয়ে ওড়িশি নৃত্যও শেখে। কিন্তু মাধ্যমিকের জন্য গত দু’-তিন মাস তেমন ভাবে অনুশীলন করতে পারেনি। মেয়ে বলেছে, পড়াশোনার সঙ্গে নাচও চালিয়ে যাবে। ও যেটা নিয়ে পড়তে চায়, সেটাই পড়বে।’’

Advertisement

তবে, প্রথম দশে থাকা ৫৭ জনের মধ্যে কলকাতা থেকে মাত্র এক জন পরীক্ষার্থী থাকায় এই প্রশ্নও উঠছে যে, শহরের অন্যতম ঐতিহ্যশালী স্কুল, যেমন হিন্দু, হেয়ার, বেথুনের নাম মেধা তালিকায় নেই কেন? বেথুন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শবরী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কলকাতা থেকে মাত্র এক জনের নাম মেধা তালিকায় থাকলেও সামগ্রিক দিক থেকে এখানে পাশের হার খুব ভাল। সেই নিরিখে কলকাতা তৃতীয়। যা প্রমাণ করছে, কলকাতার সরকারি স্কুলে পড়াশোনা ভাল হয়। তবে এটা ঠিক, সেখানে পরিকাঠামোর মানোন্নয়ন ঘটালে ফল আরও ভাল হবে।’’ হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের ফল নিয়ে পর্যালোচনার জন্য একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করছি। আমাদের স্কুলের যে ছাত্র ক্লাসের পরীক্ষায় কোনও একটি বিষয়ে ১০০-র মধ্যে ১০০ পাচ্ছে, সে কী ভাবে ওই বিষয়েই মাধ্যমিকে কম নম্বর পাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখাই আমাদের উদ্দেশ্য।’’

যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বললেন, ‘‘সার্বিক ভাবে কলকাতার ফল কিন্তু খুব ভাল। আমাদের স্কুলে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে ২৪ জন। দু’জন পরীক্ষার্থী ৯০ শতাংশের থেকে এক নম্বর করে কম পেয়েছে।’’

কলকাতার স্কুলের নাম কেন মেধা তালিকায় থাকছে না কিংবা থাকলেও কেন কম, সেই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘কলকাতার সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলি সম্পর্কে অভিভাবকদের আগ্রহ জন্মানো দরকার। এক সময়ে রামকৃষ্ণ মিশন বা সেন্ট জ়েভিয়ার্স স্কুলের সঙ্গে সরকারি স্কুলকে যোগ করে মানোন্নয়নের চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে, এটি সরকারি নীতির বিষয়। সেই সময়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তা হলে কি সরকারি স্কুলগুলি বেসরকারিকরণের দিকে যাচ্ছে? এ বার মেধা তালিকায় এক জন এসেছে। আগামী দিনে সেই সংখ্যা যাতে বাড়ে, সেই চেষ্টা আমরা করব। বোর্ডের সঙ্গেও কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন