ধন্দে ভরা উড়ালপুল

হাওড়া ব্রিজের পূর্ব প্রান্ত এবং গিরিশ পার্কের দিকে যানজট এড়াতে কী ব্যবস্থা হবে, তা চূড়ান্ত না করেই উড়ালপুল তৈরি হচ্ছিল বলে মনে করে বিশেষজ্ঞ কমিটি। উড়ালপুলের নির্মাণগত ত্রুটি নিয়ে এখনও রাজ্য সরকারকে তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়নি বিশেষজ্ঞ কমিটি। সেখান দিয়ে গাড়ি চলাচল অাদৌ সম্ভব কি না, সে রিপোর্টও দেওয়া হয়নি।

Advertisement

সোমনাথ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০১:৫৬
Share:

পোস্তার বিবেকানন্দ উড়ালপুল এখন যেমন। নিজস্ব চিত্র

পোস্তার ভেঙে পড়া উড়ালপুলের নকশায় গলদ ছিল বলে মনে করে খড্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞ কমিটি। ওই উড়ালপুল দিয়ে যানবাহন চললে হাওড়া ব্রিজে যে মারাত্মক যানজট দেখা দেবে, তা ভাবাই হয়নি বলে মনে করছে তারা।

Advertisement

হাওড়া ব্রিজের পূর্ব প্রান্ত এবং গিরিশ পার্কের দিকে যানজট এড়াতে কী ব্যবস্থা হবে, তা চূড়ান্ত না করেই উড়ালপুল তৈরি হচ্ছিল বলে মনে করে বিশেষজ্ঞ কমিটি। উড়ালপুলের নির্মাণগত ত্রুটি নিয়ে এখনও রাজ্য সরকারকে তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়নি বিশেষজ্ঞ কমিটি। সেখান দিয়ে গাড়ি চলাচল অাদৌ সম্ভব কি না, সে রিপোর্টও দেওয়া হয়নি। সে সবের আগেই বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়ে দিল, ওই উড়ালপুলে যান চলাচল চালু হলে ভেঙে পড়বে পুরো ট্র্যাফিক ব্যবস্থাই।

সূত্রের খবর, হাওড়া সেতুর মুখ খুব ছোট, তাই সেখানে সমস্যা বেশি হবে বলে আইআইটি-র বিেশষজ্ঞ কমিটি তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে জানিয়েছে। এজেসি বসু রোড উড়ালপুলের দুই মুখে একই কারণে যানবাহন আটকে থাকছে। পার্ক সার্কাস এবং পিজি হাসপাতালের মুখে যানজট যে কারণে নিত্য সমস্যা।

Advertisement

আইআইটি-র বিশেষজ্ঞ দলের এক সদস্য বলেন, ‘‘উড়ালপুলের স্ট্রাকচার ঠিক আছে কি না, এখন সেই সমীক্ষা করা হচ্ছে।’’ জুলাই মাসের শেষের দিকে রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট দেবেন তাঁরা। বিবেকানন্দ উড়ালপুল দিয়ে হাওড়ার দিকে গাড়ি না পাঠিয়ে শুধু গিরিশ পার্কের দিকে গাড়ি পাঠানো যায় কি না, তাও বিশেষজ্ঞদের বিবেচনায় রয়েছে। কমিটির এক সদস্য বলেন, এতে হাওড়া সেতুর মুখে যানজট এড়ানো যাবে।

২০০৮ সালে পোস্তা উড়ালপুল তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের প্রস্তাবের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে টাকাও বরাদ্দ করা হয়। তখন উড়ালপুল তৈরির খরচ ধরা হয়েছিল ১৫৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। ২০০৯ সালে উড়ালপুল তৈরি শুরু হয়। সেই কাজ বহু দিন বন্ধ ছিল। ফের তা চালু হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে। নবান্ন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই প্রায় ১৬০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে উড়ালপুল তৈরির কাজে।

২০১৬ সালের ৩১ মার্চ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরে রাজ্য সরকার মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেয়ারম্যান করে ৮ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। সেখানে আইআইটি খড়গপুরের বিশেষজ্ঞেরা ছাড়াও কলকাতা পুলিশ, পূর্ত দফতর, কেএমডিএ-র অফিসারদের রাখা হয়। উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ কী হবে, তার জন্য সমীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আইআইটি বিশেষজ্ঞদের নিয়োগপত্র দেয়।

বিশেষজ্ঞ দলের এক সদস্য বলেন, ‘‘আইআইটি-র ইঞ্জিনিয়ারেরা কোনও কাজই হাল্কা ভাবে করেন না। এই সেতু মেরামত করে চালু করা হলে গাড়ি চলাচল ঠিক মতো করতে পারবে কি না, দেখা দরকার। তাই দেশের ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। সেই বিশেষজ্ঞদের সমীক্ষাতেই হাওড়া সেতুর দিকে যানজটের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।’’

বিশেষজ্ঞ দলের ওই সদস্য বলেন, ‘‘বড় কোনও সেতু বা উড়ালপুল তৈরির পরিকল্পনার সময়ে আগামী ৫০ বছরে কত গাড়ি সেখান দিয়ে যাবে, সেটা মাথায় রাখতে হয়। সেই হিসেব কষে নকশা তৈরি হয়।’’ এই ক্ষেত্রে সে রকম কোনও পরিকল্পনাই করা হয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন