মশার ধোঁয়ায় অগ্নিভ্রম, জলদি হাজির দমকলও

মশা মারতে কামান দাগা হয়েছিল। কিন্তু সেই কামানের ধোঁয়ায় এমন বিপত্তি হবে কে জানত! রজ্জুতে সর্পভ্রমের মতো মশা মারার ধোঁয়ায় হল অগ্নিভ্রম। ছুটে গেল দমকল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০০:১১
Share:

এই অফিসঘরই ধোঁয়ার উৎস। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র

মশা মারতে কামান দাগা হয়েছিল। কিন্তু সেই কামানের ধোঁয়ায় এমন বিপত্তি হবে কে জানত! রজ্জুতে সর্পভ্রমের মতো মশা মারার ধোঁয়ায় হল অগ্নিভ্রম। ছুটে গেল দমকল।

Advertisement

মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টা। কামান দাগার ফলে তখন ২৪ প্রিন্সেপ স্ট্রিটের পাঁচ তলা বাড়ি ধোঁয়াময়। তিনতলা ও চারতলার জানলা থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। যা দেখে ভিড় জমে যায় উল্টো দিকের চায়ের দোকানে। ভিড় করে থাকা মানুষজন ভেবেছিলেন, এত ধোঁয়া যখন, বড়সড় আগুন লেগেছে নিশ্চয়ই। সোমবার সন্ধ্যাতেই আগুন লেগেছিল দমদমের বন্ধ জেসপ কারখানায়।

প্রিন্সেপ স্ট্রিটে চায়ের দোকানের সামনে জমা ভিড় থেকেই এক জন কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তড়িঘড়ি ফোন করেন দমকলে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে লটবহর নিয়ে হাজির দমকলও। এক-আধটা নয়, এক্কেবারে চার-চারটি ইঞ্জিন। কিন্তু অফিসের ভিতরে ঢুকে চক্ষু চড়কগাছ দমকল কর্মীদের। আগুন নেই কোত্থাও! এ ধোঁয়া দেওয়া হয়েছে মশা তাড়াতে। তবে দমকলকর্মীরা ঝুঁকি না নিয়ে আগে দেখেন, ধোঁয়া শুধু মশা মারার কামানের, না কি সত্যি সত্যিই আগুনের কোনও উৎস আছে। তবে যখন তাঁরা নিশ্চিত হলেন যে সত্যিই এ ধোঁয়া মশা মারার, তখন দমকলকর্মীদের কেউ কেউ দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন, কেউ বা হেসে ফেলেন।

Advertisement

২৪ নম্বর প্রিন্সেপ স্ট্রিটের ওই পাঁচতলা বাড়ির তিন, চার ও পাঁচতলায় রয়েছে কেন্দ্রীয় আবগারি মন্ত্রকের অফিস। দফতরের এক কর্তা এ দিন জানান, অফিসের কয়েক জনের ডেঙ্গি হয়েছে। ডেঙ্গির মশা যে অফিসে আছে, সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও বিষয়টি সোমবার কলকাতা পুরসভাকে জানানো হয়। পুরসভা জানায়, ঠিক হয়েছিল মঙ্গলবার সকাল দশটায় অফিস খোলার ঠিক পরেই মশা মারার ধোঁয়া দেওয়া হবে, মানে কামান দাগা হবে। কারণ, তখন অফিসে কর্মীসংখ্যা তুলনায় কম থাকে।

সেই মতো এ দিন ওই সময়ে কলকাতা পুরসভার ছ’জন কর্মী কামান নিয়ে হাজিরও হন। প্রথমে অফিসের তিনতলা ও তার পরে চারতলায় কামান দাগার পরেই জানলা দিয়ে গলগল করে ধোঁয়া বেরোতে থাকে। আর তাতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে এই বিপত্তি।

তবে যেখানে আগুন লেগেছে বলে মনে করে এত হইচই, সেই আবগারি মন্ত্রকের অফিসের তখন যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ঘূণাক্ষরেও টের পাননি এ সব কিছু। হঠাৎ দমকলের বিপদসঙ্কেতের শব্দ পেয়ে তাঁরা বাইরে এসে দেখেন দমকলকর্মীরা তাঁদের অফিসেই ঢুকছেন। আর এ দিকে, এমন কাণ্ডে তখনও রীতিমতো আতঙ্কে সিঁটিয়ে পুরসভার কর্মী আনোয়ার আলি মোল্লা। তাঁকে প্রশ্ন করতেই আমতা আমতা করে বললেন, ‘‘আমি কিছু জানি না। পুরসভা থেকে বলা হয়েছে তাই এসেছি।’’ ঘাবড়ে গিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এ রকম আগে কখনও ঘটেনি। আমরা মশা মারার ধোঁয়া দিলাম, আর তাতে একেবারে দমকল!’’

এক দমকলকর্মী বলেন, ‘‘কাজের ব্যস্ত সময়ে কোনও অফিসবাড়ি থেকে এ ভাবে ধোঁয়া বেরোনো খুবই ভয়ের। ফোন করে আশপাশের লোকেরা ভালোই করেছেন।’’ আবগারি মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘খারাপ কিছু হয়নি। তবে কলকাতার মানুষের কেউ কেউ এখনও এত সচেতন দেখে ভাল লাগছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন