শুশ্রূষা: এসএসকেএমে নিয়ে আসা হচ্ছে অসুস্থ এক যাত্রীকে। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থিকথিক করছে ভিড়। বৃদ্ধা খুঁজছেন ছেলেকে। যুবক খুঁজছেন তাঁর বাবাকে। স্বজনের ক্ষতির আশঙ্কায় কান্নাকাটি করছেন কেউ কেউ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এমনই ছবি দক্ষিণ কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে।
এ দিন বিকেলে ময়দান স্টেশনে মেট্রো রেলের কামরায় আগুনের ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন যাত্রীরা। আতঙ্কে জানলার কাচ ভেঙে লাইনে ঝাঁপ দিতে গিয়ে জখম হন বেশ কয়েক জন। আহত ও অসুস্থ যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয় ওই হাসপাতালে।
সন্ধ্যায় সেখানে দেখা যায় উৎকণ্ঠা নিয়ে যাত্রীদের পরিজনেরা ছুটে আসছেন হাসপাতালে। জরুরি বিভাগের বাইরে তৈরি রাখা হয়েছে স্ট্রেচার। রোগীরা অ্যাম্বুল্যান্স কিংবা ট্যাক্সি করে সেখানে পৌঁছতেই তাঁদের ওয়ার্ডে ঢুকিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। মেট্রো রেলের
এক পদস্থ কর্তা হাসপাতালে এলে উত্তেজনা ছড়ায়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ময়দান মেট্রো স্টেশন থেকে এসএসকেএমে ৩৯ জনকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তিন জন মহিলা-সহ মোট সাত জনকে ভর্তি করতে হয়। তাঁদের রাখা হয় ইমার্জেন্সি অবজারভেশন ওয়ার্ডে। হাসপাতালের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মূলত ধোঁয়া শরীরে ঢুকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন যাত্রীরা। সেই সঙ্গে আতঙ্কের জেরও রয়েছে। তবে চিকিৎসকদের দাবি, অক্সিজেন দেওয়ার পরে অনেকে সুস্থ বোধ করেন। তাঁরা জানান, কয়েক জন যাত্রীর পা ও হাতে আঘাত লেগেছে। হাড় ভেঙেছে কি না, তা দেখার জন্য জখম যাত্রীদের এক্স-রে করা হয়। অনেককে আবার
প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়েও দেওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিল চারটি শিশুও। তবে অক্সিজেন দেওয়ার পরে তারা সুস্থ বোধ করায় তাদের শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া হয়।
শ্যামবাজারের বাসিন্দা সুশান্ত ঘোষের মা বৃদ্ধা চিন্ময়ীদেবী খবর পেয়ে গাড়ি নিয়ে ছুটে আসেন ময়দান মেট্রো স্টেশনে। সেখানে কাউকে না পেয়ে তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে পৌঁছে যান এসএসকেএমে। কিন্তু সেখানেও ছেলেকে খুঁজে পাননি বলে জানান চিন্ময়ীদেবী। চিন্তিত বৃদ্ধার কথায়, ‘‘ছেলের মোবাইল বন্ধ। যোগাযোগ করতে পাচ্ছি না। এখানে তো ছেলেকে খুঁজে পেলাম না।’’
মানিকতলার বাসিন্দা আহত জিতেন্দ্র জয়সওয়ালকে অক্সিজেন দিতে হয়। জানলা ভেঙে নামতে গিয়ে তাঁর পা ভেঙেছে। জিতেন্দ্র বলেন, ‘‘রবীন্দ্র সদন থেকে ট্রেনে উঠেছিলাম। ট্রেন ময়দানের দিকে এগোনোর সময় একটা ঘষঘষে আওয়াজ হচ্ছিল। তার পরেই বিস্ফোরণ। চারদিক ধোঁয়ায় ভরে গেল। ট্রেন তখন থেমে গিয়েছে। আগুন দেখে আমরা ভয় পেয়ে জানলার কাচ ভেঙে লাইনের উপরে লাফিয়ে নামি।’’
আহতদের দেখতে হাসপাতালে আসেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, দমকল দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী সুজিত বসু এবং তৃণমূল নেতা মদন মিত্র।