‘মেয়েটা যেন সুস্থ হয়ে ফেরে’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৫
Share:

 রিঙ্কু ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র

ডেঙ্গিতে স্ত্রীকে হারিয়ে এখন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত একমাত্র মেয়ের সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষা করছেন বাগুইআটির ৭ নম্বর উদয়নপল্লির বাসিন্দা সুশান্ত ঘোষ।

Advertisement

গত ১৫ অগস্ট থেকে জ্বরে ভুগছিলেন বিধাননগর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিঙ্কু ঘোষ (৩৩)। বুধবার সন্ধ্যায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে যখন তাঁর মৃত্যু হয়, তখন বাগুইআটির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ম্যালেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করছে তাঁর ১৫ বছরের মেয়ে মৌসুমী। ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস ইজিপ্টাই এবং ম্যালেরিয়ার বাহক কিউলেক্স মশার যৌথ আক্রমণে দিশাহারা অবস্থা টিভি সারাইয়ের মিস্ত্রি সুশান্তের। ঘটনাচক্রে রিঙ্কু আবার পুরসভার ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে ঘরে ঘরে সমীক্ষক দলের কর্মী ছিলেন। সল্টলেকের এএ, বিএ এবং সিএ ব্লকে সমীক্ষার কাজ করতেন তিনি।

এই ক’দিন ওই পরিবারের উপরে যে ঝড় বয়ে গিয়েছে, শুক্রবার তারই বিবরণ দিচ্ছিলেন সুশান্তবাবুর প্রতিবেশীরা। তাঁদের মাঝে দাঁড়িয়ে সুশান্তবাবুর চোখে তখন শুধুই শূন্যতা। ক্যামেরা দেখে বললেন, ‘‘ছবি তুলবেন না। মনের অবস্থা ভাল নয়। মেয়েটা যেন সুস্থ হয়ে ফেরে। তা হলে একটু স্বস্তি পাই।’’ প্রতিবেশীরা প্রবল ক্ষুব্ধ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামো নিয়ে। মৃতার বান্ধবী মুনমুন বাছার জানান, তিন দিন পরেও জ্বর না নামায় ১৮ অগস্ট বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে রিঙ্কুকে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু রক্ত পরীক্ষার পরে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, রিঙ্কুর রিপোর্টে ডেঙ্গি বা অন্য কোনও পতঙ্গবাহিত রোগ ধরা পড়েনি। তাই ২২ অগস্ট রোগীকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গত সোমবার ফের জ্বরে আক্রান্ত হন রিঙ্কু। সঙ্গে তীব্র মাথাব্যথা, বমি, হাতে-পায়ে যন্ত্রণা এবং গায়ে জ্বালা। এর পরে রক্তপরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়লে বুধবার গভীর রাতে তাঁকে আইডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালে রিঙ্কুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আইসিইউ-এ স্থানান্তরিত করা হয়। সে দিন সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় তাঁর।

Advertisement

অপরিচ্ছন্ন: রিঙ্কু ঘোষের পাড়ায় একটি পুকুরের পাশে জমে আবর্জনা। বিধাননগর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে।—নিজস্ব চিত্র

শনিবার মুনমুন বলেন, ‘‘রিঙ্কুকে যখন আইডি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন প্লেটলেট ছিল ২ লক্ষ ৭১ হাজার। কী এমন হল যে, ওকে বাঁচানো গেল না?’’ সুশান্ত বলেন, ‘‘প্রথম যখন জ্বর এল, তখন আসল রোগ জানতে পারলাম না। বুধবার রাত থেকে চিকিৎসা শুরু হলে এটা হত না। রাতে তো কোনও চিকিৎসাই হয়নি!’’ এ বিষয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের অধ্যক্ষ অণিমা হালদার বলেন, ‘‘রোগীকে সব পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। রোগীর কী হয়েছিল, কী চিকিৎসা করা হয়েছে, সবিস্তার তথ্য স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো হয়েছে।’’

এই চাপান-উতোরের মধ্যে মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে এলাকার একটি পুকুর ও মৃতার বাড়ি লাগোয়া স্কুল চত্বরের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়েরা। সুশান্তবাবুর বাড়ির সীমানা টপকালেই একটি স্কুল। সেই স্কুলের পাশের গলিতে পড়ে প্লাস্টিকের কাপ, বোতল-সহ আবর্জনা। একই পরিস্থিতি পা়ড়ার পুকুরপাড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা মিলি জয়দার বলেন, ‘‘স্কুলের গলিতে যে ভাবে জল জমার ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে, তাতে লার্ভা জন্মানো কি অস্বাভাবিক? ছাত্রদের কথা ভেবেই তো পদক্ষেপ করা উচিত।’’ স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, প্রতি সপ্তাহে স্কুল চত্বর পরিষ্কার করা হয়। পড়ুয়াদেরও সচেতন করা হয়। গলির নর্দমাটি পুর এলাকার মধ্যে পড়ে।

এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় কাউন্সিলর বাসবী দত্ত বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। গত বছর এই অঞ্চলে ডেঙ্গি মারাত্মক আকার ধারণ করার পরে এ বছরের শুরু থেকেই পুরসভা সাধ্যমতো কাজ করেছে। তবে মানুষকেও সচেতন হতে হবে। একে অপরের কোর্টে বল ঠেলে লাভ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন