বিচারের আশায় আজও দোরে দোরে ঘুরছেন মৃতার বাবা

বেসরকারি হাসপাতালের গাফিলতিতে মেয়ে কোমায় চলে গিয়েছে— এই মর্মে আট বছর আগেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন খড়দহের প্রণবেশ চট্টোপাধ্যায়। জানিয়েছিলেন লাগামছাড়া বিলের কথাও।

Advertisement

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭ ০০:২১
Share:

প্রতীকী ছবি।

বেসরকারি হাসপাতালের গাফিলতিতে মেয়ে কোমায় চলে গিয়েছে— এই মর্মে আট বছর আগেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন খড়দহের প্রণবেশ চট্টোপাধ্যায়। জানিয়েছিলেন লাগামছাড়া বিলের কথাও। এই আট বছরে তার বিচার মেলা দূরের কথা, কোনও অনুসন্ধানও হয়নি। অভিযোগ প্রণবেশবাবুর।

Advertisement

ঘটনাচক্রে, অভিযোগের আঙুল ছিল সেই অ্যাপোলো হাসপাতালের দিকেই। যেখানে সম্প্রতি সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় সামনে এসেছে গাফিলতি ও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ। কিন্তু প্রশ্ন, অত দিন আগেই যখন পুলিশ জেনেছিল, অভিযোগও নিয়েছিল, তা হলে তখনই পদক্ষেপ করেনি কেন ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে? বছর চারেক আগে মৃত্যু হয় সেই মেয়ের। বিচারের আশায় আজও দোরে দোরে ঘুরছেন প্রণবেশ। বেসরকারি হাসপাতালগুলির দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি তৎপর হয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। এই অবস্থায় ফের আশায় বুক বেঁধেছেন এক কন্যাহারা পিতা।

আরও পড়ুন

Advertisement

চিকিৎসা-বর্জ্য নিয়ে দূষণ-দোষে এনআরএস, আরজিকর

অ্যাপোলোর গাফিলতিতে, ২৬ বছরের মেয়ে অলিম্পিয়ার মৃত্যুর অভিযোগ করেন খড়দহের প্রণবেশ চট্টোপাধ্যায়। সেই ২০০৯ সালে। প্রণবেশের অভিযোগ, ‘‘সাম্প্রতিকতম সঞ্জয় রায়ের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। বহু দিন ধরেই গাফিলতি ও লাগামছাড়া বিলের চিকিৎসা-ব্যবসা চালাচ্ছে অ্যাপোলো। সেই ২০০৯ থেকে প্রতারিতদের হয়ে এ কথা বলছি।’’

২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হন অলিম্পিয়া। হাসপাতালের শৌচাগারে পড়ে গিয়ে অলিম্পিয়া কোমায় চলে যান বলে অভিযোগ ছিল পরিবারের। ৪০ দিন পরে অ্যাপোলো থেকে মেয়েকে এসএসকেএম-এ নিয়ে যাওয়ার সময় ফুলবাগান থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছিলেন প্রণবেশবাবু। সে সময় বিষয়টি সংবাদপত্রের শিরোনামেও এসেছিল। কিন্তু ফুলবাগান থানায় করা সে অভিযোগে কোনও তদন্তের খবর এখনও পাননি বলে দাবি প্রণবেশবাবুর। ২০১৩-র ১০ জানুয়ারি মারা যান অলিম্পিয়া।

‘‘অ্যাপোলোর পরে দশ মাস এসএসকেএম-এ ভর্তি ছিল মেয়ে। কোমা থেকে ফেরেনি। ২০১০-এর সেপ্টেম্বরে বাড়ি নিয়ে আসি ওকে। পরের বছর, ২০১১-এ ক্রেতাসুরক্ষা আদালতে অ্যাপোলোর বিরুদ্ধে মামলা করি।’’— বলেন প্রণবেশবাবু। বহু টালবাহানার পরে আগামী এপ্রিলে মামলার শুনানি ফের শুরু হবে। প্রণবেশবাবুর জানান, ২০০৮-এ বিয়ে হয়েছিল অলিম্পিয়ার। বিবাহিত মেয়ের হয়ে তাঁর বাবা মামলা করতে পারেন কি না— এ নিয়ে জটিলতা হয়েছিল আদালতে। ২০১৪ সালে অলিম্পিয়ার স্বামীর চিঠি চায় আদালত। সহায়তা করতে রাজি হননি অলিম্পিয়ার আমেরিকা নিবাসী স্বামী দেবব্রত প্রধান। ‘‘মেয়ে মারা যাওয়ার পর থেকেই মেয়ের স্বামী কোনও কিছুতে জড়াতে চায়নি।’’— দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন প্রণবেশবাবু।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে ফের শুনানি শুরুর কথা ৫ এপ্রিল। প্রণবেশবাবুর অভিযোগ, ‘‘দেখভালের অভাবেই এত বড় ঘটনা ঘটেছিল মেয়ের সঙ্গে। জানতাম না, মেয়েকে ফিরে পাব কি না। তবে আর কারও সঙ্গে যাতে এমন না হয়, সেটা ভেবেই আইনি পথ নিয়েছিলাম।’’ ২০১৩ সালে মেয়ের মৃত্যুর পর জেদ আরও বেড়েছে বই কমেনি তাঁর। দাঁতে দাঁত চাপা লড়াই করতে করতে সুবিচারের দিকে তাকিয়ে মেয়ে-হারানো বাবা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন