সভাস্থলে এত আগে দমকল কেন

দমকলমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘এটা ঐতিহাসিক সমাবেশ। কয়েক লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়। যাতে কোনও অঘটন না ঘটে, তা দেখাটা আমাদের দায়িত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ০২:১০
Share:

দর্শক: মঞ্চের কাছে সেই দমকলের গাড়ি। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

সভা আগামী কাল, শুক্রবার। অথচ, মঙ্গলবার থেকেই ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের মঞ্চের কাছে ঠায় দাঁড়িয়ে দমকলের একটি ইঞ্জিন। কোনও অগ্নিকাণ্ডে দমকল সময়ে না পৌঁছলে অপরিসর রাস্তার পাশাপাশি পরিকাঠামো ও লোকাভাবের যুক্তিও দেওয়া হয়। এই অবস্থায় কেন একটি ইঞ্জিনকে এ ভাবে লোকজন-সহ ২৪ ঘণ্টা ওই মঞ্চের কাছে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে, তার যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না দমকলকর্মীদের অনেকেই।

Advertisement

দমকল সূত্রে খবর, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে দাঁড়ানো ওই গাড়িতে তিন শিফ্‌টে কাজ করছেন পাঁচ জন করে কর্মী। অর্থাৎ, দিনে মোট ১৫ জনকে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। দমকল সূত্রের খবর, নিরাপত্তার স্বার্থে এত দিন ২১ জুলাইয়ের আগের রাতে দমকলের গা়ড়ি সভামঞ্চের কাছে রাখা হতো। এ বার পরিবর্তন কেন?

দমকলমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘এটা ঐতিহাসিক সমাবেশ। কয়েক লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়। যাতে কোনও অঘটন না ঘটে, তা দেখাটা আমাদের দায়িত্ব। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সেখানে যাবেন। তাই জরুরি পরিষেবা রাখতেই হবে।’’ এত আগে থেকেই দমকলের গাড়ি মোতায়েন কেন? দমকলমন্ত্রী বলেন, ‘‘নিরাপত্তার জন্য অনেক সময়ে এ রকম ব্যবস্থা রাখতেই হয়।’’

Advertisement

দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, ‘‘নিরাপত্তার জন্যই এই ব্যবস্থা। পুলিশের সুপারিশেই গাড়ি রাখা হয়েছে।’’ কিন্তু, সভা তো শুক্রবার। তা হলে মঙ্গলবার থেকে গাড়ির কী দরকার? দমকলের ডিজি-র জবাব, ‘‘এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলুন।’’ কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার কোনও মন্তব্য করতে চাননি। লালবাজারের এক কর্তার দাবি, এর সঙ্গে পুলিশের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা দমকলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। মধ্য কলকাতার একটি থানার এক অফিসারের মন্তব্য, ‘‘কোনও বারই ওখানে এত দিন আগে থেকে দমকল থাকে না। এ বার কেন এল, বলতে পারছি না।’’

গত দু’দিন দমকলের যে সব কর্মী সভামঞ্চের কাছে ডিউটি করেছেন, তাঁদের এক জন জানিয়েছেন, ধর্মতলার সভামঞ্চ থেকে দমকলের সদর দফতরের দূরত্ব মেরেকেটে তিনশো মিটার। আবার লালবাজার দমকল কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ২০০ মিটার। দমকলের ওই দুই দফতর থেকে মঞ্চস্থলে পৌঁছতে খুব বেশি হলে সময় লাগার কথা পাঁচ মিনিট।

আগাম নিরাপত্তার কাজে দমকল কী করবে, তা নিয়ে কোনও সদুত্তরই দিতে পারেননি দমকলের কর্তব্যরত কর্মীরা। দমকলের এক অবসরপ্রাপ্ত অফিসারের মন্তব্য, ‘‘সভার আগের রাত থেকে দমকলের ইঞ্জিন থাকলে তবু কথা ছিল। কিন্তু এত আগে থেকে একটা গাড়িকে রাখার কোনও প্রয়োজনই ছিল না।’’ দমকলের এক অবসরপ্রাপ্ত অফিসারের বক্রোক্তি, ‘‘এক প্রাক্তন দমকলমন্ত্রী নিজের বাড়ির সামনে জমা জল সরাতে দমকলের গাড়িকে কাজে লাগিয়েছিলেন। এখনকার দমকলমন্ত্রী দলের সভামঞ্চের প্রস্তুতির সময়ে দমকলকে ঠায় দাঁড় করিয়ে রেখে নিজের ক্ষমতা জাহির করলেন।’’

২১ জুলাইয়ের মঞ্চ বাঁধার কাজের জন্য গোটা ধর্মতলা চত্বরই বুধবার সকাল থেকে যানজটের কবলে। এর মধ্যেই বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের একাংশ আটকে রেখেছে দমকলের ইঞ্জিনটি। তাতে যানজট বাড়ছে। ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। আজ, বৃহস্পতিবার এবং আগামী কাল, শুক্রবার আরও ভোগান্তির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন