গিরিশ ঘোষ কার? লড়াই দুই কাউন্সিলরের

পুরসভা সূত্রের খবর, গিরিশ ঘোষের বাড়ির সংস্কার নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা চলছিল। পুরসভার প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট (পিএমইউ) দফতরের তরফে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বাড়িটি সংস্কার করা হবে। স্থানীয় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংসদ তহবিলের টাকায় সে কাজ হবে। কিন্তু রোজভ্যালি-কাণ্ডে সুদীপবাবুর গ্রেফতারির পরে পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই ও নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৪৮
Share:

দ্বন্দ্ব: এই বাড়ি সংস্কারে কে উদ্যোগী হয়েছিলেন, তা নিয়েই চলছে টানাপড়েন। ছবি: রণজিৎ নন্দী

গিরিশ ঘোষ কার?—আপাতত তা নিয়েই ‘লড়াই’ শুরু হয়েছে কলকাতা পুরসভার বাগবাজার অঞ্চলের দুই তৃণমূল কাউন্সিলরের। দু’জনেরই দাবি, নাট্যকারের বাড়ি তাঁরই ওয়ার্ডে। সুতরাং বাড়িটি সংস্কারের দায়িত্ব মূলত তাঁরই। আপাতত গিরিশ ঘোষকে নিয়ে মুখোমুখি ‘সমরে’ পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপি ঘোষ এবং আট নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পার্থ মিত্র।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, গিরিশ ঘোষের বাড়ির সংস্কার নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা চলছিল। পুরসভার প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট (পিএমইউ) দফতরের তরফে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বাড়িটি সংস্কার করা হবে। স্থানীয় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংসদ তহবিলের টাকায় সে কাজ হবে। কিন্তু রোজভ্যালি-কাণ্ডে সুদীপবাবুর গ্রেফতারির পরে পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

সম্প্রতি বাড়ির সংস্কার নিয়ে ফের কথা শুরু হয়েছে। সেই সংস্কারের মূল উদ্যোক্তা কে, তা নিয়েই টানাপড়েন চলছে দুই কাউন্সিলরের। এমনকি, কার ওয়ার্ডে থাকতেন নাট্যকার, তা নিয়েও শুরু হয়েছে দাবি-প্রতি দাবি। আট নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পার্থবাবু বলছেন, ‘‘বাড়ি সংস্কার নিয়ে তো আমিই উদ্যোগী হয়েছি। এ নিয়ে সকলের সঙ্গে কথাও বলছি। সংস্কার শুরু হলেই বোঝা যাবে কে দায়িত্ব নিয়েছেন। কারণ, সংস্কারের ব্যবস্থাপনায় আমার নাম থাকবে।’’ সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপি ঘোষের বক্তব্য, ‘‘ওই বাড়ি সংস্কারে বরাবর আমিই মূল দায়িত্ব নিয়েছি। এখন না হয় সকলে দায়িত্ব নিয়েছেন। ফলকে কার নাম থাকল, তা বড় কথা নয়। সংস্কার করাটা গুরুত্বপূর্ণ। পার্থ আর আমি তো দাদা-ভাই।’’

Advertisement

এ কথাতে যদিও বিতর্কের শেষ নয়। কার ওয়ার্ডে গিরিশ ঘোষের বাড়ি, তা নিয়েও চলছে মতান্তর। বাপিবাবু জানাচ্ছেন, গিরিশ ঘোষের বাড়ি তাঁর ওয়ার্ডেই। বাম আমলে বাড়ির দেখভাল ঠিক মতো হত না, তাই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আট নম্বর ওয়ার্ডের উপর দেওয়া হয়েছিল। পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘পুরসভার হেরিটেজের বই দেখলেই বোঝা যাবে, বাড়িটি আট নম্বর ওয়ার্ডেই। বাপি ঠিক কথা বলছেন না!’’ পুরসভার হেরিটেজ তালিকাও অবশ্য বলছে, গ্রেড ওয়ান তালিকাভুক্ত বাড়িটি আট নম্বর ওয়ার্ডেই।

এর আগেও গিরিশ ঘোষের বাড়ির রং নিয়ে এক বার বিতর্ক হয়েছিল। প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূল পুরবোর্ড নাট্যকারের বাড়ির রং নীল-সাদা করে দিয়েছিল। সর্বস্তরে সমালোচনা শুরু হওয়ায় তা পাল্টে ফের হলুদ রং করা হয়। সুতরাং বাগবাজারের ঐতিহ্যবাহী ওই ভবন নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়।

প্রসঙ্গত, বাড়িটি সংস্কারের পরিকল্পনার সময়ে ঠিক হয়েছিল, পুরো বাড়ি মার্বেলে মোড়ানো হবে। বাড়ির চৌহদ্দিতে লোহার ফেন্সিং দেওয়া হবে। থাকবে আলো, ফোয়ারার ব্যবস্থাও। সেই সঙ্গে ওই নাট্যকারের সমসাময়িক ছ’জন মনীষীর মূর্তি বসানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এ দিকে, পুরসভার পিএমইউ দফতর দুই কাউন্সিলরের এই দাবিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে সব পক্ষ শুধু আলোচনাই করছে। কাজ এগোয়নি। অর্থের সংস্থান হলেই কাজ শুরু হবে। যে যাই দাবি করুন, সংস্কার তো পুরসভাকেই করতে হবে।’’ কিন্তু কবে অর্থের সংস্থান হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও উত্তর মেলেনি। তত দিন দুই কাউন্সিলরের লড়াই জারি থাকবে বলে মনে করছেন পুরকর্তারা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন