ট্রান্সফর্মার ফেটে ভয়াবহ আগুন, আতঙ্ক দমদমে

গোলার মতো একটা শব্দ। পলক ফেলতে না-ফেলতেই লেলিহান আগুনের শিখা প্রায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলল! শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় এই দৃশ্য দেখে তখন দিশাহারা স্থানীয় বাসিন্দারা! আশপাশের দোকানিরা তখন ঝাঁপ ফেলতে ব্যস্ত। বহুতলের নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসছেন লোকজন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৫ ১২:৪৩
Share:

জ্বলছে ট্রান্সফর্মার। সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।

গোলার মতো একটা শব্দ। পলক ফেলতে না-ফেলতেই লেলিহান আগুনের শিখা প্রায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলল! শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় এই দৃশ্য দেখে তখন দিশাহারা স্থানীয় বাসিন্দারা! আশপাশের দোকানিরা তখন ঝাঁপ ফেলতে ব্যস্ত। বহুতলের নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসছেন লোকজন।

Advertisement

ঘটনাস্থল দমদম গোরাবাজারের সেন্ট্রাল জেল মোড়। দমকল জানিয়েছে, বেলা সাড়ে ১১টায় জেল মোড়ের কাছে সিইএসসি-র ৩৩ কিলোভোল্টের একটি ট্রান্সফর্মারে আগুন লাগে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেই আগুনের শিখা প্রায় আটতলা বাড়ির উচ্চতায় উঠে যায়। তবে কোনও হতাহতের খবর মেলেনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগুন লাগার কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রান্সফর্মারটি ফেটে যায়। তার পরে একই ধরনের আরও দু’টি শব্দ শুনেছেন তাঁরা। এবং এই ঘটনায় বড় ধরনের বিপদ এড়িয়েছে জেল মোড়ের আশপাশের অঞ্চল। কেন?

Advertisement

দমকল সূত্রেই বলা হচ্ছে, ট্রান্সফর্মারটির পাশেই একটি বড় মাপের পেট্রোল পাম্প রয়েছে। আগুন ওই পাম্পে ছড়িয়ে পড়লে ভয়ঙ্কর বিপদ হতে পারত। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘আগুন লাগার সময়ে সামনের রাস্তায় একটি এলপিজি সিলিন্ডার ভর্তি ট্রাকও দাঁড়িয়ে ছিল। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই সেটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।’’ যে জায়গায় ট্রান্সফর্মারটি ছিল, তার ঠিক পাশেই একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলও রয়েছে। ঘটনাচক্রে, এ দিন আগুন লাগার আধ ঘণ্টা আগেই স্কুলটি ছুটি হয়ে গিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, স্কুলটি খোলা থাকলে পড়ুয়াদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াত। তাতে বিপত্তি আরও বাড়তে পারত।

আগুনের আঁচে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাশের একটি বহুতল। বিস্ফোরণের অভিঘাতে অনেক ফ্ল্যাটেরই জানলার কাচ ভেঙেছে। কোনও কোনও ফ্ল্যাটের জানলা এবং বাইরে থাকা এসি-র যন্ত্রাংশ পুড়ে গিয়েছে। আগুন যতক্ষণ জ্বলেছে, আতঙ্কিত বাসিন্দারা অনেককেই ঠায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন। ওই বহুতলের প্রোমোটার প্রমোদ অগ্রবাল জানান, আগুনের তাতে বহুতলের একপাশের দেওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ‘‘আরও কী কী ক্ষতি হয়েছে, তা ভাল ভাবে খতিয়ে দেখার পরে বোঝা যাবে,’’ বলছেন প্রমোদ। ওই ফ্ল্যাটের নীচেই একটি অগ্নিসুরক্ষা পরামর্শদাতা সংস্থার অফিস। সেখানকার এক কর্মী পিয়ালী ঘোষ বলেন, ‘‘যে ভাবে আগুন লেগেছিল, তাতে মনে হচ্ছিল এই বাড়িটাও পুড়ে যাবে।’’

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরে ওই বহুতলে ঢুকে দেখা গেল, ভিতরে তখনও প্রচণ্ড তাপ। বহু ফ্ল্যাটই লণ্ডভণ্ড হয়ে রয়েছে। বাসিন্দারা বলছেন, আগুন লাগার পরেই সবাই নিজের নিজের ফ্ল্যাট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। অনেকে নিজের বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারও বার করে এনেছিলেন। বহুতলের এক বাসিন্দা সজল মজুমদার বলেন, ‘‘পুজোর আগে আমরা যে ঘরছাড়া হইনি, সেটাই অনেক সৌভাগ্য!’’ তবে বহুতলের অনেক বাসিন্দাই জানান, ওই ট্রান্সফর্মারটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য সিইএসসি ও প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাবেন তাঁরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে দমদম পুরসভার সামনের কেন্দ্র থেকে দু’টি ইঞ্জিন আসে। কিন্তু জল ছিটিয়ে তারা আগুন আয়ত্তে আনতে পারেনি। তার পরে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি থেকেও একটি ই়ঞ্জিন আসে। পুলিশ জানাচ্ছে, তিনটি ইঞ্জিন আগুন আয়ত্তে আনতে ব্যর্থ হলে খবর যায় কলকাতা বিমানবন্দরের দমকল বাহিনীর কাছে। সম্প্রতি বিদেশ থেকে আনা উন্নত ধরনের দমকল ইঞ্জিন নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় তারা। জলের সঙ্গে ‘ফোম’ ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা শুরু হয়। দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান হরেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘আগুনের ভয়াবহ চেহারা দেখে আমরাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। ওরা সময়মতো না এলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যেতে পারত। ওদের সঙ্গে দমকলও দারুণ কাজ করেছে।’’

দমকল সূত্রের খবর, দমদম পুরসভার সামনে ওই কেন্দ্রটি খুবই ছোট মাপের। খবর পেয়ে ব্যারাকপুর, উত্তর ব্যারাকপুর, বারাসত, বিধাননগরের মতো আশপাশের এলাকা থেকে ১৭টি ইঞ্জিন পাঠানো হয়। দমকলের অধিকর্তা গৌরপ্রসাদ ঘোষ বলেন, ‘‘ট্রান্সফর্মারে আগুন লেগেছে শুনে আমরা ১০০ কন্টেনার ফোম পাঠিয়েছিলাম। জলের সঙ্গে তা মিশিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়। আমরা সকলেই একসঙ্গে কাজ করেছি। তার ফলেই দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে।’’ তবে তিনি জানান, খবর পেয়েই গাড়ি রওনা দিয়েছিল। যানজটের কারণে গাড়ি পৌঁছতে সময় বেশি লাগে।

এ দিন আগুনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশপাশের প্রচুর মানুষ জড়ো হয়ে যায়। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চার দিক। দমকলের পাশাপাশি নেমে পড়েন স্থানীয় পাদ্রীহাটা এলাকার কিছু যুবকও। ভিড় সরাতে শেষে র‌্যাফ নামাতে হয়। ঘটনাস্থলে এসে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার নীরজকুমার সিংহ বলেন, ‘‘কী ভাবে আগুন লাগল, তা দমকল খতিয়ে দেখবে।’’ এ দিন আগুন লাগার পরেই যশোহর রোডে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নাগেরবাজার থেকে বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার রাস্তা আটকে দেওয়ায় যানজট ছড়ায়। তার কবলে পড়ে বাঙুর, লেকটাউনও। বেশ কিছু বাস এবং গাড়ি নাগেরবাজার মোড় থেকে আর এন গুহ রোড দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেও যানজট ছড়ায়। অতিরিক্ত গাড়ি ঢুকে পড়ায় আটকে যায় আশপাশের সরু গলিও।

সিইএসসি ট্রান্সফর্মারে এমন আগুন লাগল কী ভাবে?

সংস্থা সূত্রে খবর, ওই জায়গায় তাদের একটি পুরনো ট্রান্সফর্মার ছিল। দমদম অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও সুরক্ষিত করতে তার বদলে নতুন দু’টি ট্রান্সফর্মার লাগানোর কাজ চলছিল। এ দিন একটি ট্রান্সফর্মার চালু করতেই আগুন লেগে যায়। সিইএসসি-র এক কর্তার দাবি, এ ধরনের ট্রান্সফর্মারে আগুন ঠেকাতে যথেষ্ট সুরক্ষাকবচ থাকে। তা সত্ত্বেও এ দিন কেন আগুন লাগল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

48388bfbe9d9953fea775ecb3414c4/e4bb8c8e71139e0bd4911c0942b15236/dmlkLTE0NDQ5ODA5Njg0NjE1OTc0OQ" style="border:none" width="756px">

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন