বাজির মশলা থেকে বাড়িতে বিস্ফোরণ

পুলিশ জানায়, বাঁশদ্রোণী থানার দক্ষিণ ব্রহ্মপুরের স্টিম লন্ড্রি মোড়ে এ-১৭ নম্বর বাড়িতে এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ বিস্ফোরণ ঘটে। ওই বাড়িতে বাজি তৈরির প্রচুর মশলা মজুত ছিল বলে পুলিশ ও দমকল প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫২
Share:

বিস্ফোরণের পরে আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মীরা। শনিবার, বাঁশদ্রোণীতে। নিজস্ব চিত্র

রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বেআইনি বাজি কারখানা চলা নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন উঠেছে। খোদ কলকাতা পুলিশের এলাকায় শনিবার দুপুরের একটি অগ্নিকাণ্ড সেই প্রশ্নকে আবার উস্কে দিল।

Advertisement

পুলিশ জানায়, বাঁশদ্রোণী থানার দক্ষিণ ব্রহ্মপুরের স্টিম লন্ড্রি মোড়ে এ-১৭ নম্বর বাড়িতে এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ বিস্ফোরণ ঘটে। ওই বাড়িতে বাজি তৈরির প্রচুর মশলা মজুত ছিল বলে পুলিশ ও দমকল প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে। কিন্তু ওই বাড়িতে বাজি তৈরির ছাড়পত্র ছিল কি না, তা এ দিন রাত পর্যন্ত পুলিশ বা দমকল জানাতে পারেনি। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা জানান, বিস্ফোরণের পরে ওই বাড়ির লোকজন অন্যত্র চলে যান। তাঁদের খোঁজ চলছে। সংশ্লিষ্ট সব দফতরের ছা়ড়পত্র ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কিন্তু পুলিশেরই একাংশ জানিয়েছেন, যে ভাবে ওই বাড়িতে এ দিন বিস্ফোরণ হয়, তাতে আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারত। কারণ, ওই বা়ড়িতে যে তুবড়ি, রংমশাল, ফুলঝুরির মতো বাজি তৈরি হত, তা পাড়ার অনেকেই জানতেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, বিভিন্ন বাজি প্রতিযোগিতায় প্রায়ই যোগ দেন বাড়ির মালিক সঞ্জীব ধর। অনেকের কাছ থেকে বাজি তৈরির বরাত পান তিনি।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পরেই দোতলা ওই বাড়িতে আগুন ধরে যায়। গৃহকর্তা সঞ্জীব বা পরিবারের কেউ তখন বাড়িতে ছিলেন না। সঞ্জীব বা়ড়িতে না থাকলেও এলাকায় ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারাই খবর দেন দমকলে ও বাঁশদ্রোণী থানায়। পাড়ার লোকজন প্রথমে পুকুর থেকে জল ও রাস্তার ধারে পড়ে থাকা বালি তুলে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে যান দমকলের অফিসারেরা। চারটি ইঞ্জিন ঘণ্টা আড়াইয়ের চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় নেতাজিনগর থানার পুলিশ ও কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে।

তবে সঞ্জীবের প্রতিবেশীরা জানান, বিস্ফোরণ ও আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, ওই ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির পিছনের একটি বহুতলের ফ্ল্যাটে আগুনের ফুলকি ছিটকে বিছানার চাদর পুড়ে যায়। বিস্ফোরণে ফেটে যায় সঞ্জীবের বাড়ির দেওয়ালও। ওই বাড়ির সামনের বাতিস্তম্ভে লাগানো কেব্‌ল সংযোগের যন্ত্রাংশও ফেটে য়ায়। ওই বাড়ি লাগোয়া অন্য সব বা়ড়ির লোকজন পালাতে থাকেন। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। অনেকে বাজির ধোঁয়ায় কাশতে কাশতে অসুস্থও হয়ে পড়েন।

পাড়ার বাসিন্দা ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সৈকত চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি সঞ্জীবদের বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন। আচমকা বিস্ফোরণের শব্দে দৌড়ে সরে যান। প্রথমে ভেবেছিলেন, ওই বাড়ি লাগোয়া হাইটেনশনের স্টিলের কাঠামো থেকে তার খুলে পড়ে বিস্ফোরণ হয়েছে। পরে তিনি বুঝতে পারেন, আগুন লেগেছে বাজি তৈরির মশলায়। তিনি বলেন, ‘‘ভয়ে ভয়ে বাড়িতে ঢুকে আমরা কয়েক জন জল ঢেলে আগুন নেভাতে শুরু করি। পরে দমকল আসে।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সঞ্জীবদের বাড়ির সামনে এলাকার বাসিন্দারা জড়ো হয়েছেন। বাড়ি থেকে তখনও কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বাড়ির বিদ্যুতের সংযোগ কাটছেন দমকল ও সিইএসসি-র কর্মীরা। দমকলের এক অফিসার জানান, কমবেশি সত্তর কিলোগ্রাম বাজির মশলা মজুত ছিল একতলা ও দোতলায়। বড় বড় কয়েকটি ড্রামে বিভিন্ন ধরনের মশলা ছিল। গন্ধক, অ্যালুমিনিয়াম চূর্ণ, সোরা ছাড়া আরও কয়েক ধরনের মশলা ছিল বলে দমকলের ওই অফিসার জানান। বেলা আড়াইটে নাগাদ আগুন কিছুটা আয়ত্তে এলে দমকলের কর্মীরা মশলাবোঝাই ড্রামগুলি এলাকারই একটি পুকুরে ফেলে দিয়ে আসেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন