কারখানায় তখন চলছিল পাটের বস্তা তৈরির কাজ। দ্বিতীয় শিফটে কাজ করছিলেন প্রায় শ দু’য়েক কর্মী। আচমকাই আগুনের ফুলকি দেখা যায় একটি মেশিনে। নিমেষে ধরে যায় সেটির পাশে থাকা অন্য সব মেশিন। গোটা কারখানায় পাট ও পাটের বস্তা মজুত থাকায় দাউদাউ করে আগুন ছড়াতে থাকে।
মঙ্গলবার দুপুর ২টো নাগাদ এ ভাবেই পুড়ে গেল ফুলবাগান থানার নারকেলডাঙা মেন রোডের শতাব্দীপ্রাচীন ক্যালকাটা জুটমিলের একটি অংশ। কর্মীরাই ছুটে এসে পাশের অফিসের লোকজনকে খবর দেন। দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন এসে প্রায় চার ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। হতাহতের কোনও খবর নেই।
আগুন নিভতে দেরি হওয়ায় চটকলের কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এক কর্মী সুভাষ পুরকাইতের অভিযোগ, ‘‘আগুন নেভানোর ৩-৪টি গ্যাস সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলি কোনও কাজই করেনি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, তিনটি শিফটে ওই কারখানায় প্রায় ১১০০ কর্মী কাজ করেন। কর্মীদের আরও অভিযোগ, ‘‘এখানে প্রতি মাসেই ছোটখাটো আগুন লেগে থাকে। পাটের মতো দাহ্য পদার্থ মজুত থাকলেও কোনও অগ্নি-নিরোধক ব্যবস্থা নেই। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’’ অভিযোগ স্বীকার করে চটকলের প্রশাসনিক ম্যানেজার গুরুদাস মিত্র বলেন, ‘‘আড়াই বছর বন্ধ থাকার পরে ছ’মাস আগে কারখানাটি ফের চালু হয়েছে। মালিকানাও হাতবদল হয়েছে। শীঘ্রই নতুন করে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরি হবে।’’
বাধা: জলশূন্য দমকলের পাইপ। পরে পাশের একটি পুকুর থেকে জল এনে নেভানো হয় আগুন। —নিজস্ব চিত্র।
আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ডিসি (ইএসডি) দেবস্মিতা দাস-সহ ফুলবাগান থানার আধিকারিকেরা। দুপুর আড়াইটে নাগাদ মানিকতলা কেন্দ্র থেকে
গাড়ি পৌঁছে কাজ শুরু করলেও সাড়ে তিনটে নাগাদ ওই ইঞ্জিনের জল শেষ হয়ে যায়। পাশাপাশি কারখানার যে অংশে আগুন লেগেছিল, সেখানকার রাস্তা সরু হওয়ায় দমকলের অন্য ইঞ্জিনগুলিও প্রথমে পৌঁছতে সমস্যায় পড়ে। শেষমেশ প্রায় আধ ঘণ্টা পরে পাশের একটি পুকুর থেকে পাইপে করে জল এনে ফের আগুন নেভানোর কাজে হাত দেন দমকলকর্মীরা।
কারখানার কর্মীরা অভিযোগ করেন, দমকল দেরিতে এসেছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে মানিকতলা দমকল কেন্দ্রের ওসি রামকৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘‘আড়াইটে নাগাদ খবর পেয়েই আমরা পৌঁছই। আমাদের তরফে কোনও দেরি হয়নি।’’ লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘কারখানাটির ফায়ার লাইসেন্স ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’