আর জি কর

হাসপাতালে আগুন, ফের আতঙ্কের ছবি

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের আতঙ্কের ছায়া ফের কলকাতায়। গত সপ্তাহে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের লাইব্রেরিতে আগুন লেগেছিল। সোমবার আগুন লেগে আতঙ্ক ছড়াল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৩
Share:

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের আতঙ্কের ছায়া ফের কলকাতায়। গত সপ্তাহে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের লাইব্রেরিতে আগুন লেগেছিল। সোমবার আগুন লেগে আতঙ্ক ছড়াল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

Advertisement

কী হয়েছিল এ দিন?

হাসপাতালের তিনতলায় রক্ত পরীক্ষা করাতে এসেছিলেন রোগীরা। সোমবার, কাজের প্রথম দিন হওয়ায় তখন দু’শোরও বেশি রোগী এবং তাঁদের পরিবারের লোকেদের ভিড়ে থিকথিক করছে সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি বিভাগের সামনের চত্বর। হঠাৎই অপারেশন থিয়েটারের দিকের বারান্দা থেকে ‘আগুন, আগুন’ চিৎকার করে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন কয়েক জন যুবক এবং ডাক্তার। ওই দৃশ্য দেখে পড়িমড়ি করে দৌড়তে শুরু করেন প্রায় ৩০০ লোক। কেউ বুকে নিজের সন্তানকে আগলে, কেউ বা সামনের মানুষটিকে ধাক্কা দিয়ে চিৎকার করে দৌড়তে শুরু করেন। পায়ের জুতো ছিঁড়ে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান কয়েক জন বৃদ্ধ।

Advertisement

হাসপাতালের এক নিরাপত্তারক্ষী জানান, এ দিন সকাল সওয়া দশটা নাগাদ জরুরি বিভাগের তিন তলায় চোখের অপারেশন থিয়েটারের সামনে থাকা মেডিক্যাল বর্জ্যে আগুন লাগে। সেখান থেকে ধোঁয়া বেরোতেই গোটা চত্বর জুড়ে আতঙ্ক ছড়ায়। নিরাপত্তারক্ষীরা অবশ্য হাসপাতালের অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র দিয়েই আগুন নিভিয়ে ফেলেন। দমকল সূত্রের খবর, চারটি ইঞ্জিন পৌঁছলেও তার আগেই আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু ততক্ষণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সেই আতঙ্কের প্রভাব চলে আসে নীচের জরুরি বিভাগ পর্যন্ত। আগুন ভয়াবহ না হলেও আতঙ্কের পারদ যে চ়ড়েছিল, তা মানছেন হাসপাতালের রক্ষীরাই।

বসিরহাট থেকে রক্ত পরীক্ষা করাতে এসেছিলেন বছর ষাটের আব্দুল সাত্তার মণ্ডল। তিনি জানান, রক্ত পরীক্ষা করানোর লাইনে সবে দাঁড়িয়েছেন। তখনই আগুন-আগুন চিৎকার করে উল্টো দিক থেকে হুড়মুড়িয়ে লোকেরা এসে তাঁকে ধাক্কা দেয়। আব্দুল বলেন, ‘‘আমিও দৌড়ে নামতে থাকি। তখনই পড়ে যাই। আমরা হাতে-পায়ে চোট লাগে, জামা ছিঁড়ে যায়। কোনওক্রমে নিজেকে সামলাই। মাটিতে পড়ে গেলে পায়ের চাপে মরেই যেতাম।’’

বসিরহাট থেকে কল্পনা দে তাঁর বছর তিনেকের নাতিকে কোলে নিয়ে সবেমাত্র তিনতলায় উঠছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘উপর থেকে নেমে আসা ভিড়ের ধাক্কায় দেওয়ালে চেপে যাই। নাতি আমার বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ভয়ে কাঁদতে শুরু করে। কোনও ভাবে ওকে চেপে ধরে নেমে আসি।’’ হাসপাতালের উপর থেকে নীচে নামার জন্যে র‌্যাম্প আছে। সিঁড়ি দিয়ে সকলকে নামতে হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত বলেও আশঙ্কা রোগীর পরিজনদের। শেষে ১১টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

যেখানে পড়ে থাকা বর্জ্যে এ দিন আগুন লাগে, তার পাশেই রয়েছে ট্রান্সফর্মার। উল্টো দিকে চোখের অপারেশন থিয়েটার। পাশে রোগীদের ওয়ার্ড। এমন একটি জায়গায় আগুন ছড়ালে তা ভয়াবহ আকার নিতে পারত বলে স্বীকার করেছেন আর জি করের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অনুমান, ওই বর্জ্যে কেউ জ্বলন্ত কিছু ফেলেছিল। তা থেকেই এমন হয়েছে। কে এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করল, তা খুঁজে বার করার চেষ্টা হবে। আমাদের নিরাপত্তারক্ষীদেরও আরও সতর্ক হতে বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন