জতুগৃহ: বুধবার গভীর রাতে এ ভাবেই আগুন লেগে যায় গাড়ি কাটাইয়ের একটি কারখানায়। নিজস্ব চিত্র
সকালে স্থানীয় কাউন্সিলর গিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের বিপদ হতে পারে বলে পুরনো, বাতিল গাড়ির স্তূপ সরাতে বলেছিলেন। সে কথায় কান দেননি ব্যবসায়ীরা। বিপদ মালুম হল বুধবার গভীর রাতে। সিঁথির চুনিবাবুর বাজারের কাছে আগুন লেগে ছাই হয়ে গেল ভাঙা গা়ড়ির স্তূপ। দমকলের ১০টি ইঞ্জিন গিয়ে দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। কেউ হতাহত না হলেও ভবিষ্যতে জনবহুল এলাকার মধ্যে ওই গাড়ি কাটাইয়ের ব্যবসার জন্য যে কোনও সময়ে বিপদ ঘটতে পারে বলে মনে করছেন দমকলের একাংশ।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও ওই ব্যবসায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের হয়নি। স্থানীয় সিঁথি থানা নাকি জানেই না ওই ব্যবসা কারা চালান। দমকলের ডিভিশনাল অফিসার (উত্তর কলকাতা) কমলকুমার নন্দী জানান, আগুন লাগার সময়ে ঘটনাস্থলে ওই ব্যবসায়ীদের কাউকে দেখা যায়নি। কারা সেখানে গাড়ি রাখেন, তা জানাতেপারেনি স্থানীয় থানাও। কলকাতা পুলিশের ডিসি (উত্তর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলেছেন, ‘‘দমকল অভিযোগ দায়ের করলে নিশ্চয়ই মামলা হবে।’’ দমকল সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে তাদের ওসির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হতে পারে।
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর পুষ্পালি সিংহ বৃহস্পতিবার জানান, আজ, শুক্রবার স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান তরুণ সাহা এবং প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে বৈঠক করে এ ব্যাপারে হেস্তনেস্ত করবেন। পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ যে ওই ব্যবসায়ীদের পাশে রয়েছে, সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন দমকল-কর্তারাও। তাঁরা বলছেন, পুলিশের সহযোগিতা না মিললে দমকলের পক্ষে ওই ব্যবসা আটকানো সম্ভব নয়।
এলাকায় এমন কারখানা আরও রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে। সিঁথিতে।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, ওই গাড়ি কা়টাইয়ের ব্যবসা প্রকাশ্যেই চলে। অন্তত ছ’টি এমন কারখানা রয়েছে এলাকায়। পুরনো গাড়ি থেকে যন্ত্রাংশ খুলে এলাকার কোন কোন দোকানে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়, তাও তাঁদের অজানা নয়। কিন্তু এ সব খবর স্থানীয় থানায় কেন পৌঁছয় না, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। পুষ্পালিদেবী বলেন, ‘‘স্থানীয় ফুলবাগান মোটরবাজারের ব্যবসায়ীদের আমি বারবার এই গাড়ির স্তূপ সরাতে বলেছি। এলাকার স্কুলপড়ুয়া, বাসিন্দাদের সমস্যা ও বিপদের আশঙ্কার কথা থানায় জানিয়েছি। কিন্তু সুরাহা হয়নি।’’
পুলিশের একাংশও বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী গা়ড়ি কাটাইয়ের ব্যবসার ক্ষেত্রে পুলিশি নজরদারি প্রয়োজন। তা না হলে পুরনো বাতিল গাড়ির আড়ালে চোরাই গাড়ি কেটে যন্ত্রাংশ বিক্রির ব্যবসাও চলতে পারে। লালবাজারের অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশকর্তা জানান, ২০০৮ সাল নাগাদ সিঁথি থানা নিয়ম জারি করেছিল, ওই কারখানাগুলিতে গাড়ি কাটাইয়ের জন্য এলে আগে থানায় জানাতে হবে। পুলিশ বাতিল গা়ড়ির কাগজপত্র খতিয়ে দেখে ছা়ড়পত্র দিলে তবেই গাড়ি ভাঙার অনুমতি মিলবে। নিয়ম না মানায় কয়েকটি কারখানা বন্ধও করে দেওয়া হয়। ভয়ে কয়েকটি কারখানা সাময়িক ভাবে ব্যবসা বন্ধ করেছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে ফের সেই ব্যবসা শুরু হয়।
পরিবেশবিদদের অনেকে বলছেন, যে ভাবে প্রকাশ্যে ওই গাড়ি কাটাইয়ের ব্যবসা চলে তাতে বাতাসে ধুলো এবং ধাতুর গুঁড়ো-সহ নানা দূষিত জিনিস মেশে। তার ফলে এলাকার বায়ুদূষণ বেড়ে বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যহানি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে ষোলো আনা।
শুধু অগ্নিকাণ্ড বা দূষণ নয়, প্রশ্ন উঠেছে বাতিল গাড়ির ঢিপির ভিতরে জমে থাকা জলে মশার বংশবৃদ্ধি নিয়েও। সদ্য ডেঙ্গির প্রকোপ সবে কাটিয়ে উঠেছে কলকাতা। গত বছর ডেঙ্গির ভরা মরসুমে উত্তর শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গির হানা হয়েছে, মারাও গিয়েছেন অনেকে। এই ধরনের ব্যবসা চলতে থাকলে আগামী দিনে ফের ওই এলাকায় ডেঙ্গির বাহক এডিস মশার বংশবৃদ্ধি হবে বলেই দাবি করছেন অনেকে। তা হলে কি এই ব্যবসার উপরে পুরসভারও নজরদারি নেই? পুষ্পালিদেবী বলেন, ‘‘আমি নিয়মিত নজরদারি চালাই। পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগকেও জানিয়েছিলাম। সাহায্য মেলেনি।’’