দমদমের স্কুলে আগুন, মৃত ১

গভীর রাতে আগুনে পুড়ে গেল একটি স্কুল। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে কেয়ারটেকারের। মৃতের নাম লক্ষ্মীকান্ত বেরা। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে দমদমের হনুমান মন্দিরের কাছে। দমকলের অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই এই আগুন। দমকল তবু দমদম থানায় একটি জেনারেল ডায়েরি করে স্কুলের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৪১
Share:

দুর্ঘটনার পরে। রবিবার, দমদমে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

গভীর রাতে আগুনে পুড়ে গেল একটি স্কুল। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে কেয়ারটেকারের। মৃতের নাম লক্ষ্মীকান্ত বেরা।

Advertisement

শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে দমদমের হনুমান মন্দিরের কাছে। দমকলের অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই এই আগুন। দমকল তবু দমদম থানায় একটি জেনারেল ডায়েরি করে স্কুলের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছে।

স্কুল কর্তৃপক্ষের অবশ্য অভিযোগ, পরিকল্পনা করেই স্কুলে আগুন লাগানো হয়েছে। ঘটনায় স্থানীয় একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তেরা যদিও পাল্টা দায় চাপিয়েছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

Advertisement

শনিবার অনেক রাতে দমদমের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে হনুমান মন্দিরের কাছে ওই বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে আগুন লাগে। চারদিক ধোঁয়ায় ভরে যায়। খবর পেয়ে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থলে যান দমদম থানার আধিকারিকেরাও। প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু ততক্ষণে স্কুলের অধিকাংশই পুড়ে যায়।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সেই স্কুলের মালিক সাজিদ কৃষ্ণান কুট্টি। পরিচালন সমিতির অন্যরাও ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা স্কুলের কেয়ারটেকার লক্ষ্মীকান্তের কথা জানান। স্কুলেই একটি ঘরে ঘুমিয়েছিলেন লক্ষ্মীকান্ত। পুলিশ জানায়, সেখানেই অগ্নিদগ্ধ হন তিনি।

লক্ষ্মীকান্তের দেহ আটকে রেখে স্কুলের কাছেই কার্যত বিক্ষোভ শুরু করেন কর্তৃপক্ষ। দেহ উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসা শুরু হয়। রীতিমতো ধস্তাধস্তির পরে লক্ষ্মীকান্তের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে মারধর, দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ জানায়, তখন লক্ষ্মীকান্তের দেহ উদ্ধার করা জরুরি ছিল।

স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এটি নিছক কোনও অগ্নিকাণ্ড নয়। আগুন লাগানো হয়েছে। স্কুলের পিছনের দিকে এমারজেন্সি গেট বাইরে থেকে তালাবন্ধ ছিল। তাই এটি পরিকল্পিত ঘটনা বলেই তাঁরা মনে করছেন।

কিন্তু শুধু একটি কারণেই কি স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন অভিযোগ? খোদ স্কুলের মালিক সাজিদই তা নিয়ে খোলসা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, যে জমিতে স্কুলটি রয়েছে, সেটি দখল করতে চাইছেন স্থানীয় মন্দিরের পুজারী হরিদ্বার তিওয়ারী। ওই জমিতে প্রোমোটিংয়ের জন্য স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা ও এক প্রোমোটারকে সঙ্গে নিয়ে দখলের পরিকল্পনা করছেন তিনি। তাঁরাই আগুনের ঘটনার পিছনে রয়েছে। দমদম থানায় লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

পুজারীর পাল্টা দাবি, ওই জমির মালিকানা তাঁদেরই। জোর করে সেখানে স্কুল তৈরি করেছেন সাজিদরাই। দু’পক্ষই মালিকানা দাবি করেছেন। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

এ দিকে এই ঘটনাকে ঘিরে এ দিন সকালে স্কুলের সামনে উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় গেলে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্কুল কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে চলে আসেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়।

দেবাশিসবাবুর অভিযোগ, বাম আমলে তৈরি ওই স্কুল ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ আছে। স্কুলটি কার্যত জতুগৃহ। সরকারি নিকাশিনালার উপরে স্কুলের যাতায়াতের রাস্তা হয়েছিল। দেখা গেল, টিন চাল দেওয়া দোতলা ওই স্কুলে রয়েছে পাঁচটি এসি মেশিন।

তবে বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত দক্ষিণ দমদম পুরসভা কেন ব্যবস্থা নিল না? দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘স্কুলটিকে হস্তান্তর করার জন্য মৌখিক ভাবে বলা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ শোনেননি। প্রায় ৬০০ ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবেই প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।’’

স্কুল চলাকালীন এমন ঘটলে কী হত? কেন দমকলে অভিযোগ জানানো হয়নি? দক্ষিণ দমদম পুরবোর্ডের কাছে এর কোনও সদুত্তর মেলেনি।

আপাতত দু’দিন স্কুল বন্ধ রাখার জন্য দমকল ও পুলিশের কাছে আবেদন করেছে পুরসভা। কর্তৃপক্ষের দাবি, স্কুল বন্ধ করা হলে, সামনে মাঠেই ক্লাস হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন