এ যেন ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাওয়ার জোগাড়!
এক দিকে প্রবল বৃষ্টি। অন্য দিকে শিশির। আর তার জেরে দেবীপক্ষের শুরুই হচ্ছে ফুলের আগুন দাম দিয়ে। গত কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে পদ্ম-সহ বিভিন্ন ফুলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। সেই আগুন দামের ফুল হাতে নিয়েই আজ, মহালয়ের ভোরে গঙ্গায় তর্পণ করতে নামবেন এ শহরের বহু মানুষ।
মল্লিকঘাট ফুল বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, মহালয়ার দিন কয়েক আগে থেকেই সব ধরনের ফুলের দাম বেড়ে গিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, প্রাকৃতির দুর্যোগের জেরে বিভিন্ন জেলায় এ বছর ফুল চাষের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তাই মহালয়ার পর থেকে দুর্গাপুজো পর্যন্ত ফুলের দাম নিম্নমুখী হওয়ার আশা তাঁরা করছেন না।
চাষিরা জানান, শিশির পড়ার কারণে বিভিন্ন জায়গায় পদ্মফুলও নষ্ট হচ্ছে। যে কারণে দিন পনেরো আগে থেকেই বিভিন্ন হিমঘরে পদ্ম মজুত করতে শুরু করেছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, অষ্টমীর দিন পদ্মফুলের চাহিদা সব চেয়ে বেশি থাকে, তাই আগে থেকে মজুত না করলে বাজারে পদ্মফুল সরবরাহে সমস্যা তৈরি হবে। ব্যবসায়ীরা জানান, অষ্টমীর দিন সারা রাজ্যে এক কোটির মতো পদ্মের চাহিদা থাকে। ফলে এখন থেকেই হিমঘরে পদ্ম মজুত করতে হচ্ছে।
সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে জানান, রাজ্যে সবই ব্যক্তিগত হিমঘর। ব্যবসায়ীদের চড়া দাম দিয়েই সেখানে ফুল মজুত করতে হয়। যাতে পুজোর সময়ে বাজারে ফুলের ঘাটতি না হয়। তিনি বলেন, ‘‘অন্যান্য ফুল প্রতিদিন চাষিরা বাজারে নিয়ে আসতে পারবেন। কিন্তু শিশির পড়া শুরু হয়ে যাওয়ায় পদ্মফুল ইতিমধ্যেই নষ্ট হতে শুরু করেছে। তাই এখন থেকেই তা সংগ্রহ করতে হয়। তাই ফুলের দাম ঊর্ধ্বমুখী।’’
ঠিক কতটা করে দাম বেড়েছে?
মল্লিকঘাটের ব্যবসায়ীরা জানান, ঝুরো রজনীগন্ধা দিন কয়েক আগেও প্রতি কিলো ৫০ টাকা ছিল। বৃহস্পতিবার তা বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। লাল গাঁদার কুড়িটি মালার দাম এক ধাক্কায় ৫০ থেকে বেড়ে ১০০ টাকায় উঠে এসেছে। এক-একটি পদ্মের দাম চার টাকা থেকে বেড়ে আট টাকা হয়েছে। পুজোর সময়ে যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
চাষিরা জানান, ঝুরো ফুল হিসেবে অঞ্জলিতে ব্যবহৃত গাঁদা, দোপাটি, অপরাজিতা, রজনীগন্ধার মতো ফুলগুলি মূলত মেদিনীপুরে চাষ হয়। তবে উত্তর ২৪ পরগনারও কিছু জায়গায় এর চাষ হয়। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ওই সব গাছের গোড়ায় জল দাঁড়িয়ে বহু গাছ মারা গিয়েছে। ফলে ক্ষতি হয়েছে ফুল চাষের। পদ্ম মূলত হাওড়া ও বর্ধমান অঞ্চলের বিভিন্ন জলাশয় আর নয়ানজুলিতে চাষ হয়। ওই সব জায়গায় শিশিরের কারণে পদ্ম নষ্ট হতে শুরু করেছে।