সাত দিনেই বাড়ি ফিরবেন, ফুরফুরে ফরাসি দম্পতি

আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে ঘিরে ধরা দুশ্চিন্তার মেঘ কেটে গিয়েছে। অচেনা, অজানা শহরে বসে ভাষার বাধা পেরিয়েই সোমবার ‘কুছ পরোয়া নেহি’ হাসিটা ফিরে এসেছে আনেত লা ক্রোয়া-র মুখে।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ ও সোমঋতা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১৭
Share:

হাসপাতালে জ্যঁ ও আনেত। সোমবার। ছবি: শৌভিক দে

আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে ঘিরে ধরা দুশ্চিন্তার মেঘ কেটে গিয়েছে। অচেনা, অজানা শহরে বসে ভাষার বাধা পেরিয়েই সোমবার ‘কুছ পরোয়া নেহি’ হাসিটা ফিরে এসেছে আনেত লা ক্রোয়া-র মুখে। ভিয়েতনাম সফর সেরে ফেরার পথে বিমানে অসুস্থ হয়ে পড়া স্বামী জ্যঁ লা ক্রোয়া এক সপ্তাহেই সুস্থ হয়ে প্যারিস ফিরতে পারবেন— আশ্বাস দিয়েছেন কলকাতার ডাক্তারেরা। এমনকী এ শহরের ডাল-ভাত-মাছও দিব্যি মনে ধরেছে প্রবীণ ফরাসি দম্পতির।

Advertisement

হাসপাতালটা বেশ পছন্দ হয়েছে জ্যঁ-আনেতের। খাওয়াদাওয়াও দিব্যি। সঙ্গের মালপত্র নেই। সে সব প্যারিসে পৌঁছে গিয়েছে। থাকার মধ্যে রয়েছে দু’টি হাতব্যাগে দু’তিনটি পোশাক, টুথব্রাশ-সহ প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী। তাতে বিচলিত নন আনেত। বাকি বড় ব্যাগগুলো প্যারিসে নামিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেবেন বলেছেন সঙ্গী পর্যটকেরা। কথা হয়েছে মেয়েদের সঙ্গেও। তাঁদের উল্টে ভয় পেতে বারণ করেছেন জ্যঁ আর আনেত। মোটে কয়েকটা দিনের তো ব্যাপার! হাতব্যাগে যেটুকু জামা বা জরুরি জিনিসপত্র রয়েছে তাতে দিব্যি এক সপ্তাহ চলে যাবে।

প্যারিসের ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে তুর শহর। সেখানকার বাসিন্দা জ্যঁ (৬৬) ও আনেতের (৬৫) বিয়ে হয়েছে ৪৭ বছর হল। সফ্‌টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জ্যঁ এবং এক বৃদ্ধাবাস দেখভালে নিযুক্ত আনেত, দু’জনেই এখন অবসরপ্রাপ্ত। সন্তানেরাও সুপ্রতিষ্ঠিত। বৃদ্ধ দম্পতি তাই নিশ্চিন্তেই ঘুরে বেড়ান দেশ-বিদেশ। বড় একটা দল থাকে। সঙ্গে থাকে দোভাষী গাইড। কারণ ফরাসি ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেন না জ্যঁ আর আনেত। সপ্তাহ দুয়েক আগে বেড়াতে গিয়েছিলেন ভিয়েতনামে। এশিয়ায় এই প্রথম আসা।

Advertisement

গত ১৭ বছর ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন জ্যঁ। ইনহেলারও নেন। নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যান। তবে বেড়াতে গিয়ে বড় ভোগান্তি এই প্রথম। গত বুধবার জ্যঁ-র শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। সেটা কমেও যায়। শনিবার রাতে ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি থেকে ফেরার উড়ানে ওঠার পরে ফের বিপত্তি শুরু। বিমান ছাড়ার ঘণ্টা দুয়েক পরে শৌচালয়ে গিয়েছিলেন জ্যঁ। তিনি ফিরছেন না দেখে আনেত খোঁজ করতে যান। কিন্তু শৌচালয়ের দরজায় ধাক্কা দিয়েও জ্যঁ-র সাড়া না পেয়ে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন তিনি। বিমানসেবিকারা এসে বাইরে থেকে দরজা খুলে দেখেন, অসুস্থ হয়ে প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছেন জ্যঁ।

সহযাত্রী এক চিকিৎসকের পরামর্শে বিমানটি মুখ ঘুরিয়ে কলকাতায় নেমে আসে এর পরেই। শনিবার রাত থেকে জ্যঁ নাগেরবাজারের আইএলএস হাসপাতালের আইটিইউ-য়ে ভর্তি। তখন থেকেই স্বামীর পাশে ঘুরঘুর করে যাচ্ছেন আনেত। শনিবার রাতভর কেটে গিয়েছে আইটিইউ-য়েই। রবিবার
রাতটা ঘুমিয়েছেন চিকিৎসকদের বিশ্রামের ঘরে।

ভাষা-বিভ্রাটে চিকিৎসক এবং বাকিদের সঙ্গে কথা বলতে, মনের ভাব বোঝাতে বেশ অসুবিধাই হচ্ছে। খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন কলকাতায় ফরাসি দূতাবাসের অফিসার অলিভিয়ের কাস্যাঁ। চিকিৎসক এবং জ্যঁ-আনেতের মধ্যে সোমবার সকাল থেকে তিনিই দোভাষীর কাজ চালিয়েছেন। অলিভিয়ের বলেন, ‘‘বিদেশ মন্ত্রককে অনুরোধ করে মঙ্গলবার পর্যন্ত আনেত-জ্যঁ-এর ভারতে থাকার ভিসা পাওয়া গিয়েছিল। আমরা আরও এক সপ্তাহের জন্য ওই ভিসা বাড়ানোর আবেদন করছি। আনেতের সঙ্গে যথেষ্ট টাকা রয়েছে। ফলে হাসপাতালের খরচ, এখান থেকে প্যারিসের বিমান টিকিট তিনি কাটতে পারবেন। এ সব টাকা তিনি দেশে ফিরে বিমা সংস্থার কাছ থেকে পেয়ে যাবেন।’’

নাগেরবাজারের ওই হাসপাতালের সিওও চিকিৎসক নিবেদিতা চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানান, তিন চিকিৎসক অরবিন্দ ওঝা, প্রসেনজিৎ সরকার এবং অনির্বাণ সরকারকে নিয়ে গড়া মেডিক্যাল টিম জ্যঁ-র দেখভাল করছেন। চিকিৎসক ওঝা বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্ট ছাড়াও ডায়াবেটিস সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে জ্যঁ-এর। অক্সিজেন চলছে। বাই-প্যাপ মেশিনেরও সাহায্য নিতে হচ্ছে।’’

ডাক্তারবাবুরা বলেছেন, এক সপ্তাহ পরেই প্লেনে চড়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন জ্যঁ। আনেত তাই এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বুঝলাম, এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের কথা শুনেই চলা উচিত।’’

জ্যঁ নিজেও বলছেন, ‘‘এখন অনেকটা ভাল আছি। সে দিন যা অবস্থা হয়েছিল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন