ছ’টা ছানাকে খেয়ে হজম করার পরে বাকি একটাই সাত বার দেখিয়ে শিয়াল পণ্ডিত আশ্বস্ত করেছিল কুমিরকে। কুমির মনে করেছিল, তার সাতটা ছেলেই বহাল তবিয়তে আছে। দু’পেয়ে জালিয়াতেরাও সেই কায়দা শিখেছে অনেক দিন। কখনও একই ফ্ল্যাট, কখনও বা একই জমি-বাড়ি দেখিয়ে জালিয়াতি করা হতো। এ বার ট্রেলার বা বিশেষ ধরনের মালবাহী গাড়িকে কুমির ছানার মতো দেখিয়ে জালিয়াতি চক্রের হদিস পেল কলকাতা পুলিশ। পুলিশের দাবি, মধ্যবয়স্ক এক দম্পতি এই জালিয়াতি চক্রের প্রধান অভিযুক্ত! অভিযোগ, এই ভাবে জালিয়াতি করে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাঁরা।
এই ঘটনায় বিদিশা দে নামে বছর পঞ্চাশের মহিলাকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আগেই তাঁর স্বামী শুভাশিস দে (৫২) ধরা পড়েছিল। তাঁদের বাড়ি মোমিনপুরে। দু’জনে এখন পুলিশি হেফাজতে। দম্পতির ১৯ বছরের ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। ওই জালিয়াতির চক্রে জড়িত
সন্দেহে আরও এক দম্পতির খোঁজ করছেন তদন্তকারীরা।
লালবাজার সূত্রে খবর, ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি একটি বেসরকারি আর্থিক সংস্থা (এনবিএফসি) মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করে। রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে ওই সংস্থার অফিস রয়েছে। পুলিশ জানায়, গত তিন বছর ধরে ৩০টি ট্রেলার দেখিয়ে ওই সংস্থার কাছ থেকে পরিবহণ ব্যবসার নামে দেড় কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল। কিন্ত বাস্তবে ট্রেলারের সংখ্যা মাত্র চারটি!
থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে মুচিপাড়া থানার সাব-ইনস্পেক্টর রাজীব চট্টোপাধ্যায়কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ দেড় কোটি টাকার জালিয়াতির হদিস পেয়েছে। তবে পরবর্তী কালে জালিয়াতির অঙ্কটি আরও বাড়তে পারে বলে পুলিশের আশঙ্কা। পুলিশ জানিয়েছে, একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক ও চারটি এনবিএফসি ওই জালিয়াতির শিকার হয়েছে।
তা হলে ৩০টি ট্রেলার এল কোথা থেকে?
তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, ব্যাঙ্ক ও বেসরকারি আর্থিক সংস্থাগুলিকে চারটি ট্রেলারের নম্বর প্লেট বদলে জাল নম্বর প্লেট বসিয়ে দেখানো হতো। কাগজপত্রও সেই ভাবে তৈরি করা হয়েছিল। ঋণ দেওয়া হয় রেজিস্ট্রেশন নম্বর অর্থাৎ নম্বর প্লেটে যে নম্বর থাকে, তার ভিত্তিতে। একটি গাড়ির জন্য পরিবহণ ব্যবসার ঋণ এক বারই দেওয়া হয়। তাই নম্বর প্লেট পাল্টে পাল্টে একই গাড়িকে অন্য গাড়ি বলে দেখিয়ে এক-এক বার এক-একটি বেসরকারি আর্থিক সংস্থা ও ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল। ইঞ্জিন নম্বর দেখতে গেলে অবশ্য বিষয়টি ধরা পড়ে যেতো। তবে সেটা দেখা হয়নি।
পুলিশ সূত্রে খবর, মোমিনপুরের বাসিন্দা দে দম্পতি পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে বহুকাল যুক্ত। ২০১৩-এ রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের ওই এনবিএফসি থেকে দম্পতি চারটি
ট্রেলার দেখিয়ে ২০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু ৭ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা ঋণ শোধ করার পর বাকি টাকা দেওয়া হয়নি। তার পর ওই চারটি ট্রেলারের নম্বর প্লেট বদলে দিয়ে অন্য একটি এনবিএফসি থেকে ঋণ নেওয়া হয়। এই ভাবেই চলতে থাকে কুমির ছানা দেখানোর খেলা।
এক পুলিশ অফিসারের কথায়, ‘‘শুধু ওই দম্পতি নয়, এর পিছনে একটি গোটা চক্র আছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।’’