তখনও সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ভাস্কর। নিজস্ব চিত্র
বেশ কয়েক দিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন সস্ত্রীক। চিকিৎসাও চলছিল। স্ত্রী ঈশিতা কিছুটা সুস্থ হলেও শেষরক্ষা হল না পাড়া ফুটবলের ‘অলরাউন্ডার’ বলে পরিচিত খড়দহ রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা ভাস্কর ঘোষের (৩৬)। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে পাঁচটি হাসপাতাল ঘোরার পরে শনিবার সকালে বেলঘরিয়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গির নামই লেখা রয়েছে।
ভাস্করের বাড়ি খড়দহ পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। কিছু দিন আগেই এখানকার বাসিন্দা অভ্রদীপ গুপ্তের মৃত্যু হয় ডেঙ্গিতে। অভিযোগ, তার পরেও সচেতনতা আসেনি পুরসভা কিংবা বাসিন্দাদের মধ্যে। জমা জল, পাঁচিল ঘেরা জায়গায় জঙ্গল— এ সব নিয়ে এখনও উদাসীন পুরসভা। ভাস্করের বাড়িতেও গাছপালা ভর্তি। তাঁর বাড়ির পিছনের একটি জমিতে আগাছার জঙ্গল। দিনের বেলাই মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হতে হয় ঘরের মধ্যে বসে।
ভাস্করের পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, গত দশ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। প্রথমে স্থানীয় বলরাম সেবা মন্দির স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাঁর রক্ত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। এর পরে জানা যায়, ভাস্করের রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ অনেকটাই নেমে গিয়েছে। তাঁকে ব্যারাকপুরের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির কোনও উন্নতি না হওয়ায় ভাস্করকে কামারহাটিতে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেও রক্ত পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাঁর এনএস-১ পজিটিভ। সঙ্গে বমি ও পেটখারাপ হওয়ায় অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পেট ফুলে যেতে দেখে ইউএসজি করানো হয়। চিকিৎসকেরা ভাস্করকে আইসিইউ-তে রাখার পরামর্শ দিলেও সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ-তে জায়গা নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে শনিবার ভোর তিনটে নাগাদ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে ঘোরার পরে শেষে ওই ফুটবলারকে পানিহাটির একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও অক্সিজেন দিতে গিয়ে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাঁকে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।
ভাস্করের ভাই দিবাকর বলেন, ‘‘কার্যত দিশাহীন হয়েই এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরেছি। আমারও ডেঙ্গি হয়েছিল। পাড়ার অনেকেরই হয়েছে। কিন্তু দাদার মতো এমন অবস্থা যেন কারও না হয়। চিকিৎসকেরা শুধু দায় এড়ানোর মতো করে অন্য জায়গায় যেতে বললেন বারবার। কেন এমন হবে?’’ পরিবারের লোকেরা এ দিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ভাস্করকে বেলঘরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ভর্তি করানোর আধ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ অস্বাভাবিক রকম কমে গিয়েছিল ভাস্করের। ডেঙ্গিতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
কোনও নির্দিষ্ট ক্লাবে না খেললেও এলাকায় ফুটবলার হিসেবে ভাস্করের বেশ সুনাম ছিল। বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলতেন তিনি। নিজে ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসা করতেন। এলাকায় সকলেরই বেশ প্রিয় ছিলেন। খড়দহ পুরসভার চেয়ারম্যান তাপস পাল বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কিন্তু পুরসভার তরফ থেকে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি এলাকা পরিষ্কার রাখার। বাসিন্দাদেরও সচেতন হতে হবে।’’