আগুন থেকে বেঁচে গিয়েছে এই শিশু। মঙ্গলবার। ছবি: শৌভিক দে।
রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ আচমকাই প্রতিবেশীদের কানে এসেছিল ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার। দরজা খুলে বেরিয়ে তাঁরা দেখেন, সামনের বাড়ির উঠোনে জ্বলন্ত অবস্থায় ছোটাছুটি করছেন চার জন। উঠোন লাগোয়া একটি আবাসনের বাসিন্দারাও ঘরের জানলা খুলে সেই দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। চার জনকে বাঁচাতে তাঁরা বেশ কিছুক্ষণ একটানা জল এবং অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র থেকে ফোম স্প্রে করে যান। শেষ পর্যন্ত আগুন নিভলেও, গুরুতর জখম অবস্থায় সকলকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বাগুইআটি থানার তেঘরিয়ার মণ্ডলপাড়ায়। আহতেরা হলেন গৃহকর্তা অরুণকুমার নস্কর (৬০), তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমা নস্কর (৫৬), অরুণবাবুর ছেলে অমিত নস্কর (৩০) ও পুত্রবধূ মীনা নস্কর (৩০)। বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছে অমিত ও মীনার চার মাসের শিশুকন্যা।
প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের দাবি, গ্যাসের ওভেন থেকে আগুন লাগে। তবে বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা-প্রধান সন্তোষ পাণ্ডে জানিয়েছেন, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই আগুনের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তিনি জানান, এই ঘটনায় কেউ কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেননি। যদিও ঘটনার পিছনে প্রোমোটিংয়ের গন্ধ পাচ্ছেন প্রতিবেশীরা।
কী ভাবে ঘটল দুর্ঘটনা? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মণ্ডলপাড়ার এক তস্য গলির ভিতরে নস্কর পরিবারের দু’কামরার বাড়ি। ভিআইপি রোডে তাঁদের একটি চায়ের দোকান রয়েছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সোমবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ অরুণবাবু ও তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমাদেবীর চিৎকার শুনে তাঁরা ছুটে এসে দেখেন, দু’জনেই দাউ দাউ করে জ্বলছেন। ইতিমধ্যে পূর্ণিমাদেবীকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে অগ্নিদগ্ধ হন পুত্রবধূ মীনা। মীনাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন অরুণবাবুর ছেলে অমিতও। আহতদের মধ্যে পূর্ণিমাদেবীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ জানায়, কী করে আগুন লেগেছিল জানতে ওই রাতেই অমিতকে জেরা করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। তাই কিছু বলতে পারেননি। যদিও প্রতিবেশীদের একাংশের দাবি, আগুন লাগার কারণ স্পষ্ট জানা না গেলেও এই বাড়ি নিয়ে অমিতের সঙ্গে অশান্তি চলছিল তাঁর বাবা-মায়ের। অমিত চাইছিলেন বাড়িটি প্রোমোটারকে দিয়ে দিতে। বাদ সাধছিলেন অরুণবাবু এবং অমিতের দিদি।